কৃষক সমাজ
কৃষক সমাজ প্রাচীনকাল থেকেই গোটা বাংলা ছিল একটি কৃষিনির্ভর সমাজ। এক সময়ে বিশ্ববাজারে সমাদৃত দ্রব্যসামগ্রী ছিল বস্ত্তত কৃষিভিত্তিক গ্রামবাংলার অবদান। এমন কি, উৎপাদন ও মানব বসতির দিক থেকে বাংলাদেশ আজও একটি কৃষিনির্ভর দেশ। কিন্তু বাংলার সে ঐতিহ্যবাহী উৎপাদন ব্যবস্থা আর নেই। প্রাচীনকালে, এমনকি মধ্যযুগেও কৃষকশ্রেণী ও শাসকশ্রেণীকে পৃথক করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি ছিল না। এমন কোনো শক্তিশালী শহুরে শ্রেণিও তখন ছিল না যাদের সামাজিক অবস্থান দ্বারা জনগণকে গ্রামীণ ও শহুরে এবং ধনী ও দরিদ্র হিসেবে শ্রেণিবিভক্ত করা যেত। ইতিহাসবিদ ও সমাজবিজ্ঞানিদের মতে তখন জনসাধারণ স্বনির্ভর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামে বসবাস করত, যদিও তারা সেকালে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারতে বিদ্যমান সমাজের অনুরূপ স্বশাসিত সমাজের অস্তিত্ব বাংলায় ছিল বলে স্বীকার করেন না। ধারণা করা হয়, বাংলার পল্লিসমাজ তখন এ বিশাল বদ্বীপের সমতলভূমি জুড়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রামীণ বসতিতে বিন্যস্ত ছিল। স্বনির্ভর গ্রাম বিদ্যমান থাকার কারণে জনসাধারণের ব্যক্তিক ও সামাজিক গতিশীলতা ছিল অত্যন্ত সীমিত।
বাংলার জনগণ অর্থনৈতিক দিকে সুস্পষ্টভাবে শ্রেণিবিভক্ত না হলেও সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ছিল ভিন্নতর। পেশাগত বিভাজন তথা বর্ণপ্রথা ভিত্তিক সমাজবিন্যাসে তারা বিভিন্ন বর্ণে বিভক্ত ছিল এবং এ অবস্থা তাদের সমাজব্যবস্থাকে দৃঢ় করেছিল। পল্লিসমাজের মানুষ নির্দ্বিধায় রাজার প্রাপ্য পরিশোধ করত, কেননা রাজপ্রাপ্য ছিল ধর্মানুমোদিত। ধর্মশাস্ত্রে নির্ধারিত ছিল রাজকরের পরিমাণ এবং রাজপ্রতিনিধিরা তা আদায় করত। রাজপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে গণ-অসন্তোষ প্রকাশের তেমন কোনো অবকাশ না থাকায় প্রাচীন ও মধ্যযুগে কোনো কৃষক আন্দোলন ছিল না অথবা খুবই বিরল ছিল।
ঔপনেবেশিক শাসনামলে বাংলায় কৃষক সমাজের ভিন্নতর চিত্র পাওয়া যায়। এ শাসনের গোড়া থেকেই রায়তরা তাদের স্বার্থবিরোধী সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস্ব এজেন্ট কর্তৃক উচ্চহারে খাজনা আদায় ও বিবিধ শোষণের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতির দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। ১৭৬৮-১৭৬৯ সালের মহামন্বন্তর থেকে শুরু করে দুর্ভিক্ষ ও অনটন এদেশে একটি স্থায়ী রূপ পরিগ্রহ করে। এমতাবস্থায় কৃষকদের মধ্যে বিক্ষোভ ঘনীভূত হতে থাকে। কোম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে কৃষকদের সর্বপ্রথম প্রতিরোধ আন্দোলন ছিল ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন। দেশে কোনো মধ্যবিত্ত শ্রেণির অস্তিত্ব না থাকায় এবং ঐতিহ্যবাহী অভিজাতবর্গ পর্যুদস্ত হওয়ায় সমকালীন সমাজকাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে সমাসীন ধর্মীয় নেতারা নতুন শাসকগোষ্ঠীর উচ্চহারে খাজনা আদায়ের বিরুদ্ধে কৃষকদের পক্ষে দাঁড়াবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তারা বিদেশি শাসকগোষ্ঠীকে সদাশয় শাসকের পরিবর্তে মুনাফাখোর ব্যবসায়ী বলেই মনে করতেন। মজনু শাহ ছিলেন প্রথম ধর্মীয় নেতা যিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাঁর কৃষক অনুসারীরা আঠারো শতকের সত্তর থেকে আশির দশক পর্যন্ত উত্তর বাংলার বিভিন্ন অংশ এবং ময়মনসিংহ ও ঢাকায় প্রতিরোধ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছিল।
ফকির সন্ন্যাসী পরিচালিত প্রতিরোধের ব্যর্থতা অবশ্য কৃষক আন্দোলনের চূড়ান্ত পতন ঘটায় নি। বাকেরগঞ্জের বালাকি শাহ, সিলেটের সৈয়দ আগা মুহাম্মদ রেজা বেগ ও কুমিল্লার কালু শাহ প্রমুখ ধর্মীয় নেতা কৃষকদের স্বার্থে সংগ্রাম চালান। ১৭৯২ সালে বাকেরগঞ্জের কৃষকগণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে তাদের পরগনা থেকে অত্যাচারী জমিদারদের বিতাড়িত করে এবং সবাইকে ‘পরগনা নিরিখ’ অনুযায়ী খাজনা আদায়ের নির্দেশ দেয়। বালাকি শাহ নির্দেশ জারি করেন, যেসব জমিদার রায়তদের নিকট থেকে পরগনা নিরিখের অতিরিক্ত খাজনা আদায় করেছে, তাদের অতিরিক্ত খাজনা ফেরত দিতে হবে। তিনি জনৈক শাহ জিয়ানকে কয়েকটি পরগনার অধিপতি ঘোষণা করেন। ১৭৯২ সালে বালাকি শাহ ও শাহ জিয়ানকে সামরিক শক্তিবলে দমন করা হয়। সিলেটের জনৈক ধর্মীয় নেতা ও অভিজাত সৈয়দ আগা মুহাম্মদ রেজা বেগ ১৭৯৯ সালে কৃষক এবং ইংরেজবিরোধী ভূস্বামীদের সমর্থন নিয়ে কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। তাঁর বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করা হয় এবং কয়েকটি যুদ্ধের পর তাঁকে বন্দি করে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।
আঠারো শতকের অধিকাংশ কৃষক বিদ্রোহ ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা পরিচালিত হলেও এগুলি পরিচালনায় ধর্মনিরপেক্ষ নেতৃত্ব সম্পূর্ণ অনুপস্থিত ছিল না। এর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ১৭৮৩ সালের রংপুর কৃষক বিদ্রোহ। রাজস্ব আদায়কারী দেবীসিংহের অত্যাচারে অতিষ্ঠ রংপুর জেলার চাষীরা ক্ষুদ্র ভূস্বামী ধীরাজ নারায়ণের নেতৃত্বে বিদ্রোহ করে এবং কাজীরহাটে অবস্থিত দেবীসিংহের সদরদপ্তর দখল করে নেয়। রায়তরা তাদের নেতাকে নবাব ঘোষণা করে। সরকার প্রথমত বিদ্রোহটি নির্মমভাবে দমন করে এবং অতঃপর দেবীসিংহের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল ও তার অধীনস্থ সকল পরগনায় খাজনা হ্রাস করে বিদ্রোহীদের শান্ত করার চেষ্টা করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা চাষীরা আরেকটি অত্যন্ত সফল প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠিত করে। কোম্পানি সরকার কর্তৃক পার্বত্য এলাকায় জুম চাষীদের কাছ থেকে নগদ খাজনা আদায়ের বিরুদ্ধে চাকমা রাজা ব্রিটিশ শাসন প্রত্যাখ্যান করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং কোম্পানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন। ১৭৮৭ সালে পাহাড়ি সমাজের স্বশাসিত মর্যাদা স্বীকার করে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত না হওয়া পর্যন্ত এ গেরিলাযুদ্ধ অব্যাহত ছিল।
আঠারো শতকের শেষার্ধে ভূমি বন্দোবস্ত ও খাজনা আদায় ব্যবস্থার ক্রমাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সরকারের অধিক ভূমিরাজস্ব সংগ্রহের প্রচেষ্টার কারণে বাংলার কৃষকরা চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হয় এবং এর ফলে কৃষি-অর্থনীতিতে ধস নামে, দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাবলির ফলে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক অস্থিরতা ও গোলযোগ অনিবার্য ছিল। উনিশ শতকেও অনুরূপ বিদ্রোহ দেখা গেছে, কিন্তু সেগুলির প্রকৃতি, ব্যাপ্তি ও সংগঠন বস্ত্তত পূর্ববর্তী শতকের বিদ্রোহগুলি থেকে ভিন্নতর ছিল।
বাংলার কৃষকরা উনিশ শতকে জমিদারদের অধীনস্থ প্রজায় পরিণত হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার সুবাদে জমিদার হন জমির নিরঙ্কুশ মালিক এবং রায়তরা তাদের প্রজা। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আইনের আওতায় জমির নিরঙ্কুশ মালিক জমিদারেরা খাজনা বৃদ্ধি, জমির যথেচ্ছ ব্যবহার এবং অবাধ্য প্রজা উচ্ছেদের ক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু রায়তেরা তাদের এ অবস্থান স্বীকার করতে চায় নি। তারা জমিতে তাদের অধিকার দাবি করে। তাদের যুক্তি ছিল, জমিতে তাদের চিরাচরিত অধিকার ক্ষুণ্ণ করে কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারে না। অধিকন্তু যতদিন তারা ‘জমা’ (ভূমিরাজস্ব) পরিশোধ করবে, শান্তিপূর্ণভাবে জমি চাষ করবে, ততদিন কেউ তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করতে পারে না এবং কেউ পরগনা নিরিখ বা পরগনার নির্ধারিত হারের অধিক খাজনাও ধার্য করতে পারে না।
জমির উপর প্রজাদের অধিকার ও ভূমিরাজস্ব নিয়ে জমিদার ও রায়তদের মধ্যে বিরোধ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রায়শ জমিদারগণ সরকারি সহায়তায় বলপ্রয়োগে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করত এবং রায়তদের খাজনাসহ অন্যান্য আবওয়াব পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো। তবে তারা রায়তদের প্রতিরোধের সম্মুখীনও হচ্ছিল। উনিশ শতকের প্রথমদিকের দুটি স্মরণীয় কৃষক বিদ্রোহ হচ্ছে শেরপুর বিদ্রোহ (১৮২৪-১৮৩৩) ও তিতুমীরের বিদ্রোহ (১৮৩৩)। শেরপুর কৃষক বিদ্রোহ সাধারণভাবে পাগল বিদ্রোহ নামে পরিচিত, কারণ এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেরপুর খানকাহ থেকে ফকির-দরবেশগণ। এ খানকাহর প্রধান টিপু শাহ ছিলেন বিদ্রোহের মূল সংগঠক। পরগনা নিরিখ লঙ্ঘন করে স্থানীয় জমিদারগণ কর্তৃক কয়েকবার খাজনা বৃদ্ধির প্রতিবাদে শেরপুরের আদিবাসী বাঙালি কৃষকেরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং পরগনা থেকে জমিদারদের বিতাড়িত করে। রায়তেরা পরগনাগুলির কর্তৃত্ব গ্রহণ করে এবং সরকারের উদ্যোগে একটা সমঝোতায় পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত নয় বছর তাদের অবস্থান টিকিয়ে রাখে। প্রতিরোধের এক দশকে বহু সংঘর্ষ ঘটে এবং বহু লোক প্রাণ হারায়। একইভাবে বারাসত জেলার রায়তেরাও অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এখানেও বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ধর্মীয় নেতা তিতুমীর।
শেরপুর ও বারাসত বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে প্রধানত ধর্মীয় নেতৃত্বে পরিচালিত কৃষক প্রতিরোধের একটি পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটে। পশ্চিমা শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার, সংবাদপত্র ও জনমতের বিকাশ, কৃষির বাণিজ্যিকীকরণসহ বাজার নিয়ন্ত্রণ শক্তির অগ্রগতি, জনগণের দাবির প্রতি ইঙ্গ-ভারতীয় উদারপন্থি ও মিশনারিদের সমর্থন এবং ব্রিটিশরাজ কর্তৃক শাসনভার গ্রহণ কার্যত সরকার ও নাগরিক অধিকার সম্পর্কে জনগণের ধারণার ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে। এ পর্যায়ে নিপীড়িত কৃষকেরা নিজেরাই সংগঠক ও নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে নীল প্রতিরোধ আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্বারাই সংগঠিত ও পরিচালিত হয়েছে। কলকাতার অনেক সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র বিদ্রোহী চাষীদের পক্ষ সমর্থন করেছিল। ফরায়েজী কৃষক প্রতিরোধ আন্দোলনেও কোনো ব্যতিক্রম ঘটে নি। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দুদু মিয়া। তিনি একজন ধর্মীয় নেতা হলেও তাঁর নেতৃত্ব মজনু শাহ, বালাকি শাহ, টিপু শাহ ও অন্যান্যের মতো ছিল না। নিপীড়ক জমিদারদের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ সংগ্রামকে জোরদার করার জন্যই তিনি আন্দোলনে ধর্মীয় উদ্দীপনা প্রয়োগ করেন।
উনিশ শতকের সত্তরের দশক ও পরবর্তীকালের কৃষক আন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মতৎপরতায় আধুনিকতার ছাপ লক্ষ্যণীয়। পাবনার চাষীরা জমিদার কর্তৃক বলপূর্বক খাজনা আদায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এবং তাদের অধিকারের দাবিতে ১৮৭৩ সালে জোট বা মোর্চা গঠন করে ‘খাজনাবন্ধ’ ধর্মঘট আহবান করে এবং জমিদারগণ তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। অনুরূপভাবে বাকেরগঞ্জের তুষখালি (১৮৭২-৭৫), ফেনীর ছাগলনাইয়া (১৮৭৪) ও মুনশীগঞ্জের (১৮৮০-৮১) কৃষক আন্দোলনে কৃষকেরা অভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। কৃষকদের এধরনের অব্যাহত আন্দোলন এবং তাদের সাংগঠনিক কাঠামোর পরিবর্তন ঔপনিবেশিক সরকারকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। সরকার উপলব্ধি করে, কৃষকদের দাবিদাওয়া পূরণ না করলে অচিরেই সরকারের বিরুদ্ধে সার্বিক কৃষক বিদ্রোহ দেখা দেবে এবং তা খোদ সরকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। ফলত সরকার ১৮৮৫ সালের বাংলার প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করে এবং রায়তদের অধিকার অনেকাংশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
উনিশ শতকের ঘটনাবলি বাংলার কৃষকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ঘটায়। শহরভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলির কৃষক-শাখা অতঃপর কৃষকদের স্বার্থরক্ষার আন্দোলন শুরু করে। নির্বাচনের রাজনীতিতে কৃষকেরা তাদের নিছক সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণেও একটি নিয়ামক শক্তি হয়ে ওঠে। ভারত বিভাগের আগে কৃষক আন্দোলনগুলিতে স্বভাবতই সাম্প্রদায়িকতার অনুপ্রবেশ ঘটে। কিশোরগঞ্জ (১৯৩২) ও অন্যান্য স্থানে কৃষক আন্দোলনে তারই প্রমাণ পাওয়া যায়। বঙ্গভঙ্গের অব্যবহিত পূর্বে তেভাগা, নানকার, টঙ্ক প্রভৃতি সকল আন্দোলনই ছিল বহিরাগত ভাবধারায় প্রভাবিত। এ পর্যায়ে বামপন্থি নেতৃত্বের দ্বারা কৃষকদের আদর্শ ও রণকৌশল নির্ধারিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগ এবং ১৯৫১ সালে পূর্ববাংলার জমিদারি প্রথা বাতিল হওয়ার পর কৃষক আন্দোলনের আরও চরিত্রগত পরিবর্তন ঘটে। ভূমিসংস্কার ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ এবং গ্রামীণ সমাজের রাজনীতিকীকরণের মাধ্যমে কৃষকদের অভাব অভিযোগ প্রশমনের রাষ্ট্রীয় নীতি কৃষক আন্দোলনের চিরায়ত রূপকে একটি অতীত ঘটনায় পর্যবসিত করেছে। [সিরাজুল ইসলাম]