খান, ওস্তাদ খাদেম হোসেন
খান, ওস্তাদ খাদেম হোসেন (১৯২২-১৯৯২) সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতার নাম নায়েব আলী খাঁ ও মাতার নাম নিত্য খানম। পিতা নিকট তিনি প্রথম গান শেখেন। তারপর পিতৃব্য ওস্তাদ আফতাবউদ্দিন খাঁর নিকট তবলা এবং ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর নিকট সেতার ও বেঞ্জু শেখেন। এভাবে ঘরোয়া পরিবেশে সঙ্গীত ও স্কুলে সাধারণ শিক্ষা শেষ করে খাদেম হোসেন অপর পিতৃব্য ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর নিকট সেতার শেখার জন্য মাইহারে যান। সেখানে দীর্ঘদিন সেতারে তালিম নিয়ে তিনি কলকাতায় ফেরেন এবং তানসেন বংশীয় ওস্তাদ দবীর খাঁ ও গৌরীপুরের জমিদার বীরেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর নিকট কিছুদিন সঙ্গীত শেখেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে থেকেই খাদেম হোসেন ঢাকা রেডিওর সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। পরে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের ‘নিজস্ব শিল্পী’ নিযুক্ত হন। স্বাধীনতার পরে তিনি রেডিও বাংলাদেশের ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে প্রধান সঙ্গীত প্রযোজক পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর নৃত্যদলের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন এবং দলের সঙ্গে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, হল্যান্ড প্রভৃতি দেশ সফর করেন। তিনি ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম এবং আমৃত্যু একাডেমীর সঙ্গীত পরিচালক ও যন্ত্রসঙ্গীত বিভাগের প্রধান ছিলেন।
খাদেম হোসেন চলচ্চিত্র জগতে ‘আলাউদ্দিন লিটল অর্কেস্ট্রা গ্রুপে’র তত্ত্বাবধায়ক পরিচালক ছিলেন। তিনি অর্কেস্ট্রা কম্পোজ ও পরিচালনায় দক্ষ ছিলেন। জসীমউদ্দীনের নক্সী কাঁথার মাঠ, কাজী নজরুল ইসলামের ‘সিন্ধু’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ এবং ময়মনসিংহের মহুয়া গীতিনাট্যে সুরারোপ করে তিনি দেশ-বিদেশে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। নকশী কাঁথার মাঠ নৃত্যনাট্যের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তিনি ইরান, ইরাক ও পাকিস্তান সফর করেন। তিনি ‘আজান’ (পরিবর্তিত নাম ‘উত্তরণ’) ছায়াছবির সঙ্গীত পরিচালক। সঙ্গীত ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘কুমিল্লা ফাউন্ডেশন’ তাঁকে ‘স্বর্ণপদক’, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘কৃতী’ সন্তান ও বাংলাদেশ সরকার ‘স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার’-এ (১৯৮০) ভূষিত করে। [মোবারক হোসেন খান]