চৈত্রসংক্রান্তি মেলা
চৈত্রসংক্রান্তি মেলা লোকউৎসব বিশেষ। প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব এটি। বাংলা সনের শেষ দিনটিকে বলা হয় সংক্রান্তি। শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এই দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মকে পুণ্যজনক বলে মনে করা হয়। চৈত্রসংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক। এর সঙ্গে চলে গাজনের মেলা। গোটা চৈত্রমাস জুড়ে উপবাস, ভিক্ষান্নভোজন প্রভৃতি নিয়ম পালন করার পর সংক্রান্তির দিন সন্ন্যাসীরা বা সাধারণ লোকেরা শূলফোঁড়া, বাণফোঁড়া ও বড়শিগাঁথা অবস্থায় চড়কগাছে (উঁচু করে পোঁতা কাঠে) ঘোরা, আগুনে হাঁটা প্রভৃতি সব ভয়ঙ্কর ও কষ্টসাধ্য দৈহিক কলা-কৌশল দেখায়। অবশ্য বর্তমানে এ ধরনের খেলা অনেক কমে এসেছে।
দীর্ঘকাল আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বহু স্থানে এ উপলক্ষে মেলা বসে। বাংলাদেশের হিন্দুপ্রধান অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এতে বাঁশ, বেত, প্লাস্টিক, মাটি ও ধাতুর তৈরি বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র ও খেলনা, বিভিন্ন রকম ফল-ফলাদি ও মিষ্টি ক্রয়-বিক্রয় হয় এবং বায়োস্কোপ, সার্কাস, পুতুলনাচ, ঘুড়ি ওড়ানো ইত্যাদি চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা থাকে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল ইত্যাদি অঞ্চলে এই মেলা বসে। অঞ্চলভেদে ৩-৪ দিন ধরে এই মেলা চলে। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলা নামে এই মেলার আয়োজন করা হয়।
অতীতে মেলা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থরা নাতি-নাতনিসহ মেয়ে-জামাইকে সমাদর করে বাড়ি নিয়ে আসত। সম্পন্ন গৃহস্থরা সকলকে নতুন জামাকাপড় দিত এবং উন্নতমানের খাওয়া-দাওয়ারও আয়োজন করত। মেলার কয়েকদিন এভাবে তারা সকলে মিলে আনন্দ উপভোগ করত। বর্তমানে দারিদ্র্য ও শহুরে সভ্যতার ছোঁয়া লাগায় আবহমান গ্রামবাংলার সেই আনন্দমুখর পরিবেশ আর আগের মতো নেই, অনেকটাই বদলে গেছে। [অঞ্জলিকা মুখোপাধ্যায়]
আরও দেখুন গাজন ।