গোবিন্দদাস কবিরাজ
গোবিন্দদাস কবিরাজ (আনু. ১৫৩৫-১৬১৩) বৈষ্ণব পদকর্তা। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলার নিকট তেলিয়াবুধুরি গ্রামে তাঁর জন্ম। শ্রীচৈতন্য ও চৈতন্যোত্তরকালে যে কয়জন কবি বৈষ্ণবপদ রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন, তাঁদের মধ্যে গোবিন্দদাস অন্যতম।
গোবিন্দদাসের পারিবারিক ঐতিহ্য ছিল সাহিত্য ও সংস্কৃতিভাবাপন্ন। তাঁর পিতা চিরঞ্জীব সেন ছিলেন চৈতন্যদেবের সহচর, মাতামহ দামোদর সেন ছিলেন সঙ্গীতদামোদর গ্রন্থের রচয়িতা এবং সহোদর রামচন্দ্র সেন ছিলেন কবি; তিনি বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় কবিতা রচনা করেছেন। রামচন্দ্র ও গোবিন্দদাস শ্রীনিবাস আচার্যের নিকট বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এর পর থেকেই গোবিন্দদাস রাধাকৃষ্ণ ও গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদ রচনায় মনোনিবেশ করেন। ভণিতায় তাঁর নামযুক্ত প্রায় সাড়ে চারশ উৎকৃষ্ট পদ পাওয়া যায়।
গোবিন্দদাসের কাব্যগুরু ছিলেন মিথিলার কবি বিদ্যাপতি। তিনি বিদ্যাপতির জন্মভূমি বিসফিগ্রাম ভ্রমণ ও তাঁর কবিতা সংগ্রহ করেন এবং তাঁর অনুসরণে ব্রজবুলি ভাষায় উত্তম পদ রচনা করেন। বিশেষত রাধার অভিসারের পদ রচনায় তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিল না। ‘শ্যাম অভিসারে চলু বিনোদিনী রাধা’, ‘মন্দির বাহির কঠিন কপাট’, ‘কণ্টক গাড়ি কমল সম পদতল’, ‘মেঘ যামিনী চলিল কামিনী’ প্রভৃতি বহুল প্রচলিত অভিসারের পদ আজও উচ্চশিক্ষার পাঠ্য তালিকাভুক্ত। অলঙ্কারচাতুর্য, ছন্দ-ঝংকার ও রস-মাধুর্যগুণে তাঁর কবিতা কেবল বাংলায় নয়, বৃন্দাবনেও প্রশংসিত হয়েছিল। গোবিন্দদাস সঙ্গীতসাধক নামে একখানি নাটকও রচনা করেন। ভক্তিরত্নাকর গ্রন্থ থেকে জানা যায়, জীব গোস্বামী গোবিন্দদাসকে ‘কবীন্দ্র’ উপাধি দিয়েছিলেন। [ওয়াকিল আহমদ]