জয়পুরহাট সদর উপজেলা

জয়পুরহাট সদর উপজেলা (জয়পুরহাট জেলা)  আয়তন: ২৩৬.৭৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°০১´ থেকে ২৫°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৫´ থেকে ৮৯°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পাঁচবিবি উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, দক্ষিণে ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর ও বদলগাছি উপজেলা, পূর্বে কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলা, পশ্চিমে ধামইরহাট উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।

জনসংখ্যা ২৮৯০৫৮; পুরুষ ১৪৭০৯৬, মহিলা ১৪১৯৬২। মুসলিম ২৫৪৭৬৪, হিন্দু ২৯০২৭, বৌদ্ধ ২, খ্রিস্টান ১০০৯ এবং অন্যান্য ৪২৫৬। এ উপজেলায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাওঁ প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় ছোট যমুনা, তুলসিগঙ্গা ও হরবতী নদী।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯১৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৭৪ ১৯২ ৬৯০৩৩ ২২০০২৫ ১২২১ ৭৭.৯ ৬১.৪
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৮.৫৫ ৪৮ ৬৯০৩৩ ৩৭২১ ৭৭.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমদই ১৭ ৭৪৩৯ ১১৩০৬ ১১২৫৬ ৬২.১
চক বরকত ৩২ ৪৫১৮ ৮৩৫৬ ৭৮৮৮ ৬২.৩
জামালপুর ৬৬ ৫১৫১ ১২৭০৩ ১২৪০৮ ৬৯.৬
দোগাছি ৪৭ ৭৭৩৪ ১৭১৫৫ ১৬৫৬৬ ৫৫.২
ধলাহার ৩৮ ৪২৮৫ ৮৮০৬ ৮৫৭৬ ৬১.৭
পুরানাপৈল ৮৫ ৭৪২৬ ১২৮৫০ ১২২৯৮ ৬৪.২
বম্বু ১৯ ৬৩৪১ ১৩৬৪০ ১২৮৭০ ৫৪.৭
ভাদশা ২৮ ৭৫৭৬ ১৭৫৭৬ ১৭৪৩৯ ৬১.০
মোহাম্মদাবাদ ৭৬ ৩৪৬৫ ৯৪২৬ ৮৯০৬ ৬৫.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রয়ারি ঢাকায় মিছিলে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ২৪ ফেব্রুয়ারি গোলাম মাওলা চৌধূরীর সভাপতিত্বে সরকারি ডাক্তারখানা মাঠে জনসভা ও ছাত্র সমাবেশ অনূষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪-৫৫ সালে দর্শনা চিনিকল কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে জয়পুরহাটে আখ চাষীরা আন্দোলন করে।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়পুরহাট ৭নং সেক্টরের অধীন ছিল। ২৩ মার্চ জয়পুরহাটে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৪ এপ্রিল পাকবাহিনী জয়পুরহাট দখল করে। ২৬ এপ্রিল জয়পুরহাট থানার বম্ব ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত বড়াই-কাদিপুর গ্রামে পাকবাহিনী রাজাকার ও আলবদরদের সহায়তায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে তিনশ একাত্তর জন গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। পাগলা দেওয়ান পাকিস্তানি ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা আগস্ট মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে দু’বার আক্রমণ চালায়। এছাড়া উপজেলার গোপীনাথপুর, গড়ুম্বা ও কাশিড়াহাটে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ৫ অক্টোবর পাগলা দেওয়ান গ্রামে জুম্মার নামাজে শরীক প্রায় তিন শতাধিক নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাট শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলায় ১টি বধ্যভূমি রয়েছে এবং ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন জয়পুরহাট সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬৩৭, মন্দির ৪৬, গির্জা ৮, মাযার ২, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কয়তাহার মসজিদ (জয়পুরহাট সদর), কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ (জয়পুরহাট সদর), নাঙ্গাপীরের মাযার, শাহদাৎ আউলিয়ার মাযার, বারো শিবালয় মন্দির (১৭০০ খ্রিস্টাব্দ, বেল আমলা), পাবর্বতী মন্দির (ভাদশা), খঞ্জনপুর চার্চ মিশন (১৮৯৮, খঞ্জনপুর)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৫.৪%; পুরুষ ৬৯.০%, মহিলা ৬১.৬%। কলেজ ৭, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৮, কারিগরি স্কুল ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৯১, মাদ্রাসা ৩৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জয়পুরহাট সরকারি কলেজ (১৯৭২), জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৭২), জয়পুরহাট মহিলা ক্যাডেট কলেজ (২০০৬), খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০১), খঞ্জনপুর মিশন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), উচাই জেরকা আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৫), তেঘর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), জয়পুরহাট সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৭৭), হানাইল নোমানিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯১৮), উত্তর জয়পুর দ্বি-মুখী দাখিল মাদ্রাসা (১৯১৮), জয়পুরহাট সিদ্দিকীয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৬৫)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: নবান্ন, অর্ধসাপ্তাহিক: উত্তর সীমান্ত; সাপ্তাহিক: অভিযান, জয়পুরহাট বার্তা, বঙ্গধরণী, আলোড়ন, বাংলাদেশ গণবার্তা, সংগ্রামী গণবাংলা (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১১, ক্লাব ৬৪, প্রেসক্লাব ২, ক্লাব ২, সিনেমা হল ৫, নাট্যদল ২, শিল্পকলা একাডেমি ১, মহিলা সংগঠন ২, শিশু একাডেমি ১, জেলা পরিষদ মিলনায়তন ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৫, থিয়েটার ২, নাট্যচর্চা কেন্দ্র ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬১.৪২%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩১%, শিল্প ১.১৮%, ব্যবসা ১৩.৬২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.১৩%, চাকরি ৮.৭১%, নির্মাণ ১.৭০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫% এবং অন্যান্য ৫.৭৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৯৪%, ভূমিহীন ৪০.০৬%। শহরে ৪৭.৫২% এবং গ্রামে ৬৩.৩৪% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসলাদি  ধান, পাট, গম, আলু, অাঁখ, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত ও বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  বোনা আমন।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, নারিকেল, কলা, লিচু, পেঁপে, তাল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২০, গবাদিপশু ২৭৬, হাঁস-মুরগি ১৫৬,  হ্যাচারি ৪।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৩৪ কিমি; রেলপথ ১১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা সুগার মিল, অটোরাইস মিল, অটোফ্লাওয়ার মিল, সিমেন্ট তৈরি প্রকল্প।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, বেতের কাজ, বাuঁশর কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩, মেলা ৩। দুর্গাদহ হাট, জয়পুর হাট, পুরানাপৈল হাট, দরগাতলী হাট, হেলকুন্ডা হাট ও খঞ্জনপুর হাট এবং বারো শিবালয় মেলা, তেঘর মেলা, আদিবাসী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  আলু, কলা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৩.০% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলায় ১৯৬৩ সালে গন্ডোয়ানা কয়লা খনি এবং ১৯৬৪ সালে চুনাপাথরের সন্ধান পাওয়া যায়।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৩%, ট্যাপ ৪.০% এবং অন্যান্য ২.৭%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৭.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৩.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৯.৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৬, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৬, ক্লিনিক ১০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয় এবং ১৯২২ সালের বন্যায় ফসল নষ্টসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ।  [শাহনাজ পারভীন]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; জয়পুরহাট সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।