ডাক যোগাযোগ
ডাক যোগাযোগ উপমহাদেশে প্রাচীনতম ডাক যোগাযোগ সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে বৈদিক গ্রন্থ অথর্ববেদে। তবে সে ব্যবস্থা বঙ্গে প্রচলিত ছিল কিনা তা জানা যায় নি। এ অঞ্চলে প্রচীনকাল থেকেই সংবাদ আদান-প্রদান ব্যবস্থা চালু ছিল। বিভিন্ন সাহিত্যসূত্র, লোকগাথা ও ছড়া-কবিতায় দেখা যায় যে আদিকালে একস্থান থেকে অন্যস্থানে আপনজনের নিকট খবরাদি প্রেরণের জন্য দূত এবং কবুতর ব্যবহার করা হতো। প্রাচীনকালে দূতের সামাজিক অবস্থান এত উচ্চে ছিল যে, দূতকে অন্তরীণ করা, অত্যচার করা বা হত্যা করা হতো না। আপনজনের কাছে বার্তা পাঠাতে মৌসুমি মেঘ এবং বাতাসকেও দূত হিসেবে ব্যবহার করার কল্পচিত্র এঁকেছেন প্রখ্যাত কবি কালিদাস এবং ধোয়ী তাঁদের সুবিদিত গ্রন্থ মেঘদূত ও পবনদূত-এ। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে নল-দময়ন্তীর হাঁস, রামায়নে হনুমান, মহাভারতে বিদুর এবং আনারকলীর হরিণ প্রভৃতি প্রাণীকে দূতিয়ালীর কাজে ব্যবহার হতে দেখা যায়। বাংলা ‘ডাক’ কথাটির শব্দার্থ ‘আহবান করা’ অথবা ‘মনোযোগ আকর্ষণ করা’। এ শব্দ থেকে ‘ডাকব্যবস্থা’, ‘ডাকঘর’, ‘ডাকহরকরা’ এবং ‘ডাকমাশুল’ শব্দগুলির উদ্ভব হয়েছে।
১২০৬ থেকে ১২১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লির প্রথম সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবেক-এর শাসনামলে ডাক ব্যবস্থার ক্রমোন্নতির একটা ধারাবাহিক বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি দিল্লি থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত আরবদের অনুকরণে এক ধরনের ডাক ব্যবস্থা (ঘোড়ার ডাক) চালু করেন। কতগুলি নতুন শব্দও তিনি চালু করেছিলেন, যেমন কাসিদ (দূত), ধাওয়া (রানার) এবং উলাগ (ঘোড়ার সাহায্যে বহনকারী)। এই ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেন সুলতান আলাউদ্দিন খলজী, যিনি জানামতে সর্বপ্রথম ডাকচৌকি স্থাপন করেন। তিনি ১২৯৬ সালে ঘোড়ায় চড়া এবং পায়ে হাঁটা ডাকবাহকের সাহায্যে তথ্য পরিবহণের ব্যবস্থা চালু করেন। তার সময়ে ডাক বিভাগকে বলা হতো মাহকামা-ই-বারিদ। এই বিভাগকে দু’জন ডাক কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা হয়, এদের একজন মালিক বারিদ-ই-মামালিক এবং তার সহযোগী নায়েব বারিদ-ই-মামালিক। তিনি প্রতিটি শহরে সংবাদ লেখক (মুন্সি) নিয়োগ করতেন।
মোহাম্মদ বিন তুগলকের শাসনামলে (১৩২৫-১৩৫১) ডাক বিভাগের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান সূচিত হয়। ইবনে বতুতার ভ্রমণ কাহিনীতে লিপিবদ্ধ আছে যে তিনি সে সময় দুই ধরনের ডাক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার একটি হলো ঘোড়সওয়ার ডাকবাহক এবং অন্যটি পায়ে হাঁটা সাধারণ ডাকবাহক। ইবনে বতুতা লিখেছেন, সিন্ধু থেকে দিল্লী ডাক পরিবহণে অত্যন্ত কম সময় ব্যয় হত। তুগলকদের শাসনামলে ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা আংশিকভাবে পুলিশের দায়িত্বও পালন করত।
শেরশাহ’র শাসনামলে (১৫৩৮-১৫৪৫) ডাক ব্যবস্থার সার্বিক সংস্কার সাধন করা হয়। তিনি পূর্বের ডাক রানার ব্যবস্থার পরিবর্তে পুরোপুরি ঘোড়ার সাহায্যে ডাক পরিবহণ ব্যবস্থা চালু করেন এবং বাংলাদেশের সোনারগাঁও থেকে সিন্ধুনদের তীর পর্যন্ত গ্রান্ট ট্রাঙ্ক রোড নামে খ্যাত ৪,৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক রাস্তা তৈরি করেন। তিনি প্রতি দুই মাইল অন্তর একটি করে চৌকি তৈরি করেন যেগুলি সরাইখানা এবং ডাকচৌকি রূপে ব্যবহূত হতো। শেরশাহ ১,৭০০টি ডাকঘর নির্মাণ করেন এবং ঘোড়াসহ প্রায় ৩,৪০০ জন বার্তাবাহক নিযুক্ত করেন। তিনি তাঁর গভর্নর ও মন্ত্রীদের নিকট এই কর্তৃত্ব হস্তান্তরে রাজি ছিলেন না। এই সময় মীর মুন্সি অর্থাৎ রাজকীয় ফরমান, যোগাযোগ ও ডাক বিভাগের সচিব দারোগা-ই-চৌকি পদধিকারী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে কাজ করতেন। বিপুল সংখ্যক কর্মচারীর সমন্বয়ে সম্প্রসারিত ডাক ব্যবস্থাকে বলা হতো দিওয়ান-ই-ইনসা। তারিখ নবীস পদধিকারী দুজন করণিকের অধীনে নিম্নবর্ণের গোত্র থেকে নিয়োজিত মৈওয়ার নামক কমচারীরা শাহী তথ্য আদান-প্রদান করত।
বাংলা শাসনকালে মুগলরা দারোগা-ই-ডাকচৌকি ব্যবস্থা বহাল রাখেন। ডাক চৌকিগুলি মূলত প্রাদেশিক সরকার নিয়ন্ত্রণ করত। সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসন আমলে ১৬১০ সাল থেকে বাংলার রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দিল্লির ডাক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ডাক গ্রহণ ও প্রেরণের জন্য ডাকচৌকির দারোগা বা সুপারিনন্টেন্ডেন্ট নিয়োগ করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্রগুলির মধ্যে ছিল: ক. ফরমান (বাদশাহের আদেশ); খ. শুক্কুক (সরাসরি কোন ব্যক্তির প্রতি বাদশাহের পত্র); গ. নিশান (বাদশাহ ছাড়া রাজ পরিবারের কোন ব্যক্তির পত্র); ঘ. হসবুল হুকুম (সম্রাটের নির্দেশক্রমে লেখা মন্ত্রীর পত্র); ঙ. সনদ অর্থাৎ নিয়োগপত্র; চ. পরওয়ানা (নিম্নপদস্থ কর্মচারীর প্রতি প্রশাসনিক নির্দেশ) এবং চ. দস্তক (প্রশাসনিক অনুমতিপত্র)। ঢাকায় নিয়োজিত দারোগা-ই-ডাকচৌকি বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রাপ্ত চিঠিপত্র সম্রাটের নিকট উপস্থাপনের জন্য নিজে না খুলে সরাসরি মীর বকসি বা সচিবের নিকট প্রেরণ করতেন। অন্যদিকে মীর বকসি সরাসরি সম্রাটের নিকট লিখিত পত্র ছাড়া অন্যান্য পত্র নিজে খুলতেন। দারোগা-ই-চৌকি নিয়োগ করা হয়েছিল ঢাকা থেকে চিঠি প্রেরণ ও গ্রহণের জন্য। ডাক প্রশাসনের সর্বকনিষ্ঠ স্তরের কর্মচারী ছিল হরকরা। ডাক বহন ছাড়াও তাদের অপর দায়িত্ব ছিল গুপ্তচরের কাজ করা অর্থাৎ বিভিন্ন ঘটনা-সংক্রান্ত খবরাখবর প্রদেশের গভর্নরের নিকট পৌঁছে দেওয়া। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে বাংলা থেকে উড়িষ্যা এবং রাজমহল থেকে মুর্শিদাবাদের মধ্যে কবুতরের সাহায্যে ডাক যোগাযোগ স্থাপিত হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৬৩০-৮৮) মুগলদের তুলনায় অনেক সংক্ষিপ্ত এলাকায় ডাক পরিবহণ ব্যবস্থা চালু রাখে। কলকাতার সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রাজশাহী, রংপুর, রাজমহল এবং মুর্শিদাবাদের বাণিজ্যিক দপ্তরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য এ ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল। ১৭৬৬ সালে রবার্ট ক্লাইভ প্রথমবারের মতো ডাক ব্যবস্থার সংস্কার করেন। কলকাতায় একজন পোস্টমাস্টার নিয়োগ দেয়া হয়, কলকাতার সঙ্গে ৬টি ডাক যোগাযোগ কেন্দ্রের সংযোগ স্থাপন করা হয়, তবে প্রধান সংযোগ ছিল ঢাকা ও পাটনার সঙ্গে। এই ব্যবস্থাকে বলা হতো ক্লাইভের ডাক।
ওয়ারেন হেস্টিংস্-এর সময় ১৭৭৪ সালের ১৭ মার্চ তারিখে কলকাতায় জিপিও বা জেনারেল পোস্ট অফিস স্থাপন করা হয়। এ সময়ে নিয়মিত ডাক ব্যবস্থার আওতায় মাত্র দুই আনার বিনিময়ে বাংলাদেশের মধ্যে ১৬০ কিলোমিটার সীমানায় ডাক প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। এ কাজের জন্য ১৩৯টি অঞ্চলে ৪১৭ জন হরকরা, ১৩৯ জন মশালচি (আলোকবর্তিকা বহনকারী) এবং ১৩৯ জন ঢুলি নিয়োগ করা হয়।
১৭৮১ সালে কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম ৪০ টাকা, সময় লাগতো ৬০ দিন আর ঢাকা পর্যন্ত মাশুল ছিল ২৯ টাকা, সময় লাগতো সাড়ে ৩৭ দিন। ১৭৮৪ সালে পালকি ডাক চালু করা হয়। পালকি ডাক চিঠিপত্রে বান্ডিলের পাশাপাশি মানুষও বহন করত অথবা মানুষবাহী পাল্কিতে ডাকের পুটুলি বহন করা হতো। এ ব্যবস্থা বর্ষা মৌসুমে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারমাস সময় ছাড়া সারাবছর চালু থাকত। ১৭৮৫ সালে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলের ডাক চৌকিগুলির মাধ্যমে পার্সেল প্রেরণ ব্যবস্থা চালু করা হয়। এখান থেকেই বর্তমান পোস্টাল পার্সেল সার্ভিসের যাত্রা শুরু।
১৭৯১ সালে ডাক বহনের মাশুল পুনর্বিন্যাস করা হয় এবং কলকাতা থেকে ঢাকা তিন আনা, চট্টগ্রাম পর্যন্ত ছয় আনা মাশুল ধার্য করা হয়। ১৭৯৩ সালে এক বিধি জারির মাধ্যমে ডাক ব্যবস্থা আরও সংগঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক রূপ লাভ করে। এ ব্যবস্থায় স্থানীয় ডাক যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব বর্তায় জমিদারদের ওপর। এ সময়ে ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব ডাক ব্যবস্থাও চালুর করে। এ ডাকব্যবস্থাকে বলা হতো মহাজনি ডাক। সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী এবং জমিদাররা এর সুযোগ ভোগ করতেন। ১৭৯৮ সালে একটি আইন পাস করার মাধ্যমে লর্ড ওয়েলেসলি ডাক ব্যবস্থার আরও সংস্কার সাধন করেন। পূর্ববঙ্গের ডাকঘরগুলি কলকাতার জেনারেল পোস্ট অফিসের তত্ত্বাবধানে ছিল। ১৭৯৮-৯৯ সালে কলকাতা জিপিও-র ৯টি শাখা অফিস ছিল যথাক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, রংপুর, নাটোর, কুমারখালী, রঘুনাথপুর, সিলেট এবং রামুতে।
১৮৫৪ সালে সমন্বিত আধুনিক ডাকব্যবস্থার অধীনে দূরত্বভিত্তিক চিঠি পাঠানোর মাশুলের পরিবর্তে ওজনভিত্তিক মাশুল আদায়ের ব্যবস্থা চালু করা হয়। এ সময়ে প্রথম সর্বভারতীয় ডাকটিকিট প্রবর্তন করা হয়। দ্রুত ডাক পরিবহণের মাধ্যম হিসাবে রেল পরিবহণ ব্যবস্থার সহায়তা গ্রহণ করা হয় এবং রেলওয়ে মেইল সার্ভিস (আরএমএস) চালু হয়। এ সময় প্রথম আধা আনা মূল্যের লালচে কমলা এবং এক আনা মূল্যের উজ্জ্বল নীল রঙের ডাকটিকিট চালু হয়। ১৮৮০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত রেল মেইল সার্ভিস চালু হয়। এর মাধ্যমে স্থানীয় ডাক বাছাই কাজ শুরু হয়। ১৮৬৪-৬৫ সালে ডাক বিভাগের আয় বেড়ে হয় দ্বিগুণ। ১৮৬৬ সালে পাস করা পোস্ট অফিস আইন ১৮৬৭ থেকে কার্যকর হয়। ১৮৭৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় সদর দপ্তর স্থাপন করে পোস্ট অফিসের পূর্বাঞ্চলীয় শাখা চালু করা হয় এবং চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে বিলি বা ডেলিভারি অফিস স্থাপন করা হয়। ১৮৭৯ সালে সর্বপ্রথম এক পয়সা মূল্যের পোস্টকার্ড চালু করা হয় এবং তৎকালীন বিশ্বে এটাই ছিল ডাক বহনের ন্যূনতম হার। ১৮৭৩ সালের ১ জুলাই থেকে এক আনা মূল্যের এমবস্ড খাম চালু করা হয়। ১৮৭৭ সালের ১ আগস্ট থেকে রেজিস্টার ডাক এবং একই সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ভ্যাল্যু পেয়েবল ডাক ও ১৮৭৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বীমাকৃত ডাক চালু করা হয়। ১৮৫৬-৫৭ সালে প্রথম চিঠি ফেলার বাক্স বা লেটার বক্স চালু হয় এবং এই বক্সের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৮৮০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ভারতের সকল ডাকঘরে মানিঅর্ডার ব্যবস্থা চালু হয়। একজন প্রধান পরিদর্শকের অধীনে ১৮৭৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে আসাম পোস্টাল সার্কেল স্থাপিত হয় এবং কুঁচবিহার, সিলেট ও কাছাড় জেলাকে এই সার্কেলের আওতাভুক্ত করা হয়। ইতোমধ্যে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থাও সকল প্রধান ডাকঘরগুলিতে চালু করা হয় এবং ধীরে ধীরে তা’ বিস্তার লাভ করতে থাকে। পরে রেলওয়ে মেইল সার্ভিসকে জাহাজ যোগাযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ১৮৮৪ সালে আসাম স্টিমার সার্ভিসের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়, অবশ্য পরে ১৯০৪ সালে আবার তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ আরএমএস ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল কেবল নারায়ণগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের মধ্যে ডাক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য। খুলনা ও বরিশালের মধ্যেও আরএমএস সার্ভিস চালু করা হয় ১৮৯৯ সালে, কিন্তু তা আবার ১৯০২ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়। টেলিগ্রাফ সার্ভিস চালু করা হয় পোস্ট অফিসের সঙ্গেই সংযুক্ত অফিসের মাধ্যমে ১৮৮৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে এবং এক্সপ্রেস টেলিগ্রাম সার্ভিস চালু হয় ১৯০৯ সালে। ১৯০৫ সালে বাংলাকে বিভক্ত করে পূর্ববঙ্গ ও আসামের সমন্বয়ে ঢাকাকে রাজধানী করে একটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়। ১৯০৭ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম ডাক সার্কেল গঠিত হয় এবং তৎকালীন সার্কেলের যেসব অঞ্চল এই নতুন সার্কেলের এলাকাভুক্ত ছিল ঐসব অঞ্চলই নতুন সার্কেলের অর্ন্তভুক্ত হয়। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হলে এই নতুন সার্কেল আবার আগের পূর্ববঙ্গ ও আসাম সার্কেলের সঙ্গে একীভৃত করা হয়। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফিল্ড পোস্ট অফিস স্থাপন করা হয় সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে। ১৯২০ সাল নাগাদ পূর্ববঙ্গ ও আসামে ডাকঘরের সংখ্যা ও সেবা উভয়দিক থেকে তাৎপর্য অগ্রগতি সাধিত হয়। ১৯২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি চিঠিপত্রে মাশুল দেয়ার কাজে দ্রুততা আনার লক্ষ্যে মিটার ফ্র্যাঙ্কিং-এর মাধ্যমে ডাকমাশুল প্রদানের ব্যবস্থা চালু হয়। ১৯৩০-এর দশক ছিল বিমানে ডাক পরিবহণের যুগ। ১৯৩৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা-কলকাতার মধ্যে বিমানে ডাক পরিবহণ শুরু হয়। একই দিনে চট্টগ্রাম হয়ে কলকাতা-রেঙ্গুন রুট চালু করা হয়।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আরম্ভ হলে ডাক বিভাগ ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ ডাক সেন্সর (নিরীক্ষণ) স্টেশন স্থাপন এবং পরে ১৯৪৩ সালের মার্চ মাসে ময়মনসিংহ, ঢাকা ও চাঁদপুরে সেন্সর সাবস্টেশন স্থাপন করা হয়। ১৯৪২ সালের মে মাসে পূর্ববাংলার প্রথম ফিল্ড পোস্ট অফিস স্থাপিত হয় যশোর জেলার ঝিকরগাছায় সেনাবাহিনীর সহায়তার জন্যে। পরে আসাম, আরাকান ও বার্মায় যুদ্ধরত সেনা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার লক্ষ্যে আরও অনেক ফিল্ড পোস্ট অফিস স্থাপন করা হয়। এই সময় নিয়মিত ডাকসেবা বিঘ্নিত হলে বিভিন্ন অঞ্চলের ডাক কর্মীরা ফিল্ড পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ডাক সেবায় সহযোগিতা প্রদান করে। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষে ফিল্ড পোস্ট অফিসগুলি গুটিয়ে ফেলে আরও উন্নত স্থানে অবস্থিত ডাকঘরের সঙ্গে একীভৃত করা হয়।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষ পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত করা হয়। এতে বাংলাও বিভক্ত হয়ে যায় এবং অবিভক্ত বাংলার পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা নিয়ে পূর্ববাংলা প্রদেশ গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে সাবেক বাংলা ও আসাম সার্কেলের একটি এলাকা (সিলেট) নিয়ে নতুন পূর্ববাংলা সার্কেল গঠন করা হয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক অভিবাসনের কারণে নবগঠিত এই সার্কেলে জনশক্তি, সহায়ক যন্ত্রপাতি এবং ডাকটিকিট ও ডাক সামগ্রীর চরম অভাব দেখা দেয়। কোন কোন ক্ষেত্রে চিঠিপত্র বিলি না হয়ে কয়েক মাস পড়ে থাকে।
ব্রিটিশ ভারতে মুদ্রিত ডাকটিকিট এবং অফিসে ব্যবহূত অন্যান্য কাগজপত্র ভারতের নাসিক, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনায় পাকিস্তান শব্দটি মুদ্রণ করা হয়, যাতে এগুলি পূর্ববাংলায় ব্যবহার করা যায়। ১৯৪৮ সালের ৯ জুলাই তারিখে পাকিস্তানের নিজস্ব ডাকটিকিট এবং একই সালের ১৪ আগস্ট নিয়মিত ডাকটিকিট সিরিজ চালু করা হয়। ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে ডাক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। জেলা শহরগুলিতে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ সাব ডাকঘরগুলির উন্নয়ন করে প্রধান ডাকঘরে রূপান্তর করা হয়। ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ডাকটিকিট ও অন্যান্য কাগজপত্র বাংলা হরফে মুদ্রিত হয়। সকল গুরুত্বপূর্ণ ডাকঘর বিশেষ করে প্রধান ডাকঘরগুলিতে ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত নতুন ফ্র্যাঙ্কিং মেশিন সরবরাহ করা হয়। বিমান ডাক পরিবহণের জন্য চালু করা হয় নতুন রুট। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ডাক পরিবহণের জন্য পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস দৈনিক ঢাকা-করাচি-ঢাকা পথে জেট বিমানযোগে ফ্লাইট চালু করে। আন্তর্জাতিক ডাক রুটগুলি পুনর্বিন্যাস করা হয়। ১৯৫৯ সালে ঢাকা খুলনা এবং চট্টগ্রামে নতুন জেনারেল ডাকঘর স্থাপন করা হয়। ১৯৬১ সালে মেট্রিক পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে টাকা-আনা-পাইয়ের পরিবর্তে মুদ্রার নতুন একক নির্ধারণ করা হয়। ১৯৬৩ সালে ঢাকা জেনারেল পোস্ট অফিসের জন্য নতুন কমপ্লেক্স স্থাপন করা হয়। ১৯৬৯ সালে কমলাপুর রেলস্টেশন স্থাপিত হলে রেলওয়ে মেইল সার্ভিস সেখানে স্থানান্তর করা হয়। বিমান ডাকের জন্য একটি পৃথক বাছাই শাখাও খোলা হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং বেশ কয়টি নূতন অভ্যন্তরীণ বিমান রুট চালু হওয়ার ফলে ঢাকা চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সৈয়দপুর এবং বরিশালের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিমান ডাক ব্যবস্থা চালু করা হয়। নতুন ধরনের ফ্র্যাঙ্কিং মেশিন, ডাকটিকিট ও স্টেশনারি মুদ্রণের স্বয়ংক্রিয় মেশিন চালু হওয়ার ফলে ১৯৭০ সাল থেকে ডাক ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়।
রেডিও এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন, প্রাইজবন্ড বিক্রয়, সামরিক পেনশন প্রদান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ডাকঘর করে থাকে। ঢাকা জিপিও-তে ফিলাটেলিক ব্যুরো এবং ২৯টি হেড পোস্ট অফিসে ফিলাটেলিক কাউন্টার খোলা হয়।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার মুজিবনগরে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ৫০টি ফিল্ড পোস্ট অফিস চালুর মাধ্যমে এবং মুক্তিবাহিনীর সার্বিক বা আংশিক পরিচালনায় ডাক ব্যবস্থা চালু করা হয়। ফিল্ড পোস্ট অফিস স্থাপন এবং সেগুলি পরিচালনার জন্যে স্কাউট নিয়োগ করা হয়। মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই তারিখে একইসঙ্গে মুজিবনগর সচিবালয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন এবং লন্ডনস্থ হাউজ অব কমন্স-এ আটটি স্মারক প্রচারণামূলক ডাকটিকিট চালু করে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের পর মুজিবনগর সরকারের ফিল্ড পোস্ট অফিসগুলি বন্ধ করে দেশের স্থায়ী ডাকব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত করা হয়। ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর পাকিস্তান ডাকবিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (স্টাফ ও সংস্থাপন) আবু মোহাম্মদ আহসানউল্লাহকে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক নিয়োগ করা হয়।
বাংলাদেশ উত্তরাধিকারসূত্রে স্বাধীনতা যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত একটি ডাক ব্যবস্থা লাভ করে। কেবল যন্ত্রপাতি বিনষ্ট, ধ্বংস বা ক্ষয়-ক্ষতিই নয়, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরের বছরগুলিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলেরও অভাব দেখা দেয়। ডাকঘর লুণ্ঠন বা পুড়িয়ে দেওয়ার ফলে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা। ১২০টি ডাকঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং ডাক বিভাগের ২০০ জন কর্মচারী-কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। যুদ্ধের পর সম্পূর্ণ ডাকব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করতে হয়।
১৯৭১-৭২ সালে সমগ্র বাংলাদেশে মোট ডাকঘরের সংখ্যা ছিল ৬,৬৬৭টি এবং লোকবল ছিল ২৪,৯৮৩ জন। প্রাথমিক পর্যায়ে ডাকবিভাগকে পূর্ব ও পশ্চিম এই দুইটি প্রশাসনিক সার্কেলে বিভক্ত করা হয়। ১৯৭৯ সাল থেকে সার্কেলগুলি পুনর্বিন্যাস করে কেন্দ্রীয় (ঢাকা), দক্ষিণাঞ্চলীয় (খুলনা), উত্তরাঞ্চলীয় (রাজশাহী) এবং পূর্বাঞ্চলীয় (চট্টগ্রাম)- এই চারটি সার্কেলে বিভক্ত করা হয়। প্রথম দশকে ডাক বিভাগকে আধুনিক ও যান্ত্রিকীকরণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় এবং ১৯৮০ সাল নাগাদ ডাক বিভাগ একটি চিঠি বাছাই করার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, ১৬৩টি স্ট্যাম্প ক্যান্সেলিং যন্ত্র এবং ৮৮টি নতুন ফ্র্যাঙ্কিং যন্ত্র সংগ্রহ করে। ১৯৭৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়নের (ইউপিইউ) সদস্যপদ লাভ করে।
১৯৮০-এর দশকে ডাক বিভাগের উন্নয়নে ক্রমাগত নতুন ডাকঘর স্থাপন ও নতুন সেবা চালুর মাধ্যমে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। ১৯৮৮-৮৯ সালে ডাক বিভাগের চলাচলপথ বা রুটের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯,৮৮৩ কিলোমিটার। ১৯৮৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যারান্টেড এক্সপ্রেস পোস্ট চালু করে জরুরি ডাক বিলির ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে জরুরি ডাক বিলির ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে ডাক বিভাগ এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদার্পণ করে। ১৯৮৮ সালের ৬ ডিসেম্বর ইনটেল পোস্ট-এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক মেইল প্রেরণের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৮৬ সালের ২২ ডিসেম্বর থেকে ডাক কোড ব্যবস্থা চালু হয়। ডাক বিভাগের পুরানো ঐতিহ্য এবং নিদর্শনসমূহ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় একটি পূর্ণাঙ্গ ডাক জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে।
ডাক বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে রাজশাহীতে একটি পোস্টাল একাডেমি স্থাপন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দেশের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বিষয় ও স্মরণীয় ব্যক্তিত্বের স্মরণে ডাকটিকিট এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ঘটনাবলী স্মরণে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে আসছে।
১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ডাকটিকিট ভারতের নাসিক, ইংল্যন্ডের ব্র্যাডবেরি উইলকিনসন, হ্যারিসন অ্যান্ড সন্স, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশার এন্ড কোংসহ স্পেন, অস্ট্রিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন সিকিউরিটি প্রেস থেকে ছাপিয়ে আনা হতো। ১৯৮৯ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের নিজস্ব নিরাপত্তা ছাপাখানা স্থাপনের পর থেকে দেশের সকল ডাকটিকিট ও স্টেশনারি অর্থাৎ খাম, পোস্টকার্ড প্রভৃতি দ্রব্য এখান থেকেই ছাপানো হয়। দেশে ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের উৎসাহিত করার জন্য ১৯৭২ সালেই ডাকবিভাগের আনুকূল্যে ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের একত্রিত করে একটি ডাকটিকিট সংগ্রহক সমিতি গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে আরও দুইটি সংগ্রাহক সমিতি দেশে ফিলাটেলিক কার্যক্রম বেগবান করেছে। ১৯৮৪ এবং ১৯৯২ সালে ডাকবিভাগ জাতীয় ডাকটিকিট প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ১৯৮৪ সালে খুলনায় এবং ১৯৯৫ সালে রাজশাহীতে আঞ্চলিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ডাকবিভাগের নিজস্ব নিয়মিত ডাকটিকিট ও স্মারক ডাকটিকিট ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন আর্থিক ও বিচারিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য জন্য রাজস্ব টিকিট এবং অন্যান্য নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ইত্যাদি মুদ্রণের দায়িত্বও ডাক বিভাগের। ডাক-সেবার ক্ষেত্র ক্রমাগত বিস্তার লাভ করছে এবং এর ফলে বর্তমানে দেশে ডাকঘরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮৮৬টিতে যার গমনপথ হচ্ছে প্রায় ৫০,০০০ কিলোমিটার। বর্তমানে প্রতি ১৩,০০০ জন নাগরিকের জন্য একটি ডাকঘর রয়েছে।
২০০০ সালের ১৬ আগস্ট ডাক বিভাগ ইলেকট্রিনিক মেইল সার্ভিস চালু করে। ই-পোস্ট সার্ভিস নামে এই সেবা বর্তমানে বাংলাদেশের ১৬টি প্রধান পোস্ট অফিসে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে নিজস্ব কোন ই-মেইল ঠিকানা বাদেও পোস্ট অফিসের ই-মেইল ব্যবহার করে যে কোন মানুষ অতি দ্রুত ছবি কিংবা ডকুমেন্টস এবং খবরাদি পাঠাতে পারে। ২০১০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ডাকবিভাগ ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস চালু করেছে, যার মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে স্বল্প খরচে অতিদ্রুত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টাকা পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেশের ১১৫০টি পোস্ট অফিসে এই সেবা চালু আছে।
ডাকবিভাগের এক্সপ্রেস মেইল সার্ভিসের (ইএমএস) মাধ্যমে ২০ গ্রাম থেকে ২০ কেজি ওজনের চিঠিপত্র, ডকুমেন্টস এবং জিনিসপত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্বের প্রায় ৪৩টি দেশের পাঠানো সম্ভব হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ট্রেকিং পদ্ধতির মাধ্যমে পাঠানো জিনিসের গতিপথ জানাও সম্ভব হচ্ছে। এর বাইরে ডাকঘর পোস্টাল লাইফ ইন্সুরেন্স, ইনডাউমেন্ট ইন্সুরেন্স এবং ব্যাংকিং সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা উপকরণ সহজলভ্য করতে ডাকবিভাগ ব্রেইল উপকরণের ক্ষেত্রে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ মওকুফ করেছে। [ইসতিয়াক আহমেদ খান]