জসরত খান
জসরত খান ১৭৫৫ থেকে ১৭৬২/৬৩ এবং ১৭৬৫ থেকে ১৭৭৮ সাল পর্যন্ত দু‘দফায় ঢাকার নায়েব নাজিম ছিলেন। ১৭৫৫ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বীয় ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা নওয়াজিস মুহম্মদ খানের মৃত্যুর পর আলীবর্দী খান তাঁকে নিয়োগ দান করেন। পারস্যের কৌম থেকে আগত জসরত খান নিজেকে হজরত আলী (রা)এর বংশধর বলে দাবি করতেন। জসরত খান ঢাকার শিয়াদের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর (ঢাকা), ইসলামাবাদ (চট্টগ্রাম), রওশনাবাদ (কুমিল্লা) ও জালালাবাদ (সিলেট) বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি এমন এক সংকটময় সময়ে ঢাকার নায়েব নাজিম ছিলেন যখন পলাশীর যুদ্ধ এর পর বাংলায় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছিল।
১৭৫৬-৫৭ সালে সিরাজউদ্দৌলা এর সঙ্গে ইংরেজদের বিরোধ চলাকালে নওয়াব ঢাকা কুঠিরের ইংরেজদের বন্দি করার জন্য এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে লব্ধ সম্পদ রাজা মোহনলালের নিকট পাঠাতে জসরত খানকে নির্দেশ দেন। এতে হতবিহবল জসরত খান নওয়াবের আদেশকে নিষ্ঠুর বিবেচনা করে ইংরেজদের সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নেন।
কোম্পানির ঢাকাস্থ এজেন্ট মি. বেচার জসরত খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি ও তার লোকজন নওয়াবের বিরুদ্ধে কোনো শত্রুতামূলক কাজে লিপ্ত হবেন না। ইংরেজদের পূর্ণ নিরাপত্তাসহ তাদের ঘর-বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। একই সময়ে জসরত খান নওয়াবকে পত্র লিখে জানান যে, ঢাকায় বসবাসরত ইংরেজগণ শান্তিপ্রিয় এবং তারা যথেষ্ট ধনসম্পদের অধিকারী নয়; কাজেই তাদেরকে হত্যা করা নিষ্ঠুর কাজ হবে এবং তাদের ধনসম্পদও নওয়াবের তেমন কোনো কাজে আসবে না। তার আচরণে স্বভাবতই সিরাজ ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং শুধু পলাশীর বিপর্যয়ের ফলেই জসরত নওয়াবের সম্ভাব্য প্রতিহিংসা থেকে রক্ষা পান।
১৭৬২-৬৩ সাল পর্যন্ত জসরত খান নায়েব নাজিম পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এরপর তিনি মীর কাসিমের সঙ্গে কিছুকাল মুঙ্গেরে অবস্থান করেন। মীর কাসিম ও ইংরেজদের মধ্যে শত্রুতা শুরু হলে মীর কাসিম সিরাজউদ্দৌলার শাসনামলে এবং তার সময়ে ইংরেজদের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শনের অপরাধে জসরত খানকে পদচ্যুত করেন। দ্বিতীয়বার তার নওয়াবি আমলে মীরজাফর মুহম্মদ রেজা খানকে ঢাকার নায়েব নাজিম নিযুক্ত করেন। ঢাকায় দুবছর কাজ করার পর মুহম্মদ রেজা খান ১৭৬৫ সালে বাংলার নায়েব নাজিম পদ গ্রহণের জন্য মুশির্দাবাদে আসেন। ইতঃপূর্বে ইংরেজদের প্রতি জসরত খানের অনুকূল আচরণের জন্য ইংরেজদের সুপারিশে নওয়াব নাজমুদ্দৌলা ১৭৬৫ সালে জসরত খানকে ঢাকার নায়েব নাজিম নিযুক্ত করেন। এসময় রিচার্ড বেচার ঢাকায় কোম্পানির এজেন্ট ছিলেন। জনৈক ডে ঢাকার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর নিযুক্ত হন এবং এখানে একটি দীউয়ানি আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর প্রথম বিচারক ছিলেন ডানকানসন।
জসরত খান ১৭৭৮ সালে তার পৌত্র হাসমত জঙের অনুকূলে স্বেচ্ছায় নায়েব নাজিমের পদ ছেড়ে দেন। তার অবসর ভাতা ৫০০০ টাকা নির্ধারিত হয়। ১৭৮৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। [কে.এম করিম]