কালীগঞ্জ উপজেলা (গাজীপুর)
কালীগঞ্জ উপজেলা (গাজীপুর জেলা) আয়তন: ২১৪.৬৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫৪´ থেকে ২৪°০২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৬´ থেকে ৯২°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলা, দক্ষিণে রূপগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে পলাশ উপজেলা ও উত্তরখান থানা, পশ্চিমে গাজীপুর সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৬৫২৭৬; পুরুষ ১৩৩২৪৬, মহিলা ১৩২০৩০। মুসলিম ২২০২৭০, হিন্দু ২৮৬৬৪, বৌদ্ধ ১৩, খ্রিস্টান ১৬২৯৪ এবং অন্যান্য ৩৫।
জলাশয় বানার, শীতলক্ষ্যা ও বালু প্রধান নদী এবং বিলাই বিল, নলজুরি খাল ও সুতি খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন কালীগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯৪৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালের ১২ ডিসেম্বর। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর কালীগঞ্জ পৌরসভা ঘোষণা করা হয়।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৭ | ১৩৪ | ১৭৫ | ৪৫৪৩০ | ২১৯৮৪৬ | ১২৩৬ | ৬০.১ | ৫৯.৮ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
১৫.২৯ | ৯ | ২৩ | ৪৫৪৩০ | ২৯৭১ | ৬০.১ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
জাঙ্গালিয়া ৬৯ | ৯১৮৬ | ১৪২৫১ | ১৪৯৩৪ | ৫৯.২ | ||||
জামালপুর ৬০ | ৪৯০৭ | ১৬৪০০ | ১৬৪০৪ | ৫৮.৫ | ||||
তুমুলিয়া ৯৭ | ৫৮৪০ | ১৪৯১৮ | ১৫৪৮৮ | ৬৫.২ | ||||
নাগরী ৯৬ | ৮৩৮৪ | ১৭১২১ | ১৬৯৮২ | ৬৪.২ | ||||
বক্তারপুর ১৭ | ৭০৭৩ | ১৫৫১১ | ১৬৩০৩ | ৫৭.৯ | ||||
বাহাদুরসাদি ১৫ | ৩২৩৮ | ১১৩১১ | ১১০৮৮ | ৬০.৩ | ||||
মোক্তারপুর ৯৪ | ৯২১৫ | ১৯৪০০ | ১৯৭৩৫ | ৫৪.১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বক্তারপুরে ভাটরাজ্যের অধিপতি ঈশা খাঁর সমাধি, সেন্ট নিকোলাস চার্চ (১৬৯৫), চৌরায় পাহলোয়ান শাহ গাজী ও কারফরমা শাহের (র) মাজার ও দিঘি, শাহ বায়েজিদের মাজার ও আট গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (ভাতগাতী)।
ঐতিহাসিক ঘটনা চৌড়ার গাজী বংশের পূর্বপুরুষ কারফরমা শাহ দিল্লির সম্রাটের নিকট থেকে এক জায়গির সনদ লাভ করে চৌড়ায় বসতি স্থাপন করে। গাজী বংশের ভূঁইয়ারা চৌড়ায় তাদের শাসনকেন্দ্র স্থাপন করে দীর্ঘকাল ভাওয়াল অঞ্চল শাসন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর গতিরোধ করার জন্য নলছাটা রেলব্রিজ, বান্দাখোলা রেলব্রিজ ও নাগরীর তিরিয়ায় বিদ্যুৎ টাওয়ার প্রভৃতি স্থাপনা ধ্বংস করে। ১৮ নভেম্বর সোমবাজার খালের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সংঘটিত লড়াইয়ে কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা ওয়াপদা পাওয়ার হাউজ আর্মি ক্যাম্প, থানা ও আড়িখোলা রেলস্টেশন ক্যাম্প দখল করে নেয়। ১ ডিসেম্বর পাকবাহিনী খলাপাড়া ন্যাশনাল জুট মিলের প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা, কর্মচাারকে হত্যা করে। ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ঘোড়াশাল পাক আর্মি ক্যাম্প আক্রমণ করে পাকসেনাদের অবরুদ্ধ করে। ১৪ ডিসেম্বর পূবাইলে ও নলছাটায় যুদ্ধ হয় এবং নলছাটার যুদ্ধে ৭জন পাকসেনা এবং মিত্র বাহিনীর ২জন সদস্য নিহত হয়।
বিস্তারিত দেখুন কালীগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৯৫, মন্দির ১৯, গির্জা ৬।
শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৯.৮%; পুরুষ ৬০.১%, মহিলা ৫৯.৫%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২১, মাদ্রাসা ২৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কালীগঞ্জ শ্রমিক কলেজ (১৯৭০), কালীগঞ্জ আর.এন.এন. পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৯), রাজেন্দ্রনারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০), চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), খৈশড়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), তুমিলিয়া সেন্ট মেরিস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), বেগম রাবেয়া আহমেদ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী কালীগঞ্জ বার্তা (অবলুপ্ত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩২, ক্লাব ৩০, সিনেমা হল ৩, নাট্যদল ১, সাংষ্কৃতিক সংগঠন ৯, মহিলা সমিতি ৬। উদীচী ও খেলাঘর উল্লেখযোগ্য।
দর্শনীয় স্থান নাগরী সেন্ট নিকোলাস ও পানজোরা সাধু অ্যান্টনির গির্জা, বক্তারপুরে বাবুর বাড়ি শ্যুটিং স্পট।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৭.৮৯%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৯%, ব্যবসা ১৪.৮৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৮৫%, চাকরি ১৩.২৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৪.৫৭% এবং অন্যান্য ১২.৬৭%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৮.২৭%, ভূমিহীন ৩১.৭৩%। শহরে ৪৩.৯৫% এবং গ্রামে ৭০.০৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, মিষ্টি আলু, ডাল, করলা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, কলাই, মুগডাল, সরিষা, আখ।
প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, পেঁপে, আনারস, লিচু, আম, পেয়ারা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৭, গবাদিপশু ২০৪, হাঁস-মুরগি ৩৯৫, হ্যাচারি ৩, অন্যান্য ২।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৭৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪১৭ কিমি; রেলপথ ১৪ কিমি; নৌপথ ২৮ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা সিমেন্ট, মার্বেল, টাইলস ও স্লাব ক্রাসিং স্টোন এবং ইটের ভাটা রয়েছে।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ, কাঠের কাজ, পাটজাত দ্রব্য তৈরি।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৮, মেলা ১০। হাটবাজার ও মেলা: কালীগঞ্জ, পুবাইল, কাটারগঞ্জ, ঘোড়াশাল ও চরসিন্দুর হাট, আওড়াখালী, উলুখোলা, দোলানের বাজার এবং ছাতিয়ানি মেলা ও নাগরী সাধু অ্যন্টনির মেলা।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার ৭৮.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ কামতা গ্যাস ক্ষেত্র। উপজেলায় বনভুমির পরিমাণ প্রায় ৩৫ হেক্টর।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৫%, ট্যাপ ৩.৪% এবং অন্যান্য ৪.১%। ২০০০ সালে পরিচালিত এক জরিপ অনুয়ায়ী উপজেলার প্রায় ৮৭ টি অগভীর নলকূপের পানিতে স্বল্পমাত্রায় আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৬৯.০% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৭.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩.১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ৩, ইসলামী ফাউন্ডেশন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৩, মিশনারী হাসপাতাল ১, পশু হাসপাতাল ১।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা। [তপন বাগচী]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কালীগঞ্জ উপজেলা মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০০৭।