তারিখ-ই-দাউদী
তারিখ-ই-দাউদী আবদুল্লাহ রচিত একটি ইতিহাস গ্রন্থ। ৯৮৩ হিজরি বা ১৫৭৫-৭৬ খ্রিস্টাব্দে রচিত এ গ্রন্থে দিল্লির সুলতান বাহলুল লোদি থেকে শুরু করে বাংলার শেষ আফগান সুলতান দাউদ খান কররানী পর্যন্ত আফগানদের ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। দাউদ কররাণীর নামে বইটি উৎসর্গীকৃত। তিনি ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর-এর সেনাপতি খান জাহান কর্তৃক রাজমহলের যুদ্ধে পরাজিত হন।
গ্রন্থকার আবদুল্লাহ জীবনের বেশির ভাগ সময় তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস বই পড়ে সময় কাটান এবং জনগণের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আফগান সুলতানদের দলিলাদি জোগাড় করে তিনি বই আকারে তারিখ-ই-দাউদীতে লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ এখানে কালানুক্রমিকভাবে সাজানো হয় নি, ধারাবাহিক বর্ণনা প্রায়ই ফারসি কবিতা, হিন্দি শ্লোক, এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র জৌনপুরের ইতিহাস বর্ণনায় বিঘ্নিত হয়। সুতরাং এতে রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কাহিনীমালাও স্থান পায়। তাঁর ব্যবহূত উৎসের মধ্যে তিনি আববাস সেরওয়ানির তারিখ-ই-শেরশাহী এবং আহওয়াল-ই-হুমায়ুন বাদশাহ-র মতো উঁচু মানের গ্রন্থের উল্লেখ করেন। জায়গায় জায়গায় তারিখ-ই-দাউদী খুব প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করে যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। গ্রন্থকার শূর সুলতানদের, বিশেষ করে ইসলাম শাহ শূরের বংশধরদের বিস্তারিত বিবরণ দেন। এ সময় বাংলা প্রাদেশিক শূর ও কররানীদের অধীনে স্বাধীনতা ভোগ করছিল। সুতরাং বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ। [আবদুল করিম]