গুমতি গেট
গুমতি গেট সুলতানি বাংলার রাজধানী নগর-দুর্গ গৌড়-লখনৌতির পূর্ব দিকের প্রবেশ পথ। এর নামের উৎস সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। নকশা ও গঠন কৌশলে ইমারতটি কিছুটা উত্তর দিকে নির্মিত মুগল লুকোচুরি দরওয়াজার সাথে তুলনামূলকভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। এটি আকারে শেষোক্তিটির তুলনায় কিছুটা ছোট এবং ইট দ্বারা নির্মিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি কক্ষ। কক্ষটি ২.৬৫ মি পুরু দেওয়ালসহ ৭.৬০ মি বর্গাকার একটি কক্ষ। এর বহির্ভাগের পরিমাপ প্রতি দিকে ১২.৮০ মি এবং প্রত্যেক পার্শ্বে একটি করে চারদিকে চারটি প্রবেশপথ আছে। পূর্ব এবং পশ্চিম দিকের প্রবেশ পথের পার্শ্বে খাতকাটা বুরুজ আছে। কক্ষটির চারকোণে চারটি বুরুজ আছে যা সুলতানি আমলের স্বাভাবিক বুরুজগুলির মতো। বর্গাকার কক্ষটি স্কুইঞ্চের উপর নির্মিত একটি গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। এ ধরনের বৈশিষ্ট্য পান্ডুয়ায় নির্মিত একলাখী সমাধিসৌধ হতে শুরু হয় এবং সমগ্র সুলতানি আমলে এ ধরনের ইমারত নির্মাণে এ বৈশিষ্ট্য অনুসৃত হয়। যদি দিল্লির কুতুব এলাকায় নির্মিত ইলতুৎমিশের সমাধিসৌধকে একলাখী সমাধি সৌধের অগ্রদূত হিসেবে ধরা হয়, তাহলে গুমতি গেটকে কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদের দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথ আলাই দরওয়াজার অনুকৃতি বলা যায়। ইমারতের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের নগর দুর্গের দেওয়ালগুলির সাথে প্রবেশপথটির সংযুক্তির চিহ্ন দেখা যায়। প্রবেশপথটির বক্রাকৃতি কার্নিশ আছে। এ কার্নিশে স্বাভাবিক টেরাকোটা অলংকরণ অপেক্ষা টাইলস অলংকরণের প্রাধান্য দেখা যায়।
ইমারতটির নির্মাণ তারিখ অনিশ্চিত। কোনো কোনো পন্ডিতের মতে, নগর দুর্গের নির্মাতা নাসিরুদ্দীন মাহমুদ (১৪৩৫-৩৬১৪৫৯-৬০ খ্রি.) এ ইমারত নির্মাণ করেন। আবার অন্যান্যরা ফিরুজপুরের নিয়ামতউল্লাহ কমপ্লেক্সে প্রাপ্ত শিলালিপির ওপর ভিত্তি করে বলেন যে, এ প্রবেশপথ সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ-এর রাজত্বকালে ১৫১২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়। যেহেতু স্থাপত্যশিল্পের দিক থেকে সুলতানি আমলের নিদর্শনাবলি সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো রাজবংশীয় সংজ্ঞা পাওয়া যায় না, সেহেতু এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক হতে পারে না যে, কেন এ ইমারতের নির্মাণ তারিখ নগরদুর্গ নির্মাণের তারিখ হতে পৃথক করা হবে।
অধ্যাপক দানীর মতে, প্রবেশদ্বারটি টাইলস দ্বারা অলংকৃত। এ বৈশিষ্ট্যটি হোসেন শাহী আমলের। তাই এটি অবশ্যই সুলতান হোসেন শাহের সময়ে নির্মিত। তার এ যুক্তি সম্ভবত সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ এক শতক পূর্বে নির্মিত ছোট পান্ডুয়ার মিনারে ব্যবহূত টাইলসগুলির মধ্যে এখনও যেগুলি বিদ্যমান আছে সেগুলি পরবর্তী সময়ে গৌড়-লখনৌতি এবং পান্ডুয়া-ফিরুজাবাদের শাসকরা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছিলেন। তদুপরি, যদি উত্তর দিকে সুলতানের জন্য কোনো রাজকীয় প্রবেশদ্বার থাকত, তাহলে অন্যান্যদিকেও বিকল্প বা জরুরি প্রবেশপথ থাকত। সম্মুখে অবস্থিত চিকা ইমারতটিকে সাধারণত দপ্তরখানা বা অফিসভবন বলে মনে করা হয়। এর এ অবস্থানের কারণে এ পার্শ্বে এ ধরনের একটি প্রবেশপথ নির্মাণ করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। প্রবেশপথের খাতকাটা অলংকরণ, যা আদিনা মসজিদ-এর প্রভাব বলে ধরা হয়, এমন এক স্থাপত্যরীতির সান্নিধ্যের কথা বলে যা পরবর্তীকালের ইমারত শৈলীর উপর স্থায়ী প্রভাব রেখেছিল। [এ.বি.এম হোসেন]