ফতেহাবাদ

ফতেহাবাদ  আধুনিক ফরিদপুর শহরের সঙ্গে অভিন্ন এবং গোয়ালন্দ স্টিমার ঘাট থেকে ২০ মাইল দূরে পদ্মার একটি পুরাতন শাখার (মরাপদ্মা নামে পরিচিত) তীরে অবস্থিত। সুলতান জালালুদ্দীন মুহম্মদ শাহ এর (১৪১৫-১৪৩৩) শাসনামলে টাকশাল শহর হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি গড়ে ওঠে। রুকুনুদ্দীন বারবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪) ও তাঁর পুত্র শামসুদ্দীন ইউসুফ শাহ এর (১৪৭৪-১৪৮১) সময় ছাড়া বাংলার স্বাধীন সুলতানদের (১৫৩৮ পর্যন্ত) আমলে টাকশাল হিসেবে শহরটির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ ছিল।  আইন-ই-আকবরীতে ‘হাউলি মহল ফতেহাবাদ’ বলে এর উল্লেখ রয়েছে। ষোল শতকে অংকিত ডি ব্যারোস (De Barros) ও ব্লেভ-এর মানচিত্রেও এ শহর ‘ফতিয়াবাস’ (Fatiabas) হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। ফন ডেন ব্রুক ভুলবশত এ শহরকে ’ ফাথুর’ (Fathur) বলে উল্লেখ করেন। দৌলত উজির বাহরাম খানের লাইলী-মজনু (১৫৬০-১৭৭৫) কাব্যে ফতেহাবাদের উল্লেখ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে আজমীরের মঈনুদ্দীন চিশতির (১১৪২-১২৩৬) শিষ্য এবং বিখ্যাত দরবেশ শাহ ফরিদউদ্দীন মাসুদের নামে ফতেহাবাদের নতুন নাম দেওয়া হয় ফরিদপুর। তিনি এ শহরে তাঁর খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সম্ভবত শহরটি রণকৌশলগত বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার বিরুদ্ধে অভিযানের সময় এ শহর সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহূত হতো। উচ্চপদস্থ মুগল সামরিক কর্মকর্তাদের বাসস্থানের নিদর্শন এ সাক্ষ্যই দেয় যে, সকল প্রকার নাগরিক সুবিধাসহ একটি উন্নত শহর হিসেবে এটি গড়ে উঠেছিল। মুগল সেনাপতি মুরাদ খান (১৫৭৪) ফতেহাবাদে বাস করতেন এবং এখানেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। আধুনিক ফরিদপুর শহর থেকে প্রায় ১৬ কিমি দূরে, খানখান্নাপুর নামে যে গ্রাম ও রেলস্টেশন রয়েছে সম্ভবত সেখানেই তাঁর বাসস্থান ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীর এর (১৬০৫-১৬২৭) সময়ের বিদ্রোহী  জমিদার মুকুন্দ ও তাঁর পুত্র সত্রজিৎ-এর শক্ত ঘাঁটি ছিল এ শহরেই।  [মোঃ আক্তারুজ্জামান]