ফুলবাড়ীয়া উপজেলা
ফুলবাড়ীয়া উপজেলা (ময়মনসিংহ জেলা) আয়তন: ৩৯৮.৭০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৩´ থেকে ২৪°৪৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০৮´ থেকে ৯০°২৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মুক্তাগাছা উপজেলা, দক্ষিণে ভালুকা উপজেলা, পূর্বে ত্রিশাল এবং ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, পশ্চিমে ঘাটাইল, মধুপুর এবং মুক্তাগাছা উপজেলা।
জনসংখ্যা ৪৪৮৪৬৭; পুরুষ ২২২৯০১, মহিলা ২২৫৫৬৬। মুসলিম ৪৩৬১২৩, হিন্দু ১১১৪৩, বৌদ্ধ ৬, খ্রিস্টান ১০১৫ এবং অন্যান্য ১৮০।
জলাশয় প্রধান নদী: ক্ষীরু, নাগেশ্বরী, বানার, বাজনা, সিরখালী, বাজুয়া, মিয়াবুয়া, কাতামদারী, দেওরাই।
প্রশাসন ফুলবাড়ীয়া থানা গঠিত হয় ১৮৬৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১৩ | ১০৪ | ১১৬ | ৫০৫৮৪ | ৩৯৭৮৮৩ | ১১২৫ | ৪৪.০ (২০০১) | ৪১.৪ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
- | ৯ | ১১ | ৩১০৫৮ | - | ৫৪.৩ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৪২.৪০ (২০০১) | ৩ | ১৯৫২৬ | ১৪৭৬ (২০০১) | ৪৩.৪ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আছিম পাটুলী ১১ | ৮৬৯৮ | ১৮৪০৯ | ১৭৭৪৩ | ৪৪.৫ | ||||
এনায়েতপুর ৪১ | ৯৭৮৫ | ১৪০৪৩ | ১৪০৮২ | ৪০.৭ | ||||
কালাদহ ৫৩ | ৬৫৩৯ | ১২৭৪০ | ১২৯৫৩ | ৪৫.০ | ||||
কুশমাইল ৫৯ | ৫৯৪৯ | ১৮০১৯ | ১৯০৫৬ | ৩৮.০ | ||||
দেওখোলা ৩৫ | ৩৩৬০ | ১৩৬৫৫ | ১৩১১৪ | ৪৯.৯ | ||||
নাওগাঁও ৭৭ | ৭০৩২ | ১২৯১০ | ১৩০৬৯ | ৩৭.০ | ||||
পুটিজানা ৮৩ | ৭১৯৮ | ১৮৪৯৯ | ১৯৪৫৭ | ৩২.২ | ||||
ফুলবাড়ীয়া ৪৭ | ৭১৫৬ | ১৮২১৭ | ১৮৯৩১ | ৪১.৯ | ||||
বাক্তা ১৭ | ৬৯৮৫ | ১৬৭৬৭ | ১৭২৭৫ | ৩৯.৯ | ||||
বালিয়ান ২৩ | ৬৫১৯ | ১৮৮০৯ | ১৮৩৫৭ | ৪৯.৬ | ||||
ভবানীপুর ২৯ | ৭৩৬৩ | ১৩৪০১ | ১৩৩৫৩ | ৩৮.৮ | ||||
রাঙ্গামাটিয়া ৯৪ | ৮৬৬৫ | ১১০৭৫ | ১১৫০৫ | ৩৯.৮ | ||||
রাধাকানাই ৮৯ | ৯৩৮৭ | ২০৭০৪ | ২১২৬৬ | ৪২.১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আনই রাজার দিঘি, পুটিজানা ইউনিয়নে ‘বিবির ঘর’।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পর ফুলবাড়ীয়ার ভবানীপুর ইউনিয়নের কান্দানিয়া-লাঙ্গল শিমুল বাজারে মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। লক্ষ্মীপুরে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর তুমুল লড়াই সংঘটিত হয়। এতে উভয় পক্ষের ৭০ জন নিহত হয়। ৮ ডিসেম্বর ফুলবাড়ীয়া শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় ১টি গণকবর এবং ২টি বধ্যভূমি রয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন ফুলবাড়ীয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৫০০, মন্দির ১৯, গির্জা ১, তীর্থস্থান ১।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪২.৩%; পুরুষ ৪৩.৬%, মহিলা ৪১.১%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬৬, মাদ্রাসা ৫০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কেশরগঞ্জ মহাবিদ্যালয় (১৯৯৮), ফুলবাড়ীয়া ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়, ফুলবাড়ীয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, আছিম উচ্চ বিদ্যালয়, কান্দানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, পলাশীহাটা উচ্চ বিদ্যালয়, হরেকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদনগর উচ্চ বিদ্যালয়, রাধাকানাই উচ্চ বিদ্যালয়, ফুলবাড়ীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আছিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্দানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১৩, যাত্রাপার্টি ১, মহিলা সংগঠন ৫, সিনেমা হল ২।
বিশেষ আকর্ষণ ফুলবাড়ীয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বিশাল বনাঞ্চল, বড় বিল, আনই রাজার দীঘি (আনইগাং), নাওগাঁও ইউনিয়নের সন্তোষপুর রাবার বাগান ও বিস্তৃত বনভূমি।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৮.২২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.০৪%, শিল্প ০.৫৫%, ব্যবসা ৯.১৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৬১%, চাকরি ৪%, নির্মাণ ০.৮৪%, ধর্মীয় সেবা ০.২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১২% এবং অন্যান্য ৯.২৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.৩২%, ভূমিহীন ৩৩.৬৮%। গ্রামে ৬৭.৬৯% এবং শহরে ৫৮.৯২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, তুলা, হলুদ, আখ, আলু, কলাই, সরিষা।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিসি, অড়হর, তিল।
প্রধান ফল-ফলাদি লিচু, কলা, আনারস, কাঁঠাল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৭৩, হাঁস-মুরগি ২৫, হ্যাচারি ৮।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৫১ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল ৩, বরফকল ৪, ছাপাখানা ২, বিস্কুট কারখানা ৬, ওয়েল্ডিং কারখানা ৪০।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৪৫, লৌহশিল্প ৮৫, মৃৎশিল্প ২০৪, তাঁতশিল্প ৪, রেশমশিল্প ৩, কাঠের কাজ ১৭৮, বাঁশের কাজ ১৬৫, সেলাই কাজ ২১৮।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৫, মেলা ৩। দত্তখোলা হাট, দশমাইল হাট, আছিমপুর হাট, কেশরগঞ্জ হাট, কালাদহ হাট, রাধানগর হাট, নাওগাঁও হাট এবং মহিষপুর মেলা ও উত্তরবাহিনী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, হলুদ, আখের গুড়, কাঁঠাল, আনারস।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৩৩.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে ।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.২%, ট্যাপ ০.৬% এবং অন্যান্য ৭.২%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৬.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৩.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২০.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৯, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৮, ক্লিনিক ১০৪, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৩, ইউনিয়ন হাসপাতাল ৩।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭২ সালের ২৭ এপ্রিল ফুলবাড়ীয়ার বাক্তা, আছিম পাটুলী, নাওগাঁও এবং পুটিজানা ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ে ৭ জন লোক নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল।
এনজিও ব্র্যাক। [আজহারুল ইসলাম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফুলবাড়ীয়া উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।