কোম্পানি বাগান
কোম্পানি বাগান ঢাকার নওয়াবদের একটি বাগিচা। দিলখুশা ও বঙ্গভবন এর পশ্চিমে বর্তমান মতিউর শিশুপার্ক থেকে শুরু করে স্টেডিয়াম, বায়তুল মুকাররম, জি.পি.ও প্রভৃতি বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এ বাগান বিস্তৃত ছিল। পূর্বে পল্টনের ঐসব এলাকায় ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনানিবাস। ১৮৪০ সালের দিকে সেনানিবাসটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এলাকাটি পরে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
পল্টন এলাকায় একটি বাগান স্থাপনের জন্য ঢাকার নওয়াব খাজা আহসানউল্লাহ ১৮৭৪ সালে বাংলার ছোটলাটের অনুমতি লাভ করেন। এ উপলক্ষে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির নিকট থেকে নওয়াব সাহেব ১৮৭৬ সালে ৯৭ বিঘা এবং ১৮৭৭ সালে ৯৯ বিঘা জমি লিজ গ্রহণ করেন। তিনি ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করিয়ে, গাছপালা লাগিয়ে সেখানে একটি সুন্দর বাগান তৈরি করেন। এ স্থানে পূর্বে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনানিবাস থাকায় বাগানটি ক্রমে ‘কোম্পানি বাগান’ নামেই পরিচিত হয়। উক্ত জমি লিজ গ্রহণকালে আরোপিত শর্ত অনুযায়ী জনসাধারণের চিত্তবিনোদনের জন্য সপ্তাহে দুদিন উক্ত বাগান উন্মুক্ত রাখা হতো। ১৮৯৯ সালে এ সুযোগ আরও বাড়িয়ে সপ্তাহে তিন দিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়। উক্ত বাগানের পাশ দিয়ে ফুটপাথ নির্মাণের জন্য ১৮৮০ সালে সেক্রেটারি অব স্টেটস-এর পক্ষ থেকে নওয়াব আহসানুল্লাহকে আরও জমি দেওয়া হয়।
ওদিকে সেনানিবাস সরিয়ে নেওয়ার পর জনবসতির অভাবে পুরানা পল্টনের বাকি এলাকা কালক্রমে ঝোপ-জঙ্গলে ভরে যায়। উক্ত এলাকা উন্নয়নের জন্য নওয়াব আহসানউল্লাহর একটি প্রকল্প ১৮৮৮ সালের ১৪ জুলাই মিউনিসিপ্যালিটি অনুমোদন করে। ফলে ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করে এবং খানা-খন্দ ভরাট করে স্থানটিকে একটি বিস্তীর্ণ ময়দানে পরিণত করা হয়। এর ফলে কোম্পানি বাগানের পরিবেশ উন্নয়ন এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এ ময়দানের একাংশ খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহূত হতো।
কোম্পানি বাগানে নানা জাতের প্রচুর ফলবান বৃক্ষ ছিল। ঢাকা নওয়াব এস্টেট থেকে ফলের গাছগুলি অনেক সময় ইজারা দেওয়া হতো। উক্ত বাগানের মধ্যে ‘চা-খানা’ নামে ঢাকার নওয়াবদের একটি একতলা ভবন ছিল।
১৯০৫ সালে ঢাকা পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের রাজধানী হলে, সরকারি অফিস আদালত নির্মাণের প্রয়োজনে কোম্পানি বাগানের দক্ষিণাংশও সরকার স্থায়ীভাবে লিজ গ্রহণ করে। নওয়াব এস্টেটের পতনের যুগে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কোম্পানি বাগান শ্রীহীন হতে থাকে। পরে বাগানটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। কোম্পানি বাগানের প্রায় সবটাতেই পরবর্তীকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও এর দক্ষিণাংশে গোল পুকুরের চারদিকের পার্কটি কোনো রকমে টিকে থাকে। বিশ শতকের ষাটের দশকে উক্ত পার্কটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘আইয়ুব শিশু পার্ক’। এখন সেটা ‘মতিউর শিশু পার্ক’ নামে পরিচিত। [মোহাম্মদ আলমগীর]