চিকা ভবন
চিকা ভবন গৌড় দুর্গ-নগরীর অভ্যন্তরে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। এটি পূর্বদিকে গোমতি তোরণের সঙ্গে এক রেখায় নির্মিত। মেরামতের পূর্বে এর অভ্যন্তরভাগে ঝাঁকে ঝাঁকে বাদুরের অবস্থানের কারণে ভবনটির এরূপ নামকরণ হয়েছে। বর্গাকার নকশার এ ইমারত পান্ডুয়ার একলাখী সমাধিসৌধ এর অনুরূপ রীতিতে নির্মিত। আলেকজান্ডার কানিংহাম এ এলাকায় ব্যাপক জরিপকার্য পরিচালনা করেন (Archaeological Survey of India, XV, Calcutta, 1882)। কানিংহামসহ প্রথম দিকের তথ্যানুসন্ধানীরা একলাখী সমাধিসৌধের সঙ্গে নির্মাণরীতির সাদৃশ্যের কারণে চিকা প্রাসাদকে রাজাগণেশ এর বংশের শাসনপরবর্তী নতুন সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহ এর (১৪৩৫-৩৬ - ১৪৫৯-৫৯ খ্রি.) সমাধিসৌধ বলে মনে করেছিলেন। ভবনটির সামনের দিকে একটি দরদালানের অবস্থান এ মতকে নাকচ করে দেয়। পক্ষান্তরে এটি একটি দফতরখানা বা অফিস ভবন হিসেবে নির্মিত হয়েছিল বলে প্রচলিত বিশ্বাসকে প্রমাণ করে।
একলাখী সমাধিসৌধ এর তুলনায় এটি খুবই অনাড়ম্বর এবং এর পাশের অন্যান্য ইমারতের ধ্বংসাবশেষ থেকে দ্বিতীয় ধারণাটিই বেশি সমীচীন বলে মনে হয়। ভবনটির পশ্চিম দিকে স্তম্ভের দীর্ঘ সারির অস্তিত্ব থেকে এখানে একটি অশ্বশালা ছিল বলে ধারণা করা যায়। সুলতানের প্রশাসনিক কার্যালয়ের অংশ এবং গৌড় দুর্গ-নগরীর গোমতি তোরণের সঙ্গে এক রেখায় নির্মিত চিকাভবন খুব সম্ভবত দুর্গ-নগরী ও দুর্গের ফটকের নির্মাতা নাসিরুদ্দীন মাহমুদ শাহ কর্তৃক নির্মিত হয়ে থাকবে।
চিকা প্রাসাদটি একটি বর্গাকার ইমারত। অভ্যন্তরভাগে এর প্রতিটি দিকের পরিমাপ ১২.৮০ মিটার; বহির্ভাগে ২১.৬৫ মিটার এবং দেয়াল ৪.৫২ মিটার পুরু। গৌড়- লখনৌতির ভবনগুলির মধ্যে এর দেয়াল সবচেয়ে পুরু। গোলাকার আকৃতির গম্বুজটি স্কুইঞ্চ-এর উপর স্থাপিত। ভবনটির বাইরের দিকের প্রাচীর খাড়া ইনসেট ও অফসেট প্যানেল দ্বারা অলংকৃত। কোণের গোলাকার বুরুজসহ সমগ্র দেয়ালগাত্রে সম্প্রসারিত দড়ির ছাঁচ নকশা দ্বারা এ প্যানেলগুলি বিভক্ত। কার্নিশটি বক্র এবং একসময় এটি টালির কাজ দ্বারা সুসজ্জিত ছিল। ভবনটির অভ্যন্তরে এবং খিলানসমূহের ত্রিকোণাকার অংশে পদ্মাকৃতি নকশার আকারে টালি সজ্জার অবশেষ এখনও পরিদৃষ্ট হয়। [এ.বি.এম হোসাইন]