পিঁপড়া
পিঁপড়া (Ant) Hymenoptera বর্গের Formicidae গোত্রের সদস্যদের জন্য ব্যবহূত সাধারণ নাম। আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পিঁপড়াদের প্রায় ৮,০০০ প্রজাতির বর্ণনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২৫০ প্রজাতির কথা জানা যায়। তবে এ দল নিয়ে তেমন উল্লেখযোগ্য গবেষণা এখনও হয় নি। আমাদের দেশের বহু প্রজাতির পিঁপড়ার মধ্যে অধিক পরিচিত জাতগুলিকে অনেক সময় সাধারণভাবে লাল পিঁপড়া, কালো পিঁপড়া, ডেঁয়ো পিঁপড়া, বিষ পিঁপড়া, ক্ষুদে পিঁপড়া ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা হয়। সব পিঁপড়াই মৌমাছি, বোলতা এবং উইপোকাদের মতো সমাজবদ্ধ জীবন কাটায়। পিঁপড়ার একটি সামাজিক দলে বা কলোনিতে থাকতে পারে কয়েক ডজন থেকে বহু হাজার সদস্য। এদের প্রত্যেকটি কলোনিতে তিন জাতের সদস্যের উপস্থিতি দেখা যায়- রানী, শ্রমিক এবং পুরুষ। সাধারণত এক বা একাধিক রানী, বহু স্ত্রী শ্রমিক এবং কতিপয় পুরুষ সদস্য থাকাটাই নিয়ম। তবে কলোনিভেদে সংখ্যার তারতম্য হয়। প্রায় সব শ্রমিকই বন্ধ্যা স্ত্রী।

সাধারণত বসন্তকালে একটি কলোনিতে কতিপয় পুরুষ এবং রানী পিঁপড়া জন্মায়। এরা উভয়েই ডানাবিশিষ্ট এবং একসময় বাসার বাইরে এসে যৌন মিলনের জন্য ঝাঁক বেঁধে উড়াল দেয়। মিলনের পর নতুন রানী ডিম পাড়ার মাধ্যমে পৃথক একটি কলোনির সূচনা করে এবং সারা জীবন এ কলোনিতেই বাস করে। নতুন রানীর প্রথম প্রজন্মের শাবকের প্রায় সবাই হয় স্ত্রী শ্রমিক। বাসা তৈরি, খাদ্য সংগ্রহ, রানীর যত্ন ও তদারক এবং নতুন শাবকদের লালন- পালনের দায়িত্ব বর্তায় এদের ওপর। পুরুষ পিঁপড়াদের একমাত্র কাজ নতুন রানীর সঙ্গে যৌন মিলন। মিলনের অল্প দিন পরেই এদের মৃত্যু ঘটে। বড় আকারের শ্রমিকেরা সেনা পিঁপড়া নামে পরিচিত। এদের সাধারণত বড় মাথা এবং বড় ম্যান্ডিবল থাকে।শত্রুর আক্রমণ বা ক্ষতি থেকে কলোনি রক্ষার দায়িত্ব এদের। কোন কোন পিঁপড়া মাটির নিচে বাসা বানায়; আবার গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকার অনেক প্রজাতি গাছে বাসা তৈরি করে।কেউ কেউ পাথর বা শিলার তলায়, গাছের ফোঁকরে, গুড়ির নিচে অথবা এ ধরনের স্থান বেছে নেয় বাসা তৈরির উদ্দেশ্যে।
পিঁপড়াকে সর্বভুক মনে করা হয়। তবে তার অর্থ এই নয় যে, সব জাতের পিঁপড়া সব কিছুই খায়। চিনিযুক্ত খাবার, যেমন ফল-ফুলের রস, পচনশীল মৃত প্রাণী, উদ্ভিদভোজী কীটপতঙ্গের দেহ নিঃসৃত মিষ্টি রস (honey dew) ইত্যাদি এদের পছন্দের খাবার।
পিঁপড়াদের মধ্যে যোগাযোগ হয় নানাভাবে। যখনই দুটি পিঁপড়ার সাক্ষাৎ ঘটে, তারা নিজেদের অ্যানটিনার সাহায্যে একে অন্যের ঘ্রাণ নেয় অথবা ফেরোমোন (pheromone) নামে এক ধরনের রাসায়নিক সংকেত ব্যবহার করে। তবে স্পর্শন ও রাসায়নিক উভয় ধরনের উদ্দীপকই ব্যবহার করে বলে অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা। পিঁপড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; নানা ধরনের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে তাদের সংখ্যা দমিত রাখে। পিঁপড়া ব্যাঙ, টিকটিকি এবং পাখিসহ অনেক ধরনের প্রাণীর খাদ্য। এরা কৃষকদের উপকারেও আসতে পারে আবার ক্ষতির কারণও হতে পারে। বাংলাদেশে সচরাচর দৃষ্ট পিঁপড়া প্রজাতির অধিকাংশই Aenictus, Anochetus, Camptonotus, Cardiocondyl, Diacamma, Dorylus, Monomorium, Odontomachus, Phidole, এবং Tetramorium গণের সদস্য। [বদরুল আমীন ভূঁইয়া]