কাসিমবাজার
কাসিমবাজার সতেরো শতকে ভাগীরথীর তীরে একটি বড় বাণিজ্যকেন্দ্র। আঠারো শতকের শেষদিকে কাসিমবাজার একটি সমৃদ্ধ রেশম ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়। মুগল আমলে নির্মিত বিভিন্ন মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থায় কাসিমবাজার ছিল একটি সংযোগস্থল। কেননা পশ্চিমে রাজমহল, ভাগলপুর ও পাটনা এবং পূর্বে ঢাকার সঙ্গে কাসিমবাজারের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ছিল। জেমস রেনেল রচিত The Description of the Roads in Bengal and Bihar (লন্ডন, ১৭৭৯) গ্রন্থে যোগাযোগপথে এ কাসিমবাজার বাংলার অন্যান্য বাণিজ্যকেন্দ্রের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত ছিল তার বর্ণনা রয়েছে। কাসিমবাজার রেশমের আন্তর্জাতিক বাজার হিসেবে সারা বিশ্বে সুপরিচিত ছিল যেমন সুপরিচিত ছিল ভগবানগোলা বন্দর খাদ্যশস্যের জন্য। এ কাসিমবাজারে বেশির ভাগ ইউরোপীয় রেশম ব্যবসায়ী, বিশেষ করে ওলন্দাজ ও ইংরেজদের এজেন্সি ছিল। আঠারো শতকের মধ্যভাগ অবধি কাসিমবাজারের রেশম ব্যবসায়ে আধিপত্য ছিল ওলন্দাজ বণিকদের। আঠারো শতকের পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিক থেকে ইংরেজ বণিকরা ব্যবসায়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। গোটা আঠারো শতক জুড়ে কাসিমবাজার ছিল পূর্ব ভারতে রেশম ও রেশমি থানবস্ত্রের সর্ববৃহৎ বাজার। কাসিমবাজার একটি বিরাট বস্ত্রবয়ন কেন্দ্রও ছিল। এখানে বিপুল পরিমাণ রেশমি ও সুতিবস্ত্র উৎপাদিত হতো এবং সেগুলি এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন অংশে রপ্তানি হতো। কলকাতা ছাড়াও ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ক্ষমতার অপর ঘাঁটি ছিল কাসিমবাজার। সিরাজউদ্দৌলা কর্তৃক ইংরেজদের কাসিমবাজার বাণিজ্যকুঠি আক্রমণ ছিল পলাশীর যুদ্ধ এর অন্যতম কারণ। [সিরাজুল ইসলাম]