ফজলে রাবিব, খানবাহাদুর খোন্দকার
ফজলে রাবিব, খানবাহাদুর খোন্দকার (১৮৪৮-১৯১৭) চিন্তাশীল লেখক ও তৎকালীন মুসলমান সমাজের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সালারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খোন্দকার ওবায়দুল আকবর ছিলেন মুর্শিদাবাদ নিজামত সরকারের মীর মুনশি এবং তিনি নিজে ছিলেন সরকারের একজন দীউয়ান। তাঁদের পূর্বপুরুষ খোরাসান থেকে এসে প্রথমে দিল্লি এবং পরে মুর্শিদাবাদে বসতি স্থাপন করেন।
ফজলে রাবিব ফারসি ভাষায় শিক্ষালাভ করে নিজামতের অধীন চাকরিতে প্রবেশ করেন। মেধা ও কর্মদক্ষতা গুণে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে নবাবের সুদৃষ্টিতে পড়েন। ১৮৬৯ সালে তিনি লন্ডন যান এবং চার বছরের অধিক কাল সেখানে থেকে ইংরেজি ভাষা রপ্ত করেন। তিনি দীউয়ান ছাড়াও বেগমজাদি সামশ-ই-জাহান ফেরদৌস মহলের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ফজলে রাবিব কলকাতার ‘মহামেডান লিটারেরি সোসাইটি’র কার্যনির্বাহি কমিটি (১৯০০) এবং বর্ধমান মহারাজার নেতৃত্বে গঠিত ‘ইম্পিরিয়াল লীগে’র সদস্য (১৯০৯) ছিলেন। তিনি সমকালীন সমাজ, রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে একজন সচেতন লেখক হিসেবে প্রভূত সম্মানের অধিকারী হন।
ফজলে রাবিব মোট তিনখানি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন, যথা: কেতাবে তসদিকুন লেহাদ, হকিকতে মুসলমানানে বাঙ্গালাহ্ (১৮৯১) ও তারিখে হিন্দুস্তানি। প্রথম গ্রন্থটি মুর্শিদাবাদের ফতেপুর পরগনার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের পারিবারিক ইতিহাস, দ্বিতীয়খানি সমকালীন বাংলার মুসলিম সমাজের বিবরণ এবং তৃতীয়খানি ভারতের ইতিহাসবিষয়ক গ্রন্থ। দ্বিতীয় গ্রন্থই তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। এতে তাঁর কেবল ইতিহাসচেতনা ও সমাজবোধই নয়, একই সঙ্গে স্বজাতিপ্রেম ও দেশপ্রেমেরও প্রকাশ ঘটেছে। জীবনযুদ্ধে পিছিয়ে পড়া মুসলমান সমাজের তথ্যভিত্তিক ইতিহাস তিনি তাঁর রচনায় তুলে ধরেন।
স্যার উইলিয়ম উইলসন হান্টার দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস্ (১৮৭৯) গ্রন্থে বাংলার মুসলমানদের ধর্মান্তরিত নিম্নবর্ণের হিন্দুদের বংশোদ্ভূত বললে তার প্রতিবাদ জানিয়ে ফজলে রাবিব বলেন যে, বহিরাগত অভিজাত শ্রেণি দ্বারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজ গঠিত। এ ব্যাপারে ইউরোপীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য তিনি নিজেই দি অরিজিন অব দি মুসলমানস্ অব বেঙ্গল (১৮৯৫) নামে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেন। পান্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘খানবাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করে। [ওয়াকিল আহমদ]