খতিয়ান
খতিয়ান ভূ-স্বত্বের দলিল। ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন এ ভূমির ওপর বিভিন্ন পর্যায়ের দখলদারদের অধিকার স্বীকৃত হয়। দখলদারগণ হচ্ছেন জোতদার, মেয়াদী জোতদার ও রায়ত। অভ্যন্তরীণভাবে প্রতিটি স্বত্ব থেকে জমির ওপর অধিকারসহ কিছুসংখ্যক উপ-স্বত্বের উদ্ভব হয়। এসব স্বত্ব ও উপ-স্বত্বের সুনির্দিষ্ট নথিপত্রের অভাবে কোনো ব্যক্তি কী পরিমাণ জমির মালিক এবং কীভাবে মালিক এ নিয়ে আদালতসমূহের সংশয় ছিল। ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের পূর্বে নথিপত্রে লিপিবদ্ধ ও আইনগতভাবে স্বীকৃত বিধি এবং স্বত্বাধিকারের রেকর্ড কোথাও ছিল না। এ অবস্থা আইনগত রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সুষ্ঠু প্রশাসনের জন্য প্রকৃতই বাধাস্বরূপ ছিল। এ বিভ্রান্তি নিরসনের উদ্দেশ্যে ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনে ভূমিতে সকল পক্ষের স্বত্বাধিকার ও বাধ্যবাধকতা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। দেশে ব্যাপকভাবে জমি জরিপের বিধান করা হয়, এবং একদিকে জমি ভোগদখলকারী ও অন্যদিকে সরকার ও আদালতসমূহের জন্য স্থায়ী ভূমি রেকর্ডের অনুক্রম প্রস্ত্তত করা হয়।
বাংলার জেলাসমূহের জরিপ কাজ ও সেটেলমেন্ট ১৮৮৬ সালে রওশনাবাদ পরগনা (কুমিল্লার একাংশ) ও দখিন শাহবাজপুর পরগনা (ভোলা) থেকে পর পর শুরু করা হয়। এ জরিপের প্রধান লক্ষ্য ছিল জমির ভোগদখলদারীকে প্রত্যক্ষভাবে শনাক্তকরণের মাধ্যমে প্রতি খন্ড জমির জরিপ ও বন্দোবস্তের খতিয়ান তৈরি করা। এ দলিলটি সাধারণভাবে খতিয়ান বা স্বত্বের বিবরণ নামে পরিচিত। এ স্বত্ববিবরণীতে জমি-খন্ডের (চক) ভোগদখলকারীর নাম ও পিতার নাম, জমির পরিমাণ, স্বত্বের প্রকৃতি, খাজনার পরিমাণ ও প্রজাস্বত্বের প্রকৃতি লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রত্যেক মৌজার জন্য একটি নকশা তৈরি করা হয় এবং এ নকশায় সকল জমি-খন্ড সংখ্যা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্রতিটি খতিয়ানের একটি সংখ্যা থাকে। একটি মৌজার সকল খতিয়ান সংখ্যাক্রম অনুযায়ী একটি বালাম বইতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বালাম বইটি বরাতের প্রয়োজনে কালেক্টরেট মহাফেজখানা, জজের মহাফেজখানা এবং তহসিল অফিসেও (খাজনা আদায়ের অফিস) সংরক্ষণ করা হয়। খতিয়ানের একটি সত্যায়িত কপি পাওয়ার অধিকার ভোগদখলকারীর রয়েছে। [সিরাজুল ইসলাম]