গম গবেষণা কেন্দ্র
গম গবেষণা কেন্দ্র দিনাজপুর শহরের প্রায় ১৫ কিমি উত্তরে নশিপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছয়টি গবেষণা কেন্দ্রের একটি। এটি ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে গম চাষ এবং উৎপাদন সংক্রান্ত গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কেন্দ্র স্থাপনের পূর্বে Accelerated wheat research programme for Bangladesh নামে একটি কর্মসূচির অধীনে ১৯৭১ সালে তিন বছরের জন্য দেশের গমের ওপর গবেষণার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ কর্মসূচি সম্প্রসারিত করে ১৯৭৫ সালের জুন পর্যন্ত চালানো হয়। পরে এ কর্মসূচি সংশোধনের মাধ্যমে Expanded wheat research programme নামকরণ করা হয়। গম গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সব ধরনের গম গবেষণা কর্মকান্ড প্রধান কেন্দ্র বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট জয়দেবপুর থেকে নশিপুরে স্থানান্তর করা হয়।
কেন্দ্রটিতে একজন পরিচালক এবং প্রায় ২৫ জন বিজ্ঞানী ও অন্যান্য কর্মকর্তা রয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নিম্নলিখিত আঞ্চলিক এবং সাব-স্টেশনে অনেকে গম গবেষণা কাজে নিয়োজিত রয়েছেন: আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা স্টেশন, ঈশ্বরদী, পাবনা; আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা স্টেশন, খয়েরতলা, যশোর; আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা স্টেশন, জামালপুর; আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা স্টেশন, হাটহাজারি, চট্টগ্রাম; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট সদর দপ্তর, জয়দেবপুর, গাজীপুর এবং কৃষি গবেষণা স্টেশন, শ্যামপুর, রাজশাহী।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক ধান-গম গবেষণা নামে একটি সহযোগী গবেষণা প্রকল্প গম গবেষণা কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
মূলত কৃষকের চাহিদা এবং বাংলাদেশে গম চাষের বিভিন্ন সমস্যার ওপর নির্ভর করে কেন্দ্রের গবেষণা কর্মকান্ড চলে। আজ পর্যন্ত এটি ২১টি বিভিন্ন জাতের গম অবমুক্ত করেছে। এসব বিভিন্ন জাতের গম ১৯৭৫-৮৫ সালের উৎপাদন বৃদ্ধিতে শতকরা ৩০-৪০ ভাগ অবদান রেখেছে। সম্প্রতি উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের গম পূর্বের বছরগুলির তুলনায় উৎপাদন বৃদ্ধিতে শতকরা ১৫-৩০ ভাগ বেশি অবদান রাখছে।
কৃষকদের নিকট বিভিন্ন জাতের গমের মধ্যে কাঞ্চন সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং এটি গম চাষের আওতার মোট এলাকার ৮০% জমিতে চাষ করা হয়। সম্প্রতি উদ্ভাবিত কয়েকটি জাত কাঞ্চনের চেয়েও বেশি সম্ভাবনাময় এবং শতকরা ৮-১০ ভাগ বেশি উৎপাদনশীল।
বর্তমানে গম চাষের অধীনে সব এলাকায় এ কেন্দ্রের সুপারিশকৃত গমের চাষ হয়ে থাকে। কেন্দ্র কর্তৃক উন্নত বীজ সংরক্ষণ প্রযুক্তি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন কৃষকরা তাদের নিজস্ব বীজ সহজে সংরক্ষণ করতে পারে এবং মোট বীজ চাহিদার ৮০% মিটিয়ে থাকে। প্রায় ৭৫% সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের গম উৎপাদন প্রযুক্তির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৪ সাল থেকে প্রতি বছর প্রায় ২০০০ কৃষক এবং ব্লক সুপারভাইজারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহযোগিতায় এ গবেষণা কেন্দ্র কৃষকদের প্রায় ১২০০ ক্ষেত তদারকি করে। বীজ উৎপাদনের জন্য প্রতি বছর উৎপাদিত জনপ্রিয় প্রতিটি জাতের পাঁচশত কেজি বীজ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থাকে সরবরাহ করা হচ্ছে। [মোঃ শহীদুল ইসলাম]
আরও দেখুন গম; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, সবুজ বিপ্লব।