টাকেরঘাট টিলাসারি
টাকেরঘাট টিলাসারি (Takerghat Hillocks) ক্ষুদ্রাকৃতির অনুচ্চ পাহাড়সারি। সুনামগঞ্জ জেলার টাকেরঘাটে অবস্থিত এ টিলাসারি গড় সমুদ্র সমতল থেকে সর্বোচ্চ ২২ মিটার উঁচু। তুরা স্তরসমষ্টি ও সিলেট চুনাপাথর স্তরসমষ্টির অন্তর্গত প্যালিওজিন পলল দ্বারা এ সকল টিলা গঠিত। টাকেরঘাটের চারটি টিলা তুরা বেলেপাথর দ্বারা গঠিত হলেও এ গঠনের উপরিভাগ পলল দ্বারা আচ্ছাদিত। পর্যায়ক্রমে অবস্থিত শ্বেত, গোলাপি ও বাদামি বর্ণবিশিষ্ট সূক্ষ্ম থেকে মোটা দানাদার ও তির্যকভাবে স্তরায়িত সুবিস্তৃত বেলেপাথর; হাল্কা ধূসর, কালো ধূসর কর্দমশিলা (shales), কাদাপাথর (mudstone) এবং অঙ্গারময় পদার্থের ফালি (streaks) দ্বারা এ এলাকার তুরা স্তরসমষ্টি গঠিত। বাংলাদেশে সিলেট চুনাপাথরের উদ্ভেদ (outcrops) শিলং মালভূমির দক্ষিণ পাড় বরাবর বিদ্যমান ডাউকি চ্যুতি অঞ্চলে পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত সরু ফালিতে সীমাবদ্ধ। সুনামগঞ্জ জেলার বাগালীবাজারের সন্নিকটে অবস্থিত টাকেরঘাট-লালঘাট-ভাঙ্গারঘাট এলাকায় ডাউকি নালার তীরে অনাবৃত চুনাপাথর দেখতে পাওয়া যায়। ১৯৬১ সালে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব পাকিস্তান টাকেরঘাট টিলাসারিতে দক্ষিণমুখী নিমজ্জিত চুনাপাথর উদ্ভেদ পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি খনন কর্মসূচি গ্রহণ করে। একই সময় একটি বেসরকারি চুনাপাথর উত্তোলন সংস্থা এ এলাকায় চুনাপাথর উত্তোলন শুরু করে। ১৯৬৫ সালে ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন চুনাপাথর উত্তোলনের দায়িত্ব গ্রহণ করলে উল্লিখিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত চুনাপাথর উত্তোলনের মোট পরিমাণ ছিল ৩,৭৫,০০০ টন। কিন্তু পরবর্তীতে উত্তোলন হ্রাস পেতে থাকলে ১৯৮০ সাল নাগাদ বার্ষিক উত্তোলনের পরিমাণ ৬০,০০০ টন-এ এসে দাঁড়ায়। উত্তোলনের পুরোভাগই ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে সরবরাহ করা হতো। চ্যুতির কারণে টাকেরঘাট টিলাসারির চুনাপাথর সঞ্চয়নের পুরুত্বে উল্লেখযোগ্য তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৫০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত চুনাপাথরের অনুমিত মজুতের পরিমাণ প্রায় ১৪ মিলিয়ন টন। লালঘাট ও টাকেরঘাটের মধ্যবর্তী স্থানে পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত প্রবীণ ইয়োসিন সময়ের লিগনাইট থেকে সাব-বিটুমিনাস জাতীয় কয়লার কয়েকটি স্তরও পাওয়া গিয়েছে। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]