কালাই উপজেলা

কালাই উপজেলা (জয়পুরহাট জেলা)  আয়তন: ১৬৬.২৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৫৯´ থেকে ২৫°১১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৮´ থেকে ৮৯°১৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পাঁচবিবি এবং গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে ক্ষেতলালশিবগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে শিবগঞ্জ (বগুড়া) ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে ক্ষেতলাল ও জয়পুরহাট সদর উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৪৩১৯৭; পুরুষ ৭০৮৬০, মহিলা ৭২৩৩৭। মুসলিম ১৩৬৪২৭, হিন্দু ৬৬৬০, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ২২ এবং অন্যান্য ৮৬। এ উপজেলায় সাঁওতাল, বুনো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: হরবতী ও নাগর নদী।

প্রশাসন কালাই থানা গঠিত হয় ১৯ আগস্ট ১৯৮১ এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ৩ জুলাই ১৯৮৩ সালে। পূর্বে কালাই উপজেলা বগুড়া জেলার অন্তর্গত ছিল, ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সালে এটি জয়পুরহাট জেলাভূক্ত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১০১ ১৪৮ ১৬৪৬৪ ১২৬৭৩৩ ৮৬১ ৫৪.০ ৪৯.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজার সংখ্যা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৩.১১ ৩৪ ১৬৪৬৪ ১২৫৬ ৫৪.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আহমেদাবাদ ৩৮ ৫২২০ ৭৫৯৭ ৭৮৬৩ ৪৬.৭
উদয়পুর ৮৫ ৮৮৭৭ ১৩৬০৩ ১৪০০১ ৪৮.৯
জিন্দারপুর ৯৫ ৬২৪৫ ১২৭০৪ ১২৯২২ ৪৮.৯
পুনট ৭৬ ৭৪৮৮ ১৪৬১০ ১৪৭৪৭ ৪৯.১
মাত্রাই ৬৬ ১০০২২ ১৪১৭৩ ১৪৫১৩ ৫১.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নান্দাইল দিঘি, হারুঞ্জা ধাপ ও মাযার (হারুঞ্জা); বলিগ্রাম রাজবাড়ি, বিয়ালা প্রাচীন কীর্তি ও তাম্রশাসন (মাত্রাই)।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে পাকবাহিনী কালাইয়ে এসে তাদের স্থানীয় দোসরদের সহযোগিতায় এলাকার মানুষদের উপর নির্যাতন ও তাদের বাড়িঘর লুটপাট করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করে এবং পাকবাহিনীর ক্যাম্পেও হামলা চালায়। এছাড়া বাখড়া ও নানগোলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়।

বিস্তারিত দেখুন কালাই উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৮%; পুরুষ ৫৪.৭%, মহিলা ৪৫.১%। কলেজ ২, কারিগরী কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪৮, কমিউনিটি স্কুল ৫, মাদ্রাসা ৩৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কালাই মঈন উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী একাল ও সেকাল।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৩৭, সিনেমা হল ২।

দর্শনীয় স্থান নান্দাইল দিঘি (হারুঞ্জা)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৬.৭২%, অকৃষি শ্রমিক ২.২৩%, শিল্প ০.২৪%, ব্যবসা ৮.৭৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০৪%, চাকরি ২.৯২, নির্মাণ ০.৫১%, ধর্মীয় সেবা ০.১% এবং অন্যান্য ৫.৪৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৬৭%, ভূমিহীন ৪০.৩৩%। শহরে ৫৫.৮২% এবং গ্রামে ৫৯.৯০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, আঁখ, সরিষা, শাকসবজি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  গবাদিপশু ১১৩, হাঁস-মুরগি ৯৬।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৮৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ১৫৪.৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা কোল্ড স্টোরেজ, আইস ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, লৌহশিল্প, বেতের কাজ, বাuঁশর কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ৩। পুনট হাট, মোলামগাড়ি হাট, কালাই হাট ও হারুঞ্জা হাট এবং পুনট মেলা, কালাই মেলা ও মোলামগাড়ি মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   আলু, ধান, চাল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৫.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৫%, ট্যাপ ২.২% এবং অন্যান্য ২.৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫১.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৩.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, গ্রোথ সেন্টার ৫, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৭, ক্লিনিক ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, প্রশিকা। [শাহনাজ পারভীন]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কালাই উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।