পুঠিয়া উপজেলা

পুঠিয়া উপজেলা (রাজশাহী জেলা)  আয়তন: ১৯২.৬৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২০´ থেকে ২৪°৩১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪২´ থেকে ৮৮°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে দুর্গাপুর (রাজশাহী) ও বাগমারা উপজেলা, দক্ষিণে চারঘাট ও বাগাতিপাড়া উপজেলা, পূর্বে নাটোর সদর উপজেলা, পশ্চিমে দুর্গাপুর ও পবা উপজেলা।

জনসংখ্যা ২০৭৪৯০; পুরুষ ১০৫০৭১, মহিলা ১০২৪১৯। মুসলিম ১৯৪৯০৪, হিন্দু ১০৯২৬, খ্রিস্টান ৯৯৮ এবং অন্যান্য ৬৬২। এ উপজেলায় সাঁওতাল, ওরাওঁ এবং মাহালী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: হোজা ও বারনাই।

প্রশাসন পুঠিয়া থানা গঠিত হয় ১২ মার্চ ১৮৬৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২৩ ১৮৩ ২৫৭৬১ ১৮১৭২৯ ১০৭৭ ৫৫.৩৭ (২০০১) ৪৮.৪
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ১৬ ২০৬১০ - ৫৯.২
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.৮৩ (২০০১) ৫১৫১ ১৬৫৭ (২০০১) ৫১.২
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
জিউপাড়া ৫৪ ৮২৬৭ ১৪৭৮০ ১৪৬৩৪ ৫০.২
পুঠিয়া ৬৭ ৩৮৮৫ ৭৫৫৯ ৭২২৫ ৫০.৭
বানেশ্বর ১৩ ৬৩৬১ ১৮০৪৫ ১৭৪০৭ ৫৩.৬
বেলপুকুরিয়া ২৭ ৬৯৫৮ ১৮৮৮১ ১৭৯৫১ ৪৮.৮
ভালুকগাছি ৪০ ৮৩৭৮ ১৬৮৪৬ ১৬৫৪২ ৪৬.৩
শিলমাড়িয়া ৮১ ১০৪১৪ ১৮৫৭০ ১৮৪৪০ ৪৩.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সৈয়দ করম আলী শাহের (রঃ) বিরাট মসজিদ ও মাযার, পুঠিয়ার রাজবাড়ি, রাজবাড়িতে ঝুলন মন্দির, আহ্নিক মন্দির (ছোট আহ্নিক মন্দির ও বড় আহ্নিক মন্দির, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে বা ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে নির্মিত), চৌচালা (পিরামিডাকৃতির) মন্দির (ছোট গোবিন্দমন্দির ও ছোট শিবমন্দির, অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে বা ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে নির্মিত), রত্নমন্দির (একরত্ন বা প্রাণগোপাল মন্দির ঊনবিংশ শতকে নির্মিত, পঞ্চরত্ন মন্দির নির্মিত ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এবং পঞ্চরত্ন শিবমন্দির প্রতিষ্ঠিত ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে), সমতল ছাদবিশিষ্ট দালান মন্দির (গোপাল মন্দির ও তারাপুর মন্দির), অষ্টকোণা মন্দির বা রথ মন্দির, দোচালা বা একবাংলা মন্দির (ঊনবিংশ শতকে নির্মিত), দোলমন্দির বা দোলমঞ্চ (১৮৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত) এবং শিবসাগর ও গোবিন্দসাগর নামে দু’টি বড় দীঘি।

ঐতিহাসিক ঘটনা ষোড়শ শতাব্দীতে লস্কর খান নামক একজন আফগান জায়গীরদার মুগল সেনাপতি মানসিংহের কাছে পরাজিত হলে বৎসাচার্য (ব্রাহ্মণ) পুত্র পীতাম্বর বন্দোবস্ত লাভ করেন। পীতাম্বরের মুত্যুর পর ভ্রাতা নীলাম্বর রাজা উপাধি লাভ করলে তাঁদের বংশ রাজবংশ নামে খ্যাত হয়। পুঠিয়ার এই রাজবংশই রাজশাহী জমিদারির প্রাচীন রাজবংশ।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে স্থানীয় প্রতিরোধ বাহিনী রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ ও প্রতিআক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে।

বিস্তারিত দেখুন পুঠিয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৯৭, মন্দির ৩০, গির্জা ১১, মাযার ১। সুপরিচিত: বিড়ালদহ মসজিদ, হযরত করম আলী শাহের (রঃ) মাযার (বিড়ালদহ)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৬%; পুরুষ ৫২.২%, মহিলা ৪৬.৯%। কলেজ ১৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯১ ও মাদ্রাসা ১৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাণেশ্বর কলেজ (১৯৬৪), পি.এন কারিগরি উচ্চবিদ্যালয় (১৮৬৫), ধোকড়াকুল উচ্চবিদ্যালয় (১৯৪৯), পঙ্গু শিশু নিকেতন সমন্বিত অবৈতনিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৯০) ও বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী দারুছ ছুন্নত ফাজিল মাদ্রাসা (১৯৬৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, ক্লাব ৪১, সিনেমা হল ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৭.১১%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৮%, শিল্প ০.৮০%, ব্যবসা ১৩.২৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.২৪%, চাকরি ৪.৮০%, নির্মাণ ০.৭৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৫% এবং অন্যান্য ৫.৬৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৩০%, ভূমিহীন ৪১.৭%। গ্রামে ৫৯.২৬% এবং শহরে ৪৪.৯৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, ভূট্টা, আলু, আখ, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, সরিষা, তিল, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  মিষ্টি আলু, কাউন, তিসি, রাই, আউশ ধান।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, কুল, পেয়ারা, খেজুর, নারিকেল, তাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৪, হাঁস-মুরগি ১৮, হ্যাচারি ২।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২১৫ কিমি, আধা- পাকারাস্তা ১৩, কাঁচারাস্তা ৫২০ কিমি; রেলপথ ৮ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ধানকল ১৬, বরফকল ২, করাতকল ৪, ছাপাখানা ২, ওয়েল্ডিং কারখানা ৩০, ব্যাটারি তৈরি কারখানা ১০।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প ৪৫, মৃৎশিল্প ১০, বাঁশের কাজ ৩০০।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১০। মোল্লাপাড়া বাজার, ঝলমলিয়া বাজার, সাধনপুর বাজার, বানেশ্বর হাট এবং রথেরমেলা (পুঠিয়া রাজবাড়ি) উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, গম, গুড়, আলু, পিঁয়াজ, রসুন, আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।

বিদ্যুতের ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৯.৩ % পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.০%, ট্যাপ ৩.৮% এবং অন্যান্য ৩.২%। এ উপজেলার ১৭৩৭২ টি নলকূপের মধ্যে ৫৮১ টি নলকূপের পানি আর্সেনিকযুক্ত।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬২.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩০.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৭.৭% পরিবারের কোন ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, ক্লিনিক ৫।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, কারিতাস, কেয়ার, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [এ.কে.এম কায়সারুজ্জামান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পুঠিয়া উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।