জন্মাষ্টমী

জন্মাষ্টমী  হিন্দুদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে এ উৎসব পালিত হয়। প্রচলিত বিশ্বাসমতে দ্বাপর যুগের কোনোও এক শ্রাবণ (মতান্তরে ভাদ্র) মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে  কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। তাই এ দিনটি জন্মাষ্টমী নামে খ্যাত। ভারতের বিভিন্ন স্থানে এদিন নানাবিধ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গদেশে এ দিনে ভক্তরা  উপবাস করে রাত্রিতে কৃষ্ণপূজা করে। ঢাকায় এ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য মিছিল বের হয়।

জন্মাষ্টমীর মিছিল

যতদূর জানা যায়, ঢাকার জন্মাষ্টমী মিছিলের গোড়াপত্তন হয় ১৫৫৫ সালে বংশালের এক সাধুর নেতৃত্বে। তখন এর নাম ছিল ‘শ্রীশ্রী রাধাষ্টমী’। পরে তিনি স্থানীয় প্রশাসনের নিকট থেকে কৃষ্ণের জন্মোপলক্ষে অপেক্ষাকৃত জাঁকজমকের সঙ্গে একটি মিছিল করার অনুমতি লাভ করেন। ১৫৬৫ সালে প্রথম ব্যাপকভাবে জন্মাষ্টমী মিছিল বের হয় এবং তখন থেকে এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব অর্পিত হয় নবাবপুরেরর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী কৃষ্ণদাস বসাকের পরিবারের ওপর। ১৭২৫ সাল থেকে ইসলামপুরের ব্যবসায়ী গদাধর ও বলাইচাঁদ বসাকের নেতৃত্বে আরও একটি মিছিল বের হতে থাকে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার দুদিনে দুপক্ষের মিছিল বের করার আইন করে দেয়। ঢাকার এ মিছিল এক সময় এত প্রসিদ্ধ ছিল যে, দেশবিদেশের বহুলোক তা দেখতে আসত।


ব্রিটিশ শাসনামলে জন্মাষ্টমী মিছিলে হিন্দু-মুসলিম সকলেই অংশগ্রহণ করত। মিছিলে শ্রীকৃষ্ণের জীবনকাহিনী নৃত্য-গীতের মাধ্যমে তুলে ধরা হতো। বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীও চিত্র আকারে এবং সঙ সেজে দেখানো হতো। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর মিছিলের পৃষ্ঠপোষকসহ অনেক হিন্দু ভারতে চলে গেলে এবং পাকিস্তান সরকারের বিবিধ আইন ও একটি মিছিলে মুসলমানদের হামলার ফলে মিছিল বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার ও জনগণের সহযোগিতায় জন্মাষ্টমী মিছিল পুনরায় শুরু হয়। বর্তমানে প্রতি বছর ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মিছিল বের হয় এবং শহর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মন্দিরে এসে শেষ হয়। এ দিন সরকারি ছুটি থাকে এবং সমগ্র দেশব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ধর্মীয় আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে। সংবাদপত্রসমূহে কৃষ্ণের আদর্শ ও জনহিতকর কর্মকান্ড সম্পর্কে বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। রেডিও-টেলিভিশন এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে।

কৃষ্ণভক্তদের বিশ্বাস, জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করলে সব পাপমোচন ও প্রভূত পুণ্য অর্জিত হয়; এ ব্রত যারা নিয়মিত পালন করে তাদের সন্তান, সৌভাগ্য ও আরোগ্য লাভ হয় এবং পরকালে বৈকুণ্ঠ প্রাপ্তি ঘটে। কোনো কোনো অঞ্চলে এ জন্মাষ্টমী ‘গোকুলাষ্টমী’ নামেও খ্যাত।  [দুলাল ভৌমিক]