কীটপতঙ্গ

কীটপতঙ্গ (Insecta)  Insecta শ্রেণির সদস্যদের সাধারণ নাম। এ পর্যন্ত জানা প্রাণীর প্রজাতি সংখ্যার শতকরা প্রায় ৮৫ ভাগ কীটপতঙ্গ। এখন পর্যন্ত এদের প্রায় ১০ লক্ষ প্রজাতির বর্ণনা হয়েছে।

কীটপতঙ্গের দেহ তিনটি অংশে বিভক্ত- মাথা, বক্ষদেশ ও উদর। কাইটিন দ্বারা গঠিত শক্ত বহিঃকঙ্কালে দেহ আবৃত। বহিঃকঙ্কাল দেহকে সুরক্ষা করে; এটি বিভিন্ন পেশীর জন্য সংযোগ বিন্দু হিসেবেও কাজ করে। বৃদ্ধির সময় নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর বহিঃকঙ্কালের খোলস বদলায়।

কীটপতঙ্গের বিশেষত্ব হচ্ছে এদের মাত্র তিন জোড়া বক্ষদেশীয় পা এবং অধিকাংশ কীটপতঙ্গের দুই জোড়া বক্ষদেশীয় ডানা রয়েছে। কীটপতঙ্গ ব্যাপক বৈসাদৃশ্যতাপূর্ণ বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। আকারের দিক থেকে কোনো কোনোটি এক মিলিমিটারের কম, আবার বড়দের দৈর্ঘ্য বা পাখার বিস্তৃতি কয়েক সেমি পর্যন্ত হতে পারে। এদের জীবনকাল কয়েক ঘণ্টা থেকে বহু বছর পর্যন্ত হতে পারে; এরা বিচ্ছিন্ন বা সমাজবদ্ধভাবে থাকতে পারে। কীটপতঙ্গ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণী ও জৈব পদার্থ খেয়ে জীবন ধারণ করে; খাদ্য উৎসের সঙ্গে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক মিথোজীবিতা থেকে পরজীবিতা বা শিকার পর্যন্ত হতে পারে। কীটপতঙ্গের রয়েছে সুগঠিত পরিপাক, রক্তসংবহন, শ্বসন, স্নায়ু ও প্রজননতন্ত্র। পরিপাককৃত খাদ্য শোষিত হয় প্রধানত খাদ্যনালির মধ্য অংশে।

মেফ্লাই, উকুন, বেলতা
গঙ্গাফড়িং, প্রজাপতি, ওয়াটার স্ট্রাইডার
গোবরে পোকা, ঘাসফড়িং, উইপোকা
মাছি, জাবপোকা , সিলভার ফিশ

কীটপতঙ্গে যৌন প্রজনন দেখা যায়। পুরুষ প্রজননতন্ত্রে রয়েছে দুটি শুক্রাশয় যেখানে শুক্রাণু উৎপন্ন হয়, শুক্রনালি যা শুক্রাশয় থেকে শুক্রাণু বহন করে এবং একটি জননাঙ্গ যা স্ত্রীপতঙ্গে শুক্রাণু স্থানান্তরে সাহায্য করে। স্ত্রী প্রজননতন্ত্রে রয়েছে দুটি ডিম্বানু উৎপাদনকারী ডিম্বাশয় ও একজোড়া ডিম্বনালি যা একত্রিত হয়ে ভগ (vagina) গঠন করে। অনেক প্রজাতির স্ত্রীপোকার একটি ওভিপজিটর (ডিম পাড়ার অঙ্গ) থাকে।

কীটপতঙ্গ অনেক সপুষ্পক উদ্ভিদের পরাগায়ণ ঘটিয়ে থাকে (বস্ত্ততপক্ষে, কীটপতঙ্গ ও সপুষ্পক উদ্ভিদের উদ্ভব হয় প্রায় একই সময়ে)। এরা জৈব পদার্থের পচন ও মৃত্তিকার গঠন তরান্বিত করে; অনেক খাদ্যচক্রের প্রধান অংশ গঠন করে। মানুষের সঙ্গে তাদের আন্তঃক্রিয়াও বিভিন্ন ধরনের। মাঠে ও গুদামে উভয় ক্ষেত্রে তারা প্রায়ই খাদ্যের জন্য প্রতিযোগী। কিছু কীটপতঙ্গ উদ্ভিদ,  পশুসম্পদ বা মানুষের রোগের বাহক; কিছু বিরক্তিকর; অন্যরা ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র ও পোশাক-পরিচ্ছদ আক্রমণ ও বিনষ্ট করে থাকে। অন্যদিকে পোকামাকড় সিল্ক,  মধু, মোম ও রং-এর মতো মূল্যবান সামগ্রী উৎপন্ন করে; কিছু মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়, কিছু ব্যাপকভাবে ক্ষতিকর অন্যান্য প্রজাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক (পরজীবী ও শিকারি); এবং কিছু বৈজ্ঞানিক ও চিকিৎসা গবেষণায় উপকারী বলে প্রমাণিত।

উচ্চবৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতা, এবং একটি উষ্ণমন্ডলীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে কীটপতঙ্গের প্রায় সকল বর্গের প্রতিনিধি রয়েছে। জলবায়ুর অবস্থা, মৃদু শীত ও উজ্জ্বল সূর্যালোক সবই কীটপতঙ্গের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য অনুকূল।  [মোনাওয়ার আহমাদ]

পরজীবী কীটপতঙ্গ (Insect parasitoids)  বিশেষ দলভুক্ত এমন কিছু পরজীবী পতঙ্গ যাদের লার্ভা জীবিত পোষক ভক্ষণ করে এবং শেষ পর্যন্ত পোষককেই মেরে ফেলে। পরজীবী পতঙ্গসমূহ Diptera, Homoptera ও Hymenoptera সহ কতকগুলি বর্গের অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ পরজীবী পতঙ্গ Hymenoptera বর্গভুক্ত Brachonidae, Chalcididae, Ichneumonidae, Bethylidae, Pteromalidae, Encyrtidae, Eulophidae, Eupelmidae, Eurytomidae, Aphelinidae, Evanidae, Pompilidae ও Trichogrammatidae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। Diptera বর্গের মধ্যে Muscidae, Tachinidae, Phoridae, Psychodidae ও Platystomatidae গোত্রের অনেক প্রতিনিধি পরজীবী।

বাংলাদেশে বাগানের ফুল ও ফলের গাছ এবং ধান, পাটআখসহ অন্যান্য কৃষিজাত শস্যে এবং সংরক্ষিত শস্যের গুদামে শতাধিক পরজীবী পতঙ্গ শনাক্ত করা হয়েছে। এসব পরজীবী পতঙ্গ প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পরজীবী পতঙ্গ আকারে ক্ষুদ্র, কদাচিৎ তিন মিলিমিটারের বেশি লম্বা, নানা রঙের বা কালো এবং তাতে ধাতব আভা ছড়ানো। অধিকাংশ পরজীবী পতঙ্গ প্রকৃতিতে নিঃসঙ্গ থাকে, কেউ কেউ দলবদ্ধ জীবনযাপন করে। প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গের দুই জোড়া ডানা, সেগুলি সাধারণত পাতলা এবং শিরাগুলি খাটো, পিছনের ডানা দুটির তুলনায় সামনের ডানাগুলি বড়। কোনো কোনো পরজীবী পতঙ্গ ডানাহীন। Hymenoptera বর্গের অধিকাংশ পরজীবীর বৈশিষ্ট্য জেনিকুলেট (geniculate) ধরনের শুঙ্গ। এদের মুখোপাঙ্গ চর্বণ ও চোষণের উপযোগী। পরজীবী পতঙ্গের ডিম্বস্খালক বেশ উন্নত এবং ডিম পাড়ার সময় নানাভাবে ব্যবহার্য। বহু পরজীবী পতঙ্গ প্রাপ্তবয়সে মৌচাকের মধু, রেজিন, ফুলের মধু ইত্যাদি পান করে, কিন্তু অন্যরা পোষকের দেহরস শুষে খায়। Pteromalidae গোত্রের পরজীবীরা ডিম পাড়ার সময় ডিম্বস্খালককে খাদ্যনালী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। কতকগুলি পরজীবী স্ত্রী পতঙ্গ পুরুষের সঙ্গে যৌনমিলন ছাড়াই ডিম পাড়ে এবং সেক্ষেত্রে এসব অনিষিক্ত ডিম থেকে কেবল পুরুষ পতঙ্গই জন্মে। বেশির ভাগ পরজীবী পতঙ্গের লার্ভা অন্যান্য পতঙ্গের ডিম, লার্ভা, ও পিউপার উপর পরজীবী হিসেবে জীবন কাটায়। গবেষণাগারে ব্যাপকভাবে বেশ কিছু প্রজাতির পরজীবী পতঙ্গের চাষ হয়ে থাকে এবং সেগুলি ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের জীবজ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহূত হয়।  [মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম]

শিকারি কীটপতঙ্গ (Insect predator)  কিছু মুক্তজীবী কীটপতঙ্গ যারা সচরাচর আকারে ছোট ও দুর্বল অন্যান্য কীটপতঙ্গ শিকার করে প্রায়ই শিকারকে দ্রুত ও আস্ত গিলে ফেলে। শিকারিরা সাধারণত শিকার খুঁজে বের করে ও ভরপেট আহারের জন্য একাধিক শিকার ধরে। শিকারি পতঙ্গের উত্তম উদাহরণ mantids, chrysopids ও লেডিবার্ড বিটলের অনেকগুলি প্রজাতি। পৃথিবীতে শিকারি কীটপতঙ্গকে কাজে লাগিয়ে জীবজ নিয়ন্ত্রণে (biological control) উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক উভয় ধরনের বহু প্রজাতির শিকারি কীটপতঙ্গ আছে।

সারণি ১ বাংলাদেশের কতিপয় শিকারি কীটপতঙ্গ ও তাদের প্রধান শিকার।

বর্গ গোত্র প্রজাতি  প্রধান শিকার
Odonata Coenagrionidae Agrioenemis femina  পাতাফড়িং, গাছফড়িং
Coenagrionidae Coenagrion sp. ’’
Libellulidae Crocothemis servilia ’’
Hemiptera Miridae Cyrtorrhinus lividipennis ’’
Reduviidae Isyndus heros ’’
Reduviidae Polytoxus sp.    ’’
Pyrrhocoridae  Antilochus coqueberti  pyrrhocorids
Pentatomidae  Andrallus spinidens        শুঁয়াপোকা
Pentatomidae  Eocanthecona furcellata লেডিবার্ড বিটল, skipper
Coleoptera Carabidae Casnoidea indica পাতাফড়িং, গাছফড়িং
Carabidae Ophionea ishii ’’
Cicindelidae Cicindela sexpunctata           ধানের পোকা
Cicindelidae Neocollyris varicornis ’’
Staphylinidae Paederus fuscipes  পাতাফড়িং, গাছফড়িং
Coleoptera Coccinellidae Brumoides suturalis জাবপোকা, অাঁশপোকা, psyllids, মাইট
Coccinellidae Cheilomenes sexmaculatus ’’
Coccinellidae Coccinella septempunctata ঢ়ংুষষরফং, জাবপোকা
Coccinellidae Coccinella transversalis ’’
Coccinellidae Illeis indica জাবপোকা
Coccinellidae Micraspis crocea জাবপোকা, ছাতরাপোকা
Coccinellidae M. discolor জাবপোকা, পাতাফড়িং
Coccinellidae Nephus sp.  জাবপোকা, ছাতরাপোকা
Coccinellidae N. severini    ছাতরাপোকা
Coccinellidae Pharoscymnus horni অাঁশপোকা
Coccinellidae Platynaspis lewisi  ঢ়ংুষষরফং
Coccinellidae Synharmonia octomaculata জাবপোকা, পাতাফড়িং, গাছফড়িং
Coccinellidae Pullus sp. পড়পপড়রফং
Coccinellidae Rodolia breviuscula অাঁশপোকা
Diptera Syrphidae Allobacha pulchrifrons   ঢ়ংুষষরফং
Syrphidae Sphaerophoria sp. জাবপোকা
Syrphidae Syrphus confrater   ’’
Syrphidae Xanthogramma javana   ’’
Hymenoptera Pompilidae Anoplius alteratus মাজরাপোকা
Sphecidae     Sphex lobatus ঘুগড়া পোকা
Formicidae Monomorium latinoda অাঁশপোকা,  মাজরাপোকা
Formicidae Tetramorium simillium ’’

পরাগযোগকারী কীটপতঙ্গ (Insect pollinator)  উদ্ভিদের পরাগায়ণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কীটপতঙ্গ। এসব কীটপতঙ্গ তাদের খাদ্য বা ফুলের নির্যাস সংগ্রহের জন্য ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায় এবং সেসঙ্গে উদ্ভিদে পরাগযোগ ঘটায়।  মৌমাছি ছাড়া অন্যান্য আরও অসংখ্য প্রজাতির কীটপতঙ্গ বিভিন্ন ফসল ও গাছপালার পরাগায়ণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে পরাগায়ণে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৭০ প্রজাতির মৌমাছিজাতীয় পতঙ্গের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। সুষ্ঠু পরাগায়ণের মাধ্যমে সরিষা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এখন অনেক খামারে মৌমাছি ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্লোফ্লাই (blowfly) দলের কিছু মাছি (বর্গ Diptera) পিঁয়াজসহ কয়েক ধরনের শীতকালীন ফসলের পরাগায়ণে মৌমাছির চেয়ে বেশি তৎপর বলে জানা গেছে। এক প্রজাতির বোলতা (wasp) ডুমুরের পরাগায়ণের জন্য অপরিহার্য। পাম অয়েল গাছের পরাগায়ণ ঘটায় প্রধানত Elaeidobius-এর তিন প্রজাতির উইভিল। আমের ফুলে পরাগ সংযোগের জন্য কতিপয়  বিটল, গান্ধিপোকা,  মাছি, বোলতা ইত্যাদি মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।  পিঁপড়াভ্রমরমথ, প্রজাপতি এবং থ্রিপস (thrips) দক্ষ পরাগযোগকারী কীটপতঙ্গ হিসেবে পরিচিত। কলাগাছের পরাগায়ণে তেলাপোকা অংশগ্রহণ করে বলে জানা গেছে।  [মোঃ আবদুল হান্নান]

পাতাভুক কীটপতঙ্গ (Leaf insect)  Orthoptera বর্গের Phasmidae গোত্রের সবুজ রঙের চ্যাপ্টা গড়নের পতঙ্গ। এসব পোকা যে পাতায় থাকে তাদের শরীরের রং, গড়ন ও ডানার শিরা অবিকল ওই পাতার মতোই দেখায়। সবগুলি প্রজাতিরই শরীর, ডানা ও পা যথেষ্ট চ্যাপ্টা। এদের দৈর্ঘ্য ৪-৮ সেমি। নিশ্চল অবস্থায় পোষক গাছের পাতার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিশে থাকে। পাতাভুক পতঙ্গদের সিংহভাগই গ্রীষ্মমন্ডলের বাসিন্দা। বাংলাদেশে আছে কয়েক প্রজাতি এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বহীন। [এসএম হুমায়ুন কবির]

অাঁশপোকা (Scale insect)  কীটপতঙ্গদের বর্গ Homoptera-এর Coccoidea অধিগোত্রভুক্ত যে কোনো সদস্য, যাদের সঙ্গে জাবপোকার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এরা অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দলবদ্ধ বিপুল সংখ্যক অাঁশপোকা উদ্ভিদের দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণ রস শোষণ করায় উদ্ভিদের শাখা-প্রশাখা, কান্ড, পাতা ও ফল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত গাছটিই মারা যায়।

সারণি ২ বাংলাদেশে রেকর্ডকৃত কতকগুলি অাঁশপোকা এবং এদের পোষক উদ্ভিদের তালিকা।

অাঁশপোকার প্রজাতি প্রধান পোষক উদ্ভিদ
Aclerda takahashi Saccharum officinarum (আখ)
Aonidiella aurantii Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু)
Aonidiella citrina Annona squamosa (আতা), Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু), Feronia limonia (কতবেল)
Aonidiella orientalis Anacardium occidentale, (কাজুবাদাম), Cocos nucifera (নারিকেল)
Aspidiotus destructor Cocos nucifera (নারিকেল)
Bambucaspis solenophoroides Bambusa arundinacea (বাঁশ)
Cerococcus indicus Gossypium harbaceum, (তুলা) Rosa spp.(গোলাপ)
Ceroplastes pseudoceriferus Mangifera indica (আম)
Ceroplastes rubens  Artocarpus heterophyllus (কাঁঠাল), Psidium guajava (পেয়ারা)
Cerostegia floridensis Anacardium occidentale (কাজুবাদাম)
Chinaspis dilatata  Mangifera indica (আম)
Chinaspis elongata  Bambusa arundinacea (বাঁশ)
Chloropulvinaria floccifera  Artocarpus heterophyllus (কাঁঠাল)
Chloropulvinaria polygonata Mangifera indica (আম)
Chloropulvinaria psidii Psidium guajava (পেয়ারা)
Chrysomphalum aonidum Mangifera indica (আম), Litchi chinensis (লিচু), Psidium guajav'a (পেয়ারা), Cardanthera uliginosa (কালা),   Cocos nucifera (নারিকেল), Syzygium grandes (জাম), Murraya paniculata (কামিনী), Rosa centifolia (গোলাপ)
Coccus discrepans Cardanthera uliginosa (কালা)
Coccus hesperidum Mangifera indica (আম), Psidium guajava (পেয়ারা)
Coccus indicus Achras sapota (সফেদা)
Coccus ramakrishnae Ficus hispida (ডুমুর)
Coccus viridis Coffea arabica (কফি)
Coccus viridulus Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু)
Crypticerya Jacobsoni  Annona sp. (আতা), Artocarpus heterophyllus (কাঁঠাল), Mangifera indica (আম)
Drosicha mangiferae Artocarpus heterophyllus (কাঁঠাল), Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু), Ficus hispida (ডুমুর), Litchi chinensis (লিচু), Mangifera indica (আম) etc
Eriochiton theae Camellia sinensis (চা)
Hemaspidoproctus cinereus Mangifera indica (আম)
Icerya aegyptiaca Artocarpus heterophyllus (কাঁঠাল), Psidium guajava (পেয়ারা)
Icerya formicarum  Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু), Psidium   guajava (পেয়ারা)
Icerya minor Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু) Mangifera indica (আম) Psidium guajava (পেয়ারা)
Icerya pulcher Mangifera indica (আম)
Icerya purchasi Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু), Ficus hispida (কাগজিলেবু)
Icerya seychellarum Artocarpus heterophyllus (কাঁঠাল), Citrus aurantifolia (KvMwRGjey) Psidium guajava (পেয়ারা)
Lopholeucaspis japonica Ficus semicordata (ডুমু^র)
Melanaspis glomerataq Saccharum officinarum (আখ)
Metaceronema japonica Camellia sinensis (চা)
Parlatoria ziziphi Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু)
Parasaissetia nigra    Gossypium harbaceum (তুলা)
Phenacaspis vitis Litchi chinensis (লিচু)
Pinnaspis species Mangifera indica (আম)
Pulvinaria ixorae Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু)
Saissetia coffeae  Achras sapota (সফেদা), Citrus aurantifolia (কাগজিলেবু), Coffea arabica (কফি), Psidium guajava (পেয়ারা)

অাঁশপোকার অধিকাংশ প্রজাতিই ছোট, দৈর্ঘ্যে ১০ মিমি-এর কম। স্ত্রী অাঁশপোকা সাধারণত ডিম পাড়ে, কিন্তু কিছু প্রজাতির স্ত্রী পতঙ্গ জীবিত লার্ভা প্রসব করে। সদ্যপ্রসূত লার্ভা বেশ সক্রিয় এবং কখনও কখনও বায়ুবাহিত হয়ে এক উদ্ভিদ থেকে অন্য উদ্ভিদে পৌঁছায় এবং বাতাস এদের অনেক দূরে এবং বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়। প্রথম পর্যায়ে উপাঙ্গ ও শুঙ্গ থাকে এবং সচরাচর সক্রিয়ভাবে পোষক উদ্ভিদে ব্যবহার্য আহারস্থল খোঁজে। স্ত্রী পতঙ্গ প্রায়শ প্রথম ত্বকনির্মোচনের সময় উপাঙ্গ ও শুঙ্গ হারিয়ে উদ্ভিদ দেহের সঙ্গে স্থায়ীভাবে লেপটে যায় এবং সেখান থেকে রসশোষণ করে। এরা চলাফেরা করতে পারে বা চলাফেরার চেষ্টাও করে না এবং দেহের উপর মোমের একটি রক্ষাবেষ্টনী বা অাঁশ (scale) গড়ে তোলে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অাঁশপোকার সচরাচর একজোড়া ডানা থাকে, উড়ে অবাধে এবং সাধারণত খাদ্যগ্রহণ করে না।

অাঁশপোকা দুই প্রকার: ১. বর্মাবৃত অাঁশ বা Diaspinidae গোত্রের অাঁশপোকা, যাদের কমনীয় দেহের উপর স্পষ্ট, শক্ত ও বিযোজ্য অাঁশ (scale) থাকে এবং ২. কোমল অাঁশ/কচ্ছপ-অাঁশ বা Lecaniinae উপগোত্রের অাঁশপোকা যাদের দেহের শক্ত খোলক অবিচ্ছেদ্য। দুই প্রজাতির অাঁশপোকা উপকারী। একটি লাক্ষাকীট/Lac insect (Laccifer lacca) আছে বাংলাদেশে, উৎপাদন করে শেল্যাক (shellac)। অন্যটি মেক্সিকোর ককিনিয়েল কীট/Cochineal insect (Dactypolius coccus), যাদের স্ত্রী পতঙ্গের উজ্জ্বল ও লাল রঙের দেহ শুকিয়ে গুড়ো করে রং তৈরি হয়।

পৃথিবীতে প্রায় ২৫০০ প্রজাতির অাঁশপোকা রয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন উদ্যান ও কৃষিজ শস্য থেকে দুই ডজনের বেশি অাঁশপোকা শনাক্ত করা হয়েছে।  [বিধান চন্দ্র দাস]

আরও দেখুন পিঁপড়া; বিটল; ভ্রমর; মাছি