উপবাস
উপবাস হিন্দুদের আচার বিশেষ। সামাজিক বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য খাদ্য গ্রহণ না করাকেই বলে উপবাস। বিবাহ, পূজার্চনা এবং বিভিন্ন ব্রত উপলক্ষে উপবাস পালন করা হয়। সাধনক্ষেত্রে ইন্দ্রিয় সংযম অত্যাবশ্যক কর্ম, আর এ জন্য উপবাস একটি প্রধান উপায়। উপবাস শব্দটির মধ্যে দুটি বিষয়ের দ্যোতনা আছে; একটি হলো খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং অপরটি কায়মনোবাক্যে ইষ্টদেবতার সান্নিধ্য অনুভব করা।
দেহ-মনকে সুস্থ ও নীরোগ রাখার জন্যও অনেকে নিয়মিত সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক উপবাস পালন করেন। তাঁদের ক্ষেত্রে দৈহিক ব্যাপারটিই প্রধান, মানসিক সংযম সেখানে গৌণ। অপরদিকে যাঁরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উপবাস পালন করেন তাঁরা দেহ-মন উভয় দিক থেকেই সংযত হয়ে থাকেন। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ এগুলি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও উপবাস বিশেষ ভূমিকা রাখে। উপবাস দ্বারা সংযমী সাধক মন, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা দিয়ে আরাধ্য দেব-দেবীর সান্নিধ্য অনুভব করেন এবং এর মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করেন। তাই আত্মিক ভাবনায় ঋদ্ধ ব্যক্তিগণ দেহ ও মন উভয় সুস্থ রাখার জন্য সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে, একাদশী তিথিতে অথবা অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে উপবাস পালন করেন। এ ছাড়া বিশেষ পূজা-অর্চনাদির সময়ও ভক্তগণ উপবাস পালন করেন। যেমন সরস্বতী পূজা উপলক্ষে হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীরা উপবাস পালন করে।
ব্যক্তিবিশেষের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী উপবাসের প্রকৃতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যদি কেউ পূর্ণ একটা তিথি (প্রায় চবিবশ ঘণ্টা) উপবাস থাকতে না পারেন তাহলে তিনি স্বাভাবিক আহারের পরিবর্তে কিঞ্চিৎ লঘুখাদ্য গ্রহণ করতে পারেন। আবার কেউ কেউ উপবাসের সময় পানীয় পর্যন্ত গ্রহণ করেন না। বহু সাধক-মহাপুরুষের জীবনে ক্রমাগত দুই, তিন, চার, পাঁচদিন ব্যাপী উপবাসের কাহিনীও জানা যায়। স্বাভাবিক উপবাস দেহ ও মনকে সুস্থ ও পবিত্র রাখে। [পরেশচন্দ্র মন্ডল]
আরও দেখুন অনশন।