চৈতন্য নার্সারি
চৈতন্য নার্সারি (Chaitanya Nursery) উদ্যানবিদ ঈশ্বরচন্দ্র গুহ (১২৬৫-১৩০০ বঙ্গাব্দ) কর্তৃক ১৮৯৪ সালে জামালপুর শহরের বোসপাড়ায় ৪৫ বিঘা জমিতে প্রতিষ্ঠিত একটি কৃষি নার্সারি। পিতা চৈতন্য গুহর স্মারক হিসেবেই প্রতিষ্ঠানের নামকরণ। এটি ছিল একাধারে নার্সারি, পরীক্ষামূলক কৃষিখামার এবং বৈজ্ঞানিক চাষপ্রথা প্রবর্তন ও বিদেশি উদ্ভিদ প্রজাতিকে দেশিয় পরিবেশে অভ্যস্ত করানোর পরীক্ষাগার। এতে ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত অর্থকরী ও শোভাকর উভয় ধরনের উদ্ভিদের বিরাট সংগ্রহ। এখানকার আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন ইত্যাদি সবজির উন্নত জাত ও উন্নতমানের চাষ সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ঈশ্বরচন্দ্র এদেশে কর্পূর চাষের পথিকৃৎ ছিলেন। চৈতন্য নার্সারিতে যেসব বিদেশি গাছপালা এদেশের জলবায়ুতে চাষের চেষ্টা চলেছিল সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্যাকুয়া, অ্যাজালিয়া, আমাজন লিলি, আফ্রিকার অয়েলপাম, জাপানি তুঁত, গোলমরিচ, ছোট এলাচ, দারুচিনি, কফি, ডবল-নারিকেল ইত্যাদি। এ নার্সারির তালিকায় বিক্রেয় ৪,৬৮৮ জাতের গাছগাছড়ার নামের উল্লেখ আছে। ১৩২২ বঙ্গাব্দে ঢাকার তাঁতীবাজারে নার্সারির একটি শাখা খোলা হয়েছিল। বীজ, কন্দ, চারা, কলম ছাড়াও এখানে বিক্রি হতো তাজা ফুল, ফুলের তোড়া, কীটনাশক, সার, হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর ঔষধপত্র। অধিকন্তু, নানা ধরনের বাগানের নকশা এবং সেগুলি নির্মাণের ব্যবস্থাও এখানে ছিল। ১৯২০ সাল পর্যন্ত নার্সারির ব্যবসা ভালই চলছিল। শুধু আমদানি নয়, বিদেশে যথেষ্ট রপ্তানিও হতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব বাজারে মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে নার্সারির ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৩৩০ বঙ্গাব্দে ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যুর পর নার্সারিরও বিলুপ্তি ঘটে। [দ্বিজেন শর্মা]