ভগবানগোলা
ভগবানগোলা আঠারো শতকে বাংলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত নদীবন্দর। রাজধানী মুর্শিদাবাদের প্রায় আঠারো মাইল দূরে গঙ্গার তীরে অবস্থিত ভগবানগোলা ছিল বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। সারা বছর নদীর নাব্যতা এবং মুর্শিদাবাদ ও পাটনার সঙ্গে জলপথে এর যোগাযোগ সুবিধার কারণে উত্তর ভারতের সঙ্গে বাংলার বাণিজ্যের সংযোগকারী বন্দর হিসেবে নওয়াবদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভগবানগোলার সমৃদ্ধি ঘটে। বন্দরটি বিশেষভাবে খাদ্যশস্যের ব্যবসায়ের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এই বাজারে আগত ইউরোপীয় বণিকদের বিবরণ ও সমসাময়িক বাংলা সাহিত্য থেকে জানা যায় যে, এই বন্দরে খাদ্যশস্য ক্রয়বিক্রয়ের বাজার কয়েক মাইল বিস্তৃত ছিল। মুনাফা ও নিরাপত্তার জন্য এই বিশাল বাজারটি সরকারের খাসমহল হিসেবে নিয়ন্ত্রিত হতো। অর্থাৎ এই বাজার ছিল সরকারের মালিকানাধীন এবং সরাসরি সরকার কর্তৃক পরিচালিত। ইউরোপীয়দের সম্প্রসারিত বাণিজ্য তৎপরতার প্রভাবে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের তুলার ব্যবসায়ের সঙ্গে এই বাজারের সংযোগ স্থাপিত হলে এই বন্দরের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়। খাদ্যশস্য ও তুলার এই বিশাল বাজারের গুরুত্বের কারণে বাংলার নওয়াব বন্দরটির প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করেন। ১৭৪৩ সালে মারাঠারা এই বাজারে চারবার হামলা চালিয়ে লুণ্ঠনের চেষ্টা করে। কিন্তু সরকারের ব্যাপক প্রতিরক্ষা প্রস্ত্ততির কারণে তাদের সে প্রয়াস ব্যর্থ হয়। বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য বাংলার সকল অঞ্চল এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের ব্যবসায়ীরা ভগবানগোলায় তাদের প্রতিনিধি নিয়োজিত রাখত। ইউরোপীয় বণিকরাও সেখানে তাদের প্রতিনিধি মোতায়েন করত। কথিত আছে যে, আঠারো শতকের শেষের দিকে কলকাতা বন্দর গড়ে ওঠার পূর্ব পর্যন্ত ভগবানগোলা পণ্যের বাজার-মূল্যের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করত। [সিরাজুল ইসলাম]