ঘানি
ঘানি সরিষা, তিল, রেড়ি এবং পাকা নারকেলের শাঁস থেকে পিষে তেল বের করে আনার ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র। ঘানির উপরিভাগে রয়েছে বালতি সদৃশ ধারণপাত্রসহ কাঠের একটি কাঠামো। তেল উৎপাদনের জন্য ব্যবহূত কাঁচামাল অল্প পরিমাণে এ ধারণপাত্রের মধ্যে ঢেলে দেওয়া হয়। ঘানিতে ঢেলে দেওয়ার পর তা পেষানো হলে তা থেকে ধারাক্রমে একটি গ্রহণকারী অংশে তেল গড়িয়ে পড়ে।
ঘানি ঘোরানোর জন্য যান্ত্রিক মোটরের পরিবর্তে পশুশক্তি ব্যবহূত হয়ে থাকে। এ উদ্দেশ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক হচ্ছে ঘোড়া ও বলদের ব্যবহার। ঘানি ঘুরানোর জন্য একটি মাত্র পশু ব্যবহার করা হয়। পশুটির চোখের দুই পাশে বাঁশের পাতলা বাতার তৈরি দুটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধক জুড়ে দেওয়া হয়। পশুটিকে বৃত্তাকার পথে শুধু সামনের দিকে চলমান রাখার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবেই এ ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। ঘানি থেকে ধাতুনির্মিত একটি নির্গমপথ বেয়ে তেল বেরিয়ে আসে এবং নিচে রক্ষিত একটি ধারণপাত্রে পড়ে। ঘানির অন্য একটি ভিন্ন পথে বেরিয়ে আসা খৈল চওড়া মুখবিশিষ্ট একটি পাত্রে সংগ্রহ করা হয়।
তেল সম্পূর্ণ বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত খৈল বারবার পেষা হয়। হিন্দু তেল পেষণকারীরা তফশিলি বর্ণভুক্ত। এ পেশায় নিয়োজিত মুসলমানদের অবস্থানও সমাজের নিম্নস্তরে। হিন্দুদের মধ্যে এটি একটি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত পেশা, কিন্তু মুসলমানদের ক্ষেত্রে এ পেশা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত নয়। এ পেশায় নিয়োজিত লোকদের কলু নামে আখ্যায়িত করা হয়। [কে এম এ আজিজ]
আরও দেখুন কলু।