চারঘাট উপজেলা

চারঘাট উপজেলা (রাজশাহী জেলা)  আয়তন: ১৬৪.৫০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৪´ থেকে ২৪°২২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৬´ থেকে ৮৮°৫২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পুঠিয়া ও পবা উপজেলা, দক্ষিণে বাঘা উপজেলা, পূর্বে বাঘাতিপাড়া ও বাঘা উপজেলা, পশ্চিমে পবা উপজেলা  ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ।

জনসংখ্যা ২০৬৭৮৮; পুরুষ ১০৪১৩৮, মহিলা ১০২৬৫০। মুসলিম ১৯৮১৩৮, হিন্দু ৮৩৪৫, বৌদ্ধ ৪, খ্রিস্টান ৮০ এবং অন্যান্য ২২১। এ উপজেলায় সাঁওতাল  আদিবাসীদের বসবাস রয়েছে।

জলাশয় পদ্মা ও বড়াল নদী এবং সালুয়ার বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন চারঘাট থানা গঠিত হয় ১৯১৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৮৪ ১১৫ ৩৮৪০৯ ১৬৮৩৭৯ ১২৫৭ ৬২.১ ৪৪.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৮.৭২ ২০ ৩৮৪০৯ ২০৫২ ৬২.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
ইউসুফপুর ৪৭ ৪৫৯৩ ১৬৩৪৩ ১৬২২৬ ৪৩.৬
চারঘাট ৩৯ ৫০৭৯ ১০৫৪৯ ১০৫১৫ ৪৭.১
নিমপাড়া ৭১ ৯১৩৬ ১৭৮৫৭ ১৭৯১১ ৪৮.১
ভায়া লক্ষীপুর ৩১ ৬৬৪০ ১৪৬৩৩ ১৪৩০৩ ৪৬.৮
সালুয়া ৮৭ ৬৩৮০ ১৫১৩১ ১৫০৯৫ ৩৯.০
সারদা ৯৪ ৪১৯৩ ৯৭৬৫ ১০০৫১ ৪০.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ সারদা পুলিশ একাডেমী ও রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে বেলপুকুর ব্রিজের (পুঠিয়া) নিকট বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা সহ ক্যাডেট কলেজের অধ্যাপক এ. বি. সিদ্দিকী শহীদ হন। একই দিনে নগর বাড়ি অতিক্রমরত পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হন চারঘাটের আনসার বাহিনীর সদস্য মজের আলি। পাকসেনারা চারঘাটের প্রবেশমুখে বানেশ্বরে নাদের চেয়ারম্যানকে এবং সারদা বাজারে আনসার বাহিনীর সদস্য রইস উদ্দীনকে হত্যা করে। তারা পদ্মার তীর পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান কয়েকশত নিরস্ত্র মানুষকে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে এবং চারঘাট বাজার পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, ক্যাডেট কলেজ, সারদা পাইলট স্কুল, রায় সাহেবের ইটভাটা প্রভৃতি স্থানে অস্থায়ী সেনাছাউনিতে মুক্তিযোদ্ধা এবং নারীদের নির্যাতন করা হতো। উপজেলার ২টি স্থানে (রায় সাহেবের ইটভাটা ও লাদাড়া গ্রামের উত্তর পাশে সি এন্ড বি এর ইটের ভাটার উত্তর পশ্চিম কোণ) গণকবর এবং ১টি স্থানে বধ্যভূমি রয়েছে; সারদা পুলিশ একাডেমিতে ১টি ভাস্কর্য ১ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন চারঘাট উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৪১, মন্দির ৩০ ও গীর্জা ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৭.৭%; পুরুষ ৫০.০%, মহিলা ৪৫.৪%। কলেজ ১৩, পুলিশ ট্রেনিং কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬৮, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১, মাদ্রাসা ১২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পুলিশ একাডেমি, সারদা (১৯১২), রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ (১৯৬৫), ইউসুফপুর কৃষি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৫), সারদা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), সালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৫), হলিদাগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯৫)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৩৫, থিয়েটার গ্রুপ ১, সিনেমা হল ১, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ৪৫।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৫.০৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৯৬%, শিল্প ০.৫৯%, ব্যবসা ১৮.০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.১১%, চাকরি ৬.৮০%, নির্মাণ ১.৯২%, ধর্মীয় সেবা ০.১১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৯% এবং অন্যান্য ৭.১৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫২.৫৬%, ভূমিহীন ৪৭.৪৪%। শহরে ৩৭.৬৮% এবং গ্রামে ৫৫.৮০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, আলু, হলুদ, পাট ও খয়ের।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিসি, চিনা, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, জাম।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার হাঁস-মুরগি১০।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৯৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৬৬ কিমি; রেলওয়ে ১৫ কিমি; নৌপথ ১৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা ময়দাকল, বরফকল, ওয়েল্ডিং, সুগার মিল, বিড়ি কারখানা প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৫। নন্দনগাছি বাজার, চারঘাট বাজার, ডাকরা বাজার, গোবিন্দপুর বাজার, হলিদাগাছি বাজার, সালুয়া বাজার, কাকড়ামারি বাজার, সারদা বাজার এবং চড়কের মেলা ও কালু পীরের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য আম, লিচু, সরিষা, তিল, অাঁখ, খেজুর গুড়, আখের গুড়, খয়ের।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৮.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয় জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৯%, ট্যাপ ০.৭% এবং অন্যান্য ৩.৪%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৩.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৬.৪% পরিবার অস্বাস্থাকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৯.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, সারদা পুলিশ একাডেমি হাসপাতাল ১, ক্লিনিক ২।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, সচেতন, কেয়ার, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, আইটিসিএল।  [মোঃ জায়েদুল আলম]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চারঘাট উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।