কোষকলাচাষ

কোষকলাচাষ (Tissue Culture)  কৃত্রিমভাবে কোনো জীবের কোষকলা বা বংশবিস্তার ঘটানো। কোষকলাচাষ বলতে সাধারণত উদ্ভিদ কোষকলার কৃত্রিম চাষই বোঝায়। উদ্ভিদকোষের মতো ল্যাবরেটরিতে প্রাণিকোষচাষ ততটা সহজ নয়। উদ্ভিদকোষচাষ বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭০-এর দশকে, যা এখন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারিত হয়েছে। অতিসম্প্রতি বেসরকারি খাতে প্রযুক্তিটির ব্যবসায়িক প্রয়োগও শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে এক্ষেত্রে অগ্রণী হলো রেশমচাষ গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (মালবেরি),  বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (ধান, আখ, চা ও আঙুর), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাঁধাকপি,  কাঁঠাল, বীজ-কন্দ, বাহারি উদ্ভিদ,  অর্কিড),  বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (কলাআনারস, কাঁঠাল, স্ট্রবেরি,  পেঁপে, তরমুজ এবং অর্কিড, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ইত্যাদি),  বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (পেঁপে,  আলু, কলা,  পিঁয়াজরসুনগোলাপ, অর্কিড, গ্লাডিওলাস),  বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বাঁশ, সাইকাস, অর্কিড, জ্যাকারান্ডা,  নিমসেগুন, কাঁঠাল) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (কলা, আম, আলু, আনারস)। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাসহ ৬টি সংস্থা বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে আলু, কলা ও অর্কিডের মাইক্রোপ্রপাগেশন নিয়ে কাজ করছে।

প্রাণিকোষ অতি সহজে কৃত্রিম মাধ্যমে আবাদ করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে চাষ-মাধ্যমে অল্প সময়, কয়েক দিন বা মাস বেঁচে থাকে। তবে কিছু প্রাণিকলা স্বকীয় বৈশিষ্ট্য অনুসারে পাতলা একটি স্তর (monolayer) হিসেবে কালচার-পাত্রের ভেতরের গায়ে বাড়ে; ব্যাকটেরিয়ার মতো কালচার মাধ্যমে প্রলম্বন (suspension) হিসেবেও বাড়তে পারে।

চাষকৃত প্রাণিকোষ কতক প্রয়োজনীয় কাজে লাগে। এগুলি টিকায় ব্যবহার্য ভাইরাস চাষের জন্য ব্যবহূত হতে পারে, যেজন্য উদ্ভিদকোষ মোটেই উপযুক্ত নয়। এভাবে অনেকগুলি ভাইরাসঘটিত টিকা বিভিন্ন কোষ-লাইনে উৎপন্ন হয়, যেমন গবাদি পশুর পা ও মুখ রোগের (FMD) ভাইরাসের জন্য BHK21 কোষ-লাইন, জলাতঙ্ক ভাইরাসের জন্য VERO কোষ-লাইন ইত্যাদি। বাংলাদেশে সরকারি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট HeLa, VERO, HEp-2, MRC-5, BHK ইত্যাদির মতো কয়েকটি সাধারণ কোষ-লাইন চালু রেখেছে। International Centre for Diarrhoeal Disease Research, Bangladesh (ICDDR,B) সংস্থারও কয়েকটি কোষ-লাইনের একটি মজুদ আছে।  [জিয়া উদ্দিন আহমেদ]