কলিকাতা স্কুল-বুক সোসাইটি

ক্যালকাটা স্কুল-বুক সোসাইটি  শিক্ষাবিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান, ১৮১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার ও দেশিয় পন্ডিতদের উদ্যোগে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশ করে সেগুলি মক্তব-মাদ্রাসা-পাঠশালার মতো দেশিয় বিদ্যালয়গুলিতে সরবরাহ করা। সোসাইটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিষদের ২৪জন সদস্যের মধ্যে ১৬জন ছিলেন ইউরোপীয় ও ৮জন দেশিয় এবং ২জন সেক্রেটারির মধ্যে ১জন ইউরোপীয় ও ১জন দেশিয়। দেশিয়দের মধ্যে ছিলেন মৌলবি আমিনুল্লাহ, মৌলবি করম হোসাইন, মৌলবি আবদুল ওয়াহিদ, মৌলবি আবদুল হামিদ, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, তারিণীচরণ মিত্ররাধাকান্ত দেব ও  রামকমল সেন। আমিনুল্লাহ ছিলেন কলকাতা মাদ্রাসার শিক্ষক; করম হোসাইন, মৃত্যুঞ্জয় ও তারিণীচরণ ছিলেন ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের শিক্ষক এবং রাধাকান্ত ছিলেন কলকাতার নব্যধনী ও সমাজপতি। এফ আর্ভিং ও তারিণীচরণ সোসাইটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন।

যেকোনো অঙ্কের বার্ষিক চাঁদা দিয়ে সোসাইটির সদস্য হওয়া যেত। প্রথম বছর চাঁদাদাতা মোট ২২৫জন সদস্যের মধ্যে ১১৭জন ছিলেন ইউরোপীয়, ৬৮জন মুসলমান ও ৩০জন হিন্দু। মুর্শিদাবাদের নবাব জয়নুল আবেদীন, ঢাকার নবাব নুসরত জঙ্গ ও লক্ষ্ণৌর নবাব ইমতিয়াজ-উদ-দৌলা মোটা অঙ্কের চাঁদা দেন।

সোসাইটি প্রথম চার বছর নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করে, পরে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ১৮৩৪ সালের বার্ষিক সভার রিপোর্টে পরিচালনা পরিষদে মুসলিম সদস্য হিসেবে মৌলবি করম হোসাইন, মৌলবি মোহাম্মদ সাঈদ ও সৈয়দ আজিমউদ্দীনের নাম পাওয়া যায়। হিন্দু সদস্যসংখ্যা আনুপাতিক হারে হ্রাস পায়।

সোসাইটির চাঁদাদাতা সদস্যদের উৎসাহে ভাটা পড়লেও সরকারি সাহায্যে আরো কিছুকাল এটি টিকে থাকে এবং পাঠ্যপুস্তক রচনা ও প্রকাশের কাজ চালিয়ে যায়। সোসাইটি ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দুস্থানি, ফারসি ও আরবি ভাষায় পুস্তক ও প্রচারপত্র প্রকাশ করে। ১৮২১ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ছিল ১,২৬,৪৬৪।

স্কুল-বুক সোসাইটির কার্যক্রম মুখ্যত কলকাতার চৌহদ্দির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বিদ্যালয় ভবন ও পাঠ্যপুস্তকের সংস্কার সাধন এবং সেগুলির চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে ইউরোপীয় শাসক ও মিশনারি এবং দেশিয় পন্ডিত-মুনশি এ সংগঠনে একত্রে মিলিত হলেও তাঁরা এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও জ্ঞানচর্চায় বড় রকমের পরিবর্তন আনতে পারেননি। মৌলবি-মুনশিরা উর্দু, ফারসি ও আরবি ভাষাকে অাঁকড়ে থাকায় এবং ইংরেজি ও বাংলা ভাষাকে গ্রহণ না করায় বাঙালি মুসলিম জনসাধারণ এ প্রতিষ্ঠান দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয়নি। যাঁরা শিক্ষা ও গ্রন্থ-রচনায় জড়িত ছিলেন তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন লক্ষ্ণৌ-দিল্লি-আফগানিস্তান-আরব থেকে আগত অভিবাসী। ১৮৬২ সালে সোসাইটি ভার্নাকুলার লিটারেচার সোসাইটির সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়।  [ওয়াকিল আহমদ]