সবুজ বিপ্লব

সবুজ বিপ্লব (Green Revolution)  বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার এবং সেচের পানি ব্যবহারের মাধ্যমে গম, ধান, ভুট্টা প্রভৃতির উৎপাদনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অতি দ্রুত যে বিরাট সাফল্য অর্জিত হয়েছে তাকে ‘সবুজ বিপ­ব’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এখানে বিপ­ব শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে দ্রুত পরিবর্তন অর্থে। এ পরিবর্তন এসেছে প্রচলিত (Conventional) পদ্ধতির চাষাবাদ থেকে অধিক উৎপাদনক্ষম নতুন প্রযুক্তির চাষাবাদে রূপান্তরের মাধ্যমে। এই পরিবর্তন সাধিত হয়েছে নিরবে-নিভৃতে, বিশ্বের অসংখ্য মানুষের ক্ষুধা নিবারণের জন্যে।

গম

সবুজ শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে উৎপাদিত শস্যের কাঁচা রং হিসেবে। শস্য যৌবনপ্রাপ্ত হলে এর নান্দনিক সবুজ রং প্রকাশ পায়। নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শস্য উৎপাদনের যে দ্রুত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তাকে সর্বদাই যৌবনদীপ্ত রাখার জন্য বিপ­বের সাথে সবুজ শব্দটি একিভূত করে ১৯৬৮ সালের ৮ই মার্চ ইউসএইড (USAID)-এর পরিচালক উইলয়াম, এস. গাউড একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সমিতির সম্মেলনে ভাষণ দেয়ার সময় দ্রুত ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশলকে ‘সবুজ বিপ­ব’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘এটা সোভিয়েতের মতো সহিংস লাল বিপ­ব নয়, কিংবা ইরানের শাহ অনুসৃত সাদা বিপ­বও এটা নয়। আমি একে সবুজ বিপ­ব বলে চিহ্নিত করছি।’  এরপর থেকে ‘সবুজ বিপ­ব’ শব্দটি বারংবার কৃষি উন্নয়নের সাথে জড়িত বিজ্ঞানী এবং পেশাজীবীদের মুখে উচ্চারিত হয়ে আসছে। ড. নরমেন আর্নেস্ট বোরলগ তাঁর নোবেল পুরস্কারের বক্তৃতায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের প্রভাব বর্ণনা করতে গিয়ে একাধিকবার এই শব্দটি উচ্চারণ করেছেন। এটি উন্নত বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, পানি সেচ ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষিতে দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল। সবুজ বিপ­বের ফলে ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন আড়াই গুণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে দূর্ভিক্ষাবস্থা থেকে রক্ষা পায় স্বল্পোন্নত দেশগুলো।

সবুজ বিপ­বের সূচনা হয় ১৯৪৪ সালে, মেক্সিকোয়। মূলত উচ্চ ফলনশীল গম জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে এ বিপ­বের যাত্রা শুরু। এর নেতৃত্ব দেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী কৃষি বিজ্ঞানী ড. নরমোন ই বোরলগ। ১৯৪৩ সালে মেক্সিকো যেখানে তার প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক শস্য বিদেশ থেকে আমদানি করত, সেখানে সবুজ বিপ­বের মাধ্যমে ১৯৫১ সালের মধ্যেই ওই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে এবং ১৯৬৪ সালে মেক্সিকো প্রায় অর্ধ মিলিয়ন টন গম বিদেশে রফতানি করতে সক্ষম হয়।

ভুট্টা

এই উত্তরণ সম্ভব হয়েছে ড. বোরলগ কর্তৃক উদ্ধাবিত অধিক উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন রোগ প্রতিরোধক আধা-বেটে গম বীজ, ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং গবেষণা অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে।

মেক্সিকোর পর উচ্চ ফলনশীল ও রাসায়নিক সারের অনুকূলে সাড়া দেয়া গমের জাতগুলোর ব্যাপক চাষাবাদ হয় আমেরিকায়। তাতে বৃদ্ধি পায় উৎপাদন। ১৯৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ভোগের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ গম আমদানি করত, সেখানে ১৯৫০-এর দশকে দেশটি খাদ্য শস্যের উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করে এবং ১৯৬০ এর দশকে পরিণত হয় একটি রফতানিকারী দেশে।

সবুজ বিপ­বের ফলে ভারত ও পাকিস্তান ষাট-এর দশকের শেষভাগে ব্যাপক ক্ষুধা ও দূর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পায়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানে যেখানে গমের উৎপাদন ছিল ৪.৬ মিলিয়ন টন, সেখানে ১৯৭০ সালে এর উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৭.৩ মিলিয়ন টনে এবং ২০০০ সালে ২১ মিলিয়ন টনে। অনুরূপভাবে, ১৯৬৫ সালে ভারতে গমের উৎপাদন ছিল ১২.৩ মিলিয়ন টন, ১৯৭০ সালে তা উন্নীত হয় ২০.১ মিলিয়ন টনে এবং ২০০০ সালে তা ৭৬.৪ মিলিয়ন টনে এসে দাঁড়ায়। ষাটের দশক থেকে পাকিস্তান এবং ভারত দুটো দেশেই খাদ্যোৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পায়, ফলে উভয় দেশই খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করে। উলে­খযোগ্য যে, সবুজ বিপ­বের প্রভাবে এশিয়ার দেশগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশ শস্য উৎপাদনে যে বড় ধরনের সফলতা অর্জন করেছে, সে তুলনায় আফ্রিকান দেশসমূহ তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেনি। এ সকল দেশের উন্নতির পেছনে যে সমস্ত নিয়ামকগুলো দায়ী, তার মধ্যে আছে স্থায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনা ও তদারকি এবং মোটামুটিভাবে চলনসই অবকাঠামোগত উন্নতি। এই সমস্ত নিয়ামকগুলো উন্নত বীজ, সার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং এর সাথে উৎপাদিত পণ্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। সে তুলনায় আফ্রিকান দেশসমূহ ‘সবুজ বিপ­ব’-এর সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি এবং আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে এখনো খাদ্যাভাব প্রকট।

ধান

সবুজ বিপ­বের সাফল্যের পেছনে দুটো আন্তর্জাতিক কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অবদান সবেচেয়ে বেশি। এর একটি হলো মেক্সিকোয় প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম গবেষণা কেন্দ্র (CIMMYT) এবং অপরটি হলো ফিলিপাইনে প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (IRRI)। এ দুটো প্রতিষ্ঠান থেকে একের পর এক গম, ভুট্টা ও ধানের আধা-বেটে উচ্চফলনশীল জাতসমূহ উদ্ভাবিত হতে থাকে এবং তা বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হতে থাকে। তাতে দ্রুত বৃদ্ধি পায় বিশ্বময় খাদ্য শস্যের ফলন। সবুজ বিপ­বের গোড়াপত্তন হয় মেক্সিকোয়, ১৯৪৪ সালে। ওই বছর যুক্তরাজ্যের উদ্ভিদ প্রজননবিদ ড. নবমেন ই বোরলগ মেক্সিকোর কৃষি গবেষণা কাজে যোগ দেন। তিনি তার গবেষণা টিমের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে বাছাই এবং উন্নত প্রজননের মাধ্যমে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধক গমের জাত উদ্ভাবন করেন। এ জাতগুলোর প্রভাবে ১৯৪৮ সাল থেকে মেক্সিকোয় গমের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ১৯৫৬ সাল নাগাদ গমের হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে মোটি গম উৎপাদনে মেক্সিকো স্বয়ম্ভরতা অর্জন করে। ১৯৫৩ সালে ড. বোরলগ জাপানী ক্ষুদ্রাকৃতির গম জাত নরিন ১০-এর সঙ্গে আমেরিকান উচ্চ ফলনশীল গম জাত ব্রেভর ১৪-এর প্রজনন সাফল্যজনকভাবে সম্পন্ন করেন। এ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত নতুন জাত নরিন ১০ ব্রেভর উচ্চ ফলনশীল এবং এর কান্ড আধা ক্ষুদ্রাকৃতির। এর সঙ্গে তিনি রোগ প্রতিরোধক জাতের প্রজনন ঘটিয়ে উদ্ভাবন করেন উচ্চ ফলনশীল রোগ প্রতিরোধকারী আধা-বেঁটে জাত পিটক ৬২ এবং পেঞ্জামো ৬২। ১৯৬৩ সাল নাগাদ মেক্সিকোর শতকরা ৯৫ ভাগ জমিতে এগুলোর সম্প্রসারণ ঘটে। তাতে গমের উৎপাদন ৬ গুণ বৃদ্ধি পায় এবং মেক্সিকো পরিণত হয় গম রপ্তানিকারী একটি দেশে। খাদ্যশস্যের উৎপাদনে এই নিরব বিপ­ব (Quiet revolution) পরবর্তীকালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংগঠিত সবুজ বিপ­বের সোপান রচনা করে। ১৯৬৩ সালে মেক্সিকোর কৃষি গবেষণা কর্মকান্ডকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ প্রদান করা হয় এবং প্রতিষ্ঠিত করা হয় আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র (CIMMYT)। মেক্সিকো সরকারের সঙ্গে ফোর্ড ও রকফেলার ফাউন্ডেশন, ইউএসএইড এবং ইউএনডিপি এক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এর আগে ১৯৬০ সালে ফিলিপাইন সরকার, ফোর্ড এবং রকফেলার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মেনিলায় প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (IRRI)। রোবলগের অনুকরণে ধানের প্রজনন শুরু হয় ১৯৬২ সালে। চীনের ধান ডি-জিও-উ-জেন (Dee-geo-woo-gen) এর সঙ্গে ইন্দোনেশীয় ধান পেটা (Peta) এর মধ্যে সংঘটিত হয় প্রজনন। তাতে ১৯৬৬ সালে উদ্ভাবিত হয় নতুন উচ্চ ফলনশীল, আধাক্ষুদ্রাকৃতির ধান আইআর ৮, যা রাসায়নিক সার এবং কীট ও বালাই নাশকের প্রতি সংবেদনশীল। তবে চিরায়ত ধান জাতের চেয়ে নতুন জাতটি অনেক বেশি উৎপাদনশীল। একে অভিহিত করা হয় অলৌকিক ধান (Miracle rice) হিসেবে। এর প্রভাবে খাদ্য ঘাটতির দেশ ফিলিপাইন খাদ্যোৎপাদনে দ্রুত স্বয়ম্ভর হয়ে উঠে। মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে ওই দেশের ধান উৎপাদন ৩.৭ মিলিয়ন টন থেকে ৭.৭ মিলিয়ন টনে বৃদ্ধি পায়। কালক্রমে উচ্চ ফলনশীল গম ও ধানের জাতগুলো সম্প্রসারিত হতে থাকে এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে। তাতে বিশ্বের খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি পায়, দূরীভূত হয় খাদ্যাভাব। ১৯৭০ সালে ড. বোরলগকে প্রদান করা হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। তিনি অভিহিত হন সবুজ বিপ­বের জনক হিসেবে।

১৯৬০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৩.০ বিলিয়ন, ২০০৮ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬.৭ বিলিয়নে দাঁড়ায়। অপরদিকে, ১৯৬০-৬১ সালে বিশ্বে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৬৫৭ মিলিয়ন টন। ২০০৮ সালে তা বৃদ্ধি পায় ২২০৮ মিলিয়ন টনে। এ সময়ের ব্যবধানে জসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অপরদিকে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় তিন গুণের অধিক। এটা নি:সন্দেহে সবুজ বিপ­বের ফল।

এবার বাংলাদেশের কথায় আসা যাক। বাংলাদেশে সবুজ বিপ­বের সূচনা হয়েছে ষাট-এর দশকে। তবে এর ব্যাপকতা এসেছে অনেক বিলম্বে, স্বাধীনতার পরে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৭ কোটি, বর্তমানে ২০১০ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৫ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ের ব্যবধানে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ১০ মিলিয়ন টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে। তা কেবল সম্ভব হয়েছে সবুজ বিপ­বের কারণে। উপরোক্ত তথ্য থেকে দেখা যায় যে, গত প্রায় ৪ দশকে দেশের খাদ্যোৎপাদন প্রায় ৩ গুণের অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ম্ভবরতার দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। এভাবে বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বকে ক্ষুধার হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে সবুজ বিপ­ব।

সবুজ বিপ­ব আরম্ভের প্রাক্কালে বাংলাদেশের কৃষক কদাচিৎ উন্নতমানের সার, কীটনাশক এবং আধুনিক সেচযন্ত্র ব্যবহার করত। অধিকাংশ কৃষক হাজার বছরের পুরানো চিরায়ত পদ্ধতির মাধ্যমে চাষাবাদ করত। সত্তরের দশকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণ, সেচ সুবিধা ও পানি নিষ্কাষণ পদ্ধতি প্রভৃতি প্রবর্তন করে। অতঃপর বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন কর্তৃক আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম গবেষণা ইনস্টিটিউট, আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উন্নত জাতের গম ও ধানের বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সেচ সুবিধা কৃষকদের মাঝে সম্প্রসারণের মাধ্যমে এদেশে সবুজ বিপ­বের সূচনা হয়। বর্তমানে ধান, গম ও ভুট্টাসহ অন্যান্য শস্যের উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ও ধারণে বৈপ­বিক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

‘সবুজ বিপ­ব’-এর সমালোচকগণ বলেছেন, এই পদ্ধতি প্রবর্তনের ফলে কৃষকেরা সনাতন পদ্ধতির চাষাবাদ ভুলে গেছে। তাতে জীববৈচিত্র বিনষ্ট হয়েছে। তাছাড়া এটা ছোট কৃষক বান্ধব নয়। এটা ভূস্বামী বান্ধব। ফলে বেশি জমির মালিকগণ যে হারে এর সুফল পেয়েছে, ক্ষুদ্র কৃষকেরা সে হারে তা পায়নি। তাতে সমাজে আয় বৈষম্য বেড়েছে। সমালোচকগণ আরো দাবি করেছেন যে, সবুজ বিপ­বের ফলে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে শস্যের বাজারজাতকরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে ও পণ্যের দামে মন্দাভাব বিরাজ করেছে। একদিকে উৎপাদনের উপকরণ মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া এবং অপরদিকে উৎপাদিত পণ্যের দাম যথাযথভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ায় কৃষকের প্রকৃত মুনাফা হ্রাস পেয়েছে। এভাবে সবুজ বিপ­বের ফলে অনেক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবুজ বিপ­বের জনক ড. নরমেন ই. বোরলগ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী স্বল্প উৎপাদনজনিত ক্ষুধা জিয়িয়ে রাখার চেয়ে অধিক উৎপাদনজিনত কিছু সমস্যার মোকাবিলা করা অনেক ভালো। প্রকৃতপক্ষে সবুজ বিপ­ব ক্ষুধার জ্বালা থেকে বিশ্বের মানুষকে মুক্তি দিয়েছে এবং কোটি কোটি নতুন মানুষের মুখে অন্ন যুগিয়েছে।  [জাহাঙ্গীর আলম]

গ্রন্থপঞ্জি  জাহাঙ্গীর আলম, কৃষি ও কৃষক, পালক পাবলিশার্স, ঢাকা, ২০১০; Jahangir Alam, ‘Income Distribution in Rural Bangladesh: The Effect of Village Organization with Associated Improved Technology,’ in Jahangir Alam (ed), Studies on Agriculture and Rural Development, Palok Publishers, Dhaka, 2008; Norman E. Borlaug, ‘The Green Revolution, Peace and Humanity’, Nobel Lecture, Norwegian Nobel Institute in Oslo, Norway, December 11, 1970; Walter P. Falcon, ‘The Green Revolution: The Generation of Problems’, American Journal of Agricultural Economies, December 1970; Hal Myint, Green Revolution in Southeast Asia, in Southeast Aisan’s Economy in the 1970s, Asian Development Bank, Praeger Publication, New York, 1971.