তানোর উপজেলা

তানোর উপজেলা (রাজশাহী জেলা)  আয়তন: ২৯৫.৪০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৯´ থেকে ২৪°৪৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°২৪´ থেকে ৮৮°৩৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নাচোল ও নিয়ামতপুর উপজেলা, দক্ষিণে পবা ও গোদাগাড়ী উপজেলা, পূর্বে মোহনপুর ও মান্দা উপজেলা, পশ্চিমে নাচোল, নবাবগঞ্জ সদর ও গোদাগাড়ী উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৯১৩৩০; পুরুষ ৯৪০৪১, মহিলা ৯৭২৮৯। মুসলিম ১৬২০১৮, হিন্দু ১৫১৫২, বৌদ্ধ ১৭, খ্রিস্টান ৯৩২৯ এবং অন্যান্য ৪৮১৪। এ উপজেলায় সাঁওতাল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: শিব নদী।

প্রশাসন তানোর থানা গঠিত হয় ১৮৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৭৭ ১৬৯ ৫৩৪১৯ ১৩৭৯১১ ৬৪৮ ৪৯.৭ ৪৮.৫
মুণ্ডুমালা পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
- ১৪ ২১৯৪০ - ৫০.৫
তানোর পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২৪.৯১ (২০০১) ২৬ ৩১৪৭৯ ১১৬২ (২০০১) ৪৮.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কলমা ৫৪ ১২৭৫৮ ১৫৭৮৯ ১৬৬৯৬ ৫০.৫
কামারগাঁও ৫৭ ৯৩৬৩ ১২৮৯৯ ১৩৩৩৮ ৫৪.৪
তালন্দ ৮১ ৬৫৪৩ ৫৬৫২ ৫৯০৩ ৫০.৩
পাচন্দর ৭০ ১১৩১০ ১৩৩০১ ১৩৮৯১ ৪৬.৮
বাধাইড় ১৩ ১০৭৫২ ৯২৩৮ ৯৪৩০ ৪১.৮
সরঞ্জাই ৭৭ ৪১৭১ ৪৭৮৭ ৫০৩৪ ৪৬.৫
চান্দুড়িয়া ৪০ ৪১০২ ৫৮৫৫ ৬০৯৮ ৪৩.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সিধইর গ্রামে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ভাগনা জামে মসজিদ (১২২৩ হিজরি), মুন্ডুমালা গ্রামে প্রাচীন মসজিদ (ষোড়শ শতক),  তালন্দ শিব মন্দির (১৮৬০) ও দুর্গা মন্দির এবং বিহারোল গ্রামে বৌদ্ধ বিহার।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা উপজেলা সদরে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের উপর হামলা চালিয়ে প্রথমে সাফল্য পেলেও পরে পিছু হটে যাবার সময় দুজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা বাগধানী রাজাকার ক্যাম্প, বাগধানী ব্রিজ, তানোর থানা, তালোন্দো রাজবাড়ি রাজাকার ক্যাম্প, তানোর বাতাশপুর রাজাকার ক্যাম্প প্রভৃতি স্থানে অপারেশন পরিচানলা করে।

বিস্তারিত দেখুন তানোর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৭৮, মন্দির ২৫, গির্জা ২০, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গোল্লাপাড়া জামে মসজিদ, কামারগাঁও জামে মসজিদ, দালিয়া ও ভাগনা জামে মসজিদ, সিধাইড় গ্রামে পীরের মাযার, মাদারীপুর হাটে পাগলা শাহের দরগাহ, কামার গাঁ শিব মন্দির, শিবতলা শিব মন্দির, তানোর মন্দির ও মঠ, মুন্ডুমালা মন্দির এবং গীর্জা (মাহালী পাড়া)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৪৮.৮%; পুরুষ ৫১.১%, মহিলা ৪৬.৭%। কলেজ ১৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২২, এনজিও স্কুল ৫৭, মাদ্রাসা ১৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মুন্ডুমালা কলেজ (১৯৭১), তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রী কলেজ (১৯৭১), তালন্দ আনন্দমোহন উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮২), কামারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), হাতিশাইল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), মুন্ডুমালা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), তালন্দ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮২), মুন্ডুমালা কামিল মাদ্রাসা (১৯৫৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  সাময়িকী: ভোরের আলো, ঢেউ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১০, ক্লাব ৩০, সিনেমা হল ২, নাট্যমঞ্চ ১, মহিলা সমিতি ৭০, খেলার মাঠ ৪।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৮.৩৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৩%, ব্যবসা ৭.৬৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৫৮%, চাকরি ৩.২২%, নির্মাণ ০.৩৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১১% এবং অন্যান্য ৬.০৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.৩৭%, ভূমিহীন ৬৬.২৭%। শহরে ৪৮.৮০% এবং গ্রামে ৫১.৯৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, পান, আলু, সরিষা, মসুর, কলাই, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি যব, তিল, তিসি, অড়হর, কাউন, মিষ্টি আলু, দাদখানি (ধান)।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, তাল, পেঁপে, কলা, লিচ, তরমুজু।

মৎস্য, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ১২৪, গবাদি পশু ৪০, হাঁস-মুরগি ৩৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২১৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪২৭ কিমি, রেলপথ ২ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা সিমেন্ট কারখানা, ওয়েল্ডিং কারখানা, চালকল, বরফকল।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ৫। মুন্ডুমালা হাট, কামারগাঁও হাট,  তালন্দ হাট, কলমা হাট, কালীগঞ্জ হাট, গোল্লাপাড়া হাট এবং মুন্ডুমালা ফুলের মেলা, বিল্লি মেলা, কামারগাঁও চৈত্রসংক্রান্তী মেলা, মাদিরপুরের মুহররম মেলা, কালিপূজার মেলা এবং আয়ড়া দুর্গাপূজার মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, আলু, গম, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬০.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৭৫.১%, ট্যাপ ২০.৬% এবং অন্যান্য ৪.৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৫.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪১.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২২.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮০ সালে অতি ক্ষরা ও অনাবৃষ্টির কারণে তানোর উপজেলার জমির নববই শতাংশ ফসলের ক্ষতি হয়। এছাড়া ১৯৯৫ সালের ভয়াবহ বন্যায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [আসাদুল্লাহ মামুন হাসান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; তানোর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।