ফ্লাউড কমিশন
ফ্লাউড কমিশন ১৯৩৮ সালে বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ভূমি রাজস্ব কমিশন। নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি (১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত) এবং পরবর্তী সময়ে কৃষক প্রজা পার্টির (১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত) নেতা এ.কে ফজলুল হক জমিদারি প্রথা বাতিল করতে এবং কৃষকদের ভূমিস্বত্ব পুনরুদ্ধারে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলেন। ১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে এটাই ছিল কৃষক প্রজা পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান প্রতিশ্রুতি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয় দলই কৃষকদের প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল ছিল। এ সহানুভূতির মূলে নিহিত ছিল রাজনৈতিক কারণ। কৃষকরা ভোটারদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে তাদের ভোটই ছিল ফলাফল নির্ধারক।
নির্বাচনের পর এ.কে ফজলুল হক মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস ব্যতিরেকে অন্যান্য সংসদীয় দলের সমর্থন নিয়ে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা বিলুপ্ত করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তাঁর ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়। এ উদ্দেশ্যে স্যার ফ্রান্সিস ফ্লাউড-এর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের বিচার্য ছিল ভূমি রাজস্ব প্রশাসন সংক্রান্ত সমস্যাবলির সমাধান বিশেষত জমিদারি প্রথা বাতিল সংক্রান্ত বিষয় বিবেচনা করা। ১৯৪০ সালের ২ মার্চ কমিশনের সুপারিশমালা পেশ করা হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা বাতিল এবং ভূমি নিয়ন্ত্রণে সকল মধ্যবর্তী স্বত্ব বিলোপ সাধন উক্ত সুপারিশমালার অন্তর্ভুক্ত ছিল। লক্ষ করা যায় যে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের সময় থেকে ভূমি নিয়ন্ত্রণে যে পরিবর্তন ঘটে নতুন পরিস্থিতিতে তা অনুপযোগী ও ক্ষতিকর ব্যবস্থায় পরিণত হয়। এ সুপারিশগুলি ১৯৪৪ সালের প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির জোরালো সমর্থন লাভ করে। কিন্তু ফ্লাউড কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার খুব বেশিদূর অগ্রসর হতে পারে নি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা এবং ভারত বিভাগের রাজনীতি প্রভৃতি ছিল এর প্রধান অন্তরায়। এসব সীমাবদ্ধতার কারণে ফজলুল হক, খাজা নাজিমউদ্দীন ও সোহরাওয়ার্দী সরকারের আমলে ফ্লাউড কমিশন রিপোর্টের বাস্তবায়ন স্থগিত থাকে, যদিও সব কটি সরকারই জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী ছিল। পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর আওতায় ১৯৫১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটে। [সিরাজুল ইসলাম]