প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ

প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ  প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, তাদের পদোন্নতি, শৃঙ্খলাজনিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এবং সরকারের ক্রয়-সংক্রান্ত বিষয়সহ সরকার পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব অর্পণের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ১৯৭৫ সালের কার্যবিধি (১৯৯৬ সালে সংশোধিত) এবং ১৯৭৬ সালের সচিবালয় নির্দেশাবলিতে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব অর্পণের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমান কার্যবিধিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, প্রশাসনের শীর্ষ নির্বাহীদের চাকুরি সংক্রান্ত বিষয়াদি মন্ত্রণালয়/বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। তবে এ নিয়ন্ত্রক ভূমিকাটি সরকারি বিধিবদ্ধ সংস্থার (কর্পোরেশন) ক্ষেত্রে সেখানে কর্মরত সদস্য/পরিচালক পদমর্যাদার নিচে নন এমন কর্মকর্তা পর্যন্ত সীমিত থাকবে। অন্যদিকে  অধিদপ্তর বা অধীনস্থ দপ্তরে এ ক্ষমতা প্রয়োগের আওতা পঞ্চম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তা পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্পিত এ প্রশাসনিক ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নামে নির্দিষ্ট করে দেওয়া বিষয়সূচি অনুসরণেই প্রয়োগ করা হয়।

নিম্নতর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের চাকুরি সংক্রান্ত বিষয়াদি সংশ্লিষ্ট সরকারি বিধিবদ্ধ সংস্থা, অধিদপ্তর বা অধীনস্থ দপ্তরসমূহ তাদের প্রয়োজন মাফিক নিজেদের প্রশাসনিক ক্ষমতাবলেই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তবে বিধিবদ্ধ সংস্থার সদস্য/পরিচালক পদে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিতে হয়। অনুরূপভাবে সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃক সুপারিশকৃত ক্যাডার সার্ভিস কর্মকর্তাদের প্রাথমিক নিয়োগদানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। আর এ অনুমোদন লাভের পরই কেবল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ নির্বাচিত প্রার্থীদের বরাবরে নিয়োগপত্র প্রেরণ করে।

বিধিবদ্ধ সংস্থা এবং ক্যাডার সার্ভিসে কর্মরত ১ম, ২য় ও ৩য় গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন বাছাই বোর্ড তাদের মতামত ও সুপারিশ পেশ করে। পেশকৃত সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাভের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশ জারি করে। উল্লিখিত পদমর্যাদার নিম্নতর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের নিজস্ব বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। এ কমিটির প্রধান থাকেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব। কমিটিতে অর্থ ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও সদস্য থাকেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের প্রধানরাও বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। কমিটির সুপারিশ কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন। তবে উপসচিব পদে পদোন্নতি দানের জন্য সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে আলাদা একটি কমিটি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে এ কমিটি উপসচিব পদে পদোন্নতি-সংক্রান্ত চূড়ান্ত নির্দেশ জারি করে থাকে।

রাষ্ট্রপতিই নিয়োগদানের কর্তৃপক্ষ। তার দায়িত্বভার লাঘব করার লক্ষ্যে শৃঙ্খলাজনিত শাস্তিমূলক প্রশাসনিক কর্তৃত্ব অন্যদের ওপর অর্পণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনটি জারি হয় ১৯৯৮ সালের ১৯ মে। সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর ২ নং বিধিতে কর্তৃত্ব অর্পণ সংক্রান্ত ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। অর্পিত এ ক্ষমতাবলে কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব কিংবা ভারপ্রাপ্ত সচিব নির্দিষ্ট একটি বেতনক্রমের নিম্নতর পদের কর্মকর্তাদের ওপর কোন কোন ধরনের শাস্তি আরোপ করতে পারেন। সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ ১৯৭৯ তে সচিব বা ভারপ্রাপ্ত সচিবদের ওপর অনুরূপ কর্তৃত্ব অর্পণের বিধান রাখা হয়েছে।

সচিবালয় কর্মপদ্ধতিতে প্রশাসনিক কর্তৃত্ব অর্পণের ব্যবস্থা আছে। সচিবালয় নির্দেশনায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, একজন অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্মসচিবের কর্মপরিধিও সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত হতে হবে। তিনি তার ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করবেন এবং নথিসমূহ সরাসরি মন্ত্রীর নিকট প্রেরণ করবেন। তবে মন্ত্রীর কাছ থেকে ফেরত আসার সময় নথিসমূহ মন্ত্রণালয়ের সচিবের হাত ঘুরে আসবে, যাতে সচিবও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মন্ত্রীর নেয়া সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন। অবশ্য মন্ত্রীর নিকট প্রেরিত হবার পূর্বে যেকোন নথি চেয়ে পাঠানোর এখতিয়ার সচিবের রয়েছে। এমনকি নথির বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য অতিরিক্ত সচিব বা যুগ্মসচিবকে তিনি ডেকেও পাঠাতে পারেন।

নীতি সংক্রান্ত নয় এমন অথবা স্থায়ী আদেশবলে তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে এমন যেকোন নথির কাজই একজন উপসচিব নিষ্পন্ন করার ক্ষমতা রাখেন। অনুরূপভাবে একজন সহকারি সচিবও প্রতিষ্ঠিত নজির বলে অথবা স্থায়ী আদেশ কিংবা অন্য কোন বিধান বলে তার ওপর ন্যস্ত হয়েছে এমন সব বিষয় নিষ্পত্তির ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তবে নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমান বিষয়ে তার নিজস্ব এখতিয়ার নিয়ে কোন সন্দেহ দেখা দিলে তিনি তার অব্যবহিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাইতে পারেন। তবে দায়িত্ব পালন নয় বরং দায়িত্ব পালন না করার ক্ষেত্রেই এ জাতীয় নির্দেশনার প্রয়োজন বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়। কারণ কর্মকর্তাদের স্বাভাবিক প্রবণতাই হচ্ছে নথিকে উপরের দিকে ঠেলে দেওয়া।  [এ.এম.এম শওকত আলী]