গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড
গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড ষোল শতকে সুলতান শেরশাহ কর্তৃক নির্মিত বাংলার সোনারগাঁও থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত সুদীর্ঘ সড়ক।
এ দীর্ঘ সড়ক পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রশাসনিক কাজে গতি সৃষ্টি করা। এ ছাড়া, প্রতিরক্ষার কৌশলগত দিক সামনে রেখে সমগ্র সাম্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নিতবিধানও এর লক্ষ্য ছিল। এর মাধ্যমে রাজধানী আগ্রার সঙ্গে সাম্রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলকে যুক্ত করা হয়েছিল। মূল পরিকল্পনায় রাজধানী আগ্রাকে পূর্বে সোনারগাঁও, পশ্চিমে দিল্লি ও লাহোর হয়ে মূলতান, দক্ষিণে বোরহানপুর এবং দক্ষিণপশ্চিমে যোধপুরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল। সামরিক সুবিধার পাশাপাশি বাণিজ্যিক উন্নতি, ডাক-যোগাযোগে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সে সঙ্গে কঠোর গুপ্তচর প্রথার মাধ্যমে সাম্রাজ্যের তথ্যাদি সংগ্রহ করাও সুলতানের উদ্দেশ্য ছিল।
‘সড়ক-ই-আজম’ নামে পরিচিত এ সড়ককে ঘিরে আরও কিছু কর্মতৎপরতার প্রমাণ মেলে। সরকারি কর্মকর্তাদের যাতায়াত সুবিধা প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ও জনসাধারণের বিশ্রামের জন্য রাস্তার উভয়পার্শ্বে দু’ক্রোশ অন্তর অন্তর বিশ্রামাগার ও সরাইখানা নির্মিত হয়। সরাইখানাগুলিতে খাবার ও উন্নত আবাসিক সুবিধার ব্যবস্থা ছিল। রাস্তার পার্শ্বে ছায়াদানকারী বৃক্ষও রোপণ করা হয়।
ব্রিটিশ আমলে সৈন্য চলাচলের সুবিধা এবং ডাক বিভাগের উন্নতির উদ্দেশ্যে সড়কটির সংস্কার করে কলকাতা থেকে পেশওয়ার পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয়। এ সময়ই সড়কটির নাম দেওয়া হয় ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড’।
কলকাতা থেকে ব্যারাকপুর পর্যন্ত গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের অংশটি পাকা হলেও জববলপুর থেকে এলাহাবাদ হয়ে দিল্লি পর্যন্ত কতকগুলি বিচ্ছিন্ন সড়ক ছিল। অবশ্য এ সময় গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের প্রধান প্রধান অংশ বিভিন্ন প্রেসিডেন্সির সামরিক বিভাগের শাসনাধীন ছিল। ১৮৩৯ সালের সংস্কার পরিকল্পনায় বাংলাদেশে ও উত্তর ভারতের অন্তর্ভুক্ত সড়কের অংশ কলকাতা সামরিক বিভাগের উপর ন্যস্ত হয়। এ সময় রাস্তাটির প্রায় ৩৭৭ কিমি পাকা করা হয়। অবশেষে ১৮৪৮ সালে লর্ড ডালহৌসীর শাসনামলে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়। [মোঃ মুক্তাদির আরিফ মোজাম্মেল]