কার্টিয়ার, জন
কার্টিয়ার, জন (১৭৩৩-১৮০২) ১৭৬৯ থেকে ১৭৭২ সাল পর্যন্ত বাংলার ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিলের গভর্নর ছিলেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকুরিতে একজন রাইটার (writer) হিসেবে তিনি ভারতে আসেন। ঢাকায় গোমশতা ও সহকারী হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ১৭৫৬ সালে তিনি বহিষ্কৃত হন। কলকাতার পতনের পর তিনি ফুলতায় গিয়ে অন্যান্য পলাতকদের সঙ্গে মিলিত হন। ক্লাইভ এর নেতৃত্বে কলকাতা পুনরুদ্ধার অভিযানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন এবং এর জন্য কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স কর্তৃক প্রশংসিত হন। পলাশীর যুদ্ধ এর পর খুব দ্রুত তাঁর পদোন্নতি ঘটে। ১৭৬১ সালে তিনি ঢাকা ফ্যাক্টরির প্রধান নিযুক্ত হন। তিনি ১৭৬৭ সালে কলকাতা কাউন্সিলে দ্বিতীয় পদমর্যাদার অধিকারী হন এবং হ্যারী ভেরেলেস্ট এর উত্তরসূরি হিসেবে ১৭৬৯ সালে বাংলায় ফোর্ট উইলিয়ম কাউন্সিলের গভর্নর পদে অধিষ্ঠিত হন।
বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ১৭৬৯-৭০ সালের মহাদুর্ভিক্ষের দ্বারা কার্টিয়ারের শাসনকাল সমালোচনার মুখে পড়ে। মানুষের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এবং বাংলার সমাজ ও অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী কুফলের পরিপ্রেক্ষিতে এ দুর্ভিক্ষ ছিল প্রকৃতই একটি ধ্বংসযজ্ঞ। এককালের জনবহুল এ দেশে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি লোক দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারায়। দুর্ভিক্ষপীড়িত জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সময়োপযোগী ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে কার্টিয়ার ব্যর্থ হন। নায়েব দীউয়ান ও নায়েব নাজিম সৈয়দ মুহম্মদ রেজা খান আসন্ন দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে বারবার জন কার্টিয়ারকে অবহিত করা সত্ত্বেও তিনি তার সতর্কবাণীকে তেমন গুরুত্ব দেন নি। কোম্পানির কর্মচারীরা অবাধে হাটেবাজারে গিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসা ও পণ্য মজুদে লিপ্ত ছিল। দীর্ঘস্থায়ী খরার দরুন শস্যের ফলন ব্যাহত হওয়ায় রায়তরা আর্থিক অনটনে পড়ে; অথচ কোনো রকম রেয়াত ছাড়াই নির্দয়ভাবে তাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়। কার্টিয়ার তার কাউন্সিল সদস্যদের মফস্বল এলাকায় স্বস্ব পদে অবস্থানের এবং কাউন্সিল সভায় যোগদান ও সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত স্বার্থে সেখানে বসবাসের সুযোগ দেন। কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স ১৭৭২ সালে ব্যর্থ গভর্নর জন কার্টিয়ারকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং ওয়ারেন হেস্টিংস তার স্থলাভিষিক্ত হন। এডমন্ড বার্ক বাংলায় তার প্রশাসনের প্রশংসা করেন। কার্টিয়ার ১৮০২ সালের ২৫ জানুয়ারি কেন্টে মারা যান। [সিরাজুল ইসলাম]