জাহানিয়া মসজিদ
জাহানিয়া মসজিদ গৌড়ে বিদ্যমান সুলতানি আমলের সর্বশেষ নিদর্শন। এ মসজিদকে আবার জন জন মিয়ার মসজিদ বা ‘ঝনঝনিয়া মসজিদ’ও বলা হয়ে থাকে। দরজার উপরের একটি শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, ১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ এর পুত্র সুলতান গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহ এর শাসনামলে রাজদরবারের সাথে সম্পৃক্ত বিবি মালতি এটি নির্মাণ করেন। ‘জাহানিয়া মসজিদ’ নামটি সচারাচর অপরিচিত। মনে করা হয় যে, নামটি জাহানিয়া জাহানগাস্ত নামক সুফির নামেরই অপভ্রংশ।
ইমারতটি সুফি শেখ অাঁখি সিরাজউদ্দীন উসমান এর সমাধির কিছুটা দক্ষিণে, গৌড় লখনৌতির ভারতীয় অংশের সাগর দিঘির উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ইমারতটি ইটের তৈরি। এর বাইরের দিকের পরিমাপ ১৭.৫ মি × ১২.৮ মি এবং ভেতরের দিকের পরিমাপ ১২.২০ মি × ৮ মি। মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশ দুটি ‘আইলে’ বিভক্ত, যার প্রতিটিতে তিনটি বর্গাকার ‘বে’ রয়েছে, যা প্রস্তর স্তম্ভের উপর স্থাপিত গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। মসজিদের পূর্বদিকে তিনটি প্রবেশপথ এবং কোণগুলিতে অষ্টভুজাকৃতি মিনার, সূচ্যগ্র ছোট বুরুজ সঙ্গে সূক্ষ্ম অগ্রভাগ সমেত নির্মিত হয়েছে যা পরবর্তী সময়ে মুগলীকরণের প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত। উপরের মোল্ডিং করা বক্র কার্নিস বাংলা কুঁড়েঘরের সাদৃশ্য বহন করছে।
ইমারতের দেয়াল অনুভূমিকভাবে ‘ইনসেট’ ও ‘অফসেট’ প্যানেল করা নকশায় বিন্যস্ত, এগুলিকে উল্লম্ব প্যাঁচানো রশির নকশা দ্বারা বিভক্ত করা হয়েছে। সুস্পষ্টভাবে এরূপ নকশা প্রথম চিকা ভবন এ ওদাখিল দরওয়াজা এর কোণার বুরুজগুলিতে এবং পুরাপুরিভাবে কদম রসুল ইমারতে দেখা যায়। এ ইমারত ও কদম রসুল একটি বিশেষ শ্রেণি গঠন করেছে, যা তাদের বৈশিষ্ট্যের জন্য গৌড়ের অন্যান্য স্থাপত্য নিদর্শন থেকে পৃথক। [এ.বি.এম হোসেন]