চলিত ভাষা
চলিত ভাষা বাংলা লেখ্য গদ্যরীতির দুটি রূপের একটি, অপরটি সাধু ভাষা। উনিশ শতকের তৃতীয় দশকে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে এ রীতির প্রথম ব্যবহার হয়। তারপর প্যারীচাঁদ মিত্র ও কালীপ্রসন্ন সিংহের রচনায় এর ক্রমবিকাশ ঘটে এবং প্রমথ চৌধুরীর সবুজপত্রকে কেন্দ্র করে ১৯১৪ সালের দিকে এ গদ্যরীতি সাহিত্যিক স্বীকৃতি ও পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। আধুনিক যুগে চলিত ভাষার ক্রমবর্ধিষ্ণু প্রভাব, প্রসার ও প্রতিপত্তি ঘটেছে; সাধু ভাষার ব্যবহার কেবল ক্ষেত্রবিশেষে এখনও টিকে আছে।
চলিত ভাষার সামগ্রিক উপস্থাপনই ঘটে মান কথ্য বাংলা ভাষা (ভাগীরথী-জনপদের) রীতিকে আশ্রয় করে। যেহেতু চলিত গদ্যরীতি কথ্য ভাষার অনুসারী, সেহেতু এ রীতিতে ক্রিয়াপদ ও সর্বনামের রূপগুলি মৌখিক রূপের কাছাকাছি; আর বিশেষ করে ক্রিয়াপদের আকৃতি হয় সংকুচিত। চলিত ভাষা সর্বদাই নতুন নতুন ধ্বনিপরিবর্তনের নিয়মকে মেনে চলে; ফলে সাধু ভাষার চেয়ে চলিত ভাষায় শব্দের রূপান্তর অধিক পরিলক্ষিত হয়। চলিত ভাষার ওপর স্বরসঙ্গতি ও অভিশ্রুতির প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সাধু ভাষা সাধারণত গুরুগম্ভীর প্রকৃতির, কিন্তু চলিত ভাষা অপেক্ষাকৃত লঘু; আবার চলিত ভাষার একটা সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ গতি আছে, যা সাধু ভাষায় সুলভ নয়। দৈনন্দিন ব্যবহারিক ক্ষেত্র থেকে শুরু করে জীবনের সর্বস্তরে এখন চলিত ভাষা ব্যবহূত হচ্ছে। [মহাম্মদ দানীউল হক]