লিগনাইট
লিগনাইট (Lignite) তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক কালের কয়লা। বাদামি কালচে অপিন্ডীভূত (non-agglomerating) নিচুস্তরের এই কয়লায় কাষ্ঠ দ্রব্যের পরিমাণ প্রচুর। কয়লার শ্রেণিবিন্যাসে এটি পিট ও বিটুমিনাস কয়লার মাঝামাঝি, বাদামি কয়লা নামেও এটি পরিচিত। লিগনাইট কয়লা দীর্ঘ ধোঁয়াটে শিখায় দ্রুত জ্বলে ওঠে। আর্দ্রতা ও খনিজ পদার্থমুক্ত অবস্থায় এই কয়লার তাপ সঞ্চালনের পরিমাণ ৮,৩০০ বিটিইউ/পাউন্ডের নিচে। লিগনাইট দুটি ভাগে বিভক্ত লিগনাইট-এ এবং লিগনাইট-বি। লিগনাইট-এ-এর তাপ বিকীরণের পরিমাণ ৬,৩০০ থেকে ৮,৩০০ বিটিইউ/পাউন্ড। লিগনাইট-বি-এর তাপ বিকীরণের ক্ষমতা ৬,৩০০ বিটিইউ/পাউন্ডের কম। লিগনাইটের গড় উপাদানের মধ্যে রয়েছে: আর্দ্রতা ৩১.০৬-৩৬.০%, ছাই ৭.৪১-৭.৪৫%, উদ্বায়ী পদার্থ ৪৫.৩-৫৬.৭১% এবং সুস্থিত কার্বন ৪৩.৩৯-৫৪.৩৯%। বিশ্বের অন্যত্র মেসোজোয়িক ও টারশিয়ারী শিলায় লিগনাইট স্তরের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এই উপমহাদেশে এটি প্রধানত টারশিয়ারী শিলায় মজুত থাকে।
বাংলাদেশে বান্দরবান জেলার লামাকাটা ও বান্দরবানে, চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ায় ও সিলেট জেলার লুবাছড়ায় লিগনাইট পাওয়া যায়। এ সব অঞ্চলের লিগনাইট স্তরীভূত অবস্থায় বিদ্যমান। এছাড়া লিগনাইটের লেন্স ও ক্ষুদ্র স্তর বাংলাদেশের ডুপি টিলা, টিপাম, বোকা বিল, ভূবন, কোপিলি এবং তুরা স্তরসমষ্টির বেলেপাথরে দেখতে পাওয়া যায়। সুনামগঞ্জ জেলার টাকেরঘাট-ভাঙ্গেরঘাট অঞ্চলের ভূগর্ভে লিগনো-বিটুমিনাস কয়লা বিদ্যমান রয়েছে। এসব অঞ্চলের ৩.০৪৮ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ৩০ লক্ষ টন লিগনো-বিটুমিনাস কয়লা মজুত রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বিদ্যমান লিগনাইটের অর্থনৈতিক মূল্য নেই বললেই চলে।
লিগনাইট কর্দমশিলা (Lignite shale) এটি গাঢ় ধূসর অথবা কৃষ্ণবর্ণের শিলা। এতে রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণিকা বা পাতের আকারে উলেখযোগ্য পরিমাণ অঙ্গারীবস্ত্ত। এই পাথুরে কয়লায় লিগনাইট পদার্থ সাধারণত ৪০ শতাংশের কম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান গঠনের (বরাইল) নিম্ন অংশের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চিত্র হলো লিগনাইট কর্দমশিলা। লিগনাইট কর্দমশিলা নরম এবং এটি পালাক্রমে বেলেপাথর ও কর্দমশিলার মধ্যে পাওয়া যায়। এই কর্দমশিলা স্তরিত অবস্থায় থাকে, ভাঙলে পাতলা পাতের আকার ধারণ করে এবং এতে উদ্ভিজ্জ বস্ত্ত দেখা যায়। [মোঃ নিহাল উদ্দিন]