কলারোয়া উপজেলা

কলারোয়া উপজেলা (সাতক্ষীরা জেলা)  আয়তন: ২৩১.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪৮´ থেকে ২২°৫৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৪´ থেকে ৮৯°০৯ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শার্শা, ঝিকরগাছামনিরামপুর উপজেলা, দক্ষিণে সাতক্ষীরা সদরতালা উপজেলা, পূর্বে কপোতাক্ষ নদ এবং কেশবপুর, মনিরামপুর ও তালা উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ

জনসংখ্যা ২৩৭৯৯২; পুরুষ ১১৬৮১১, মহিলা ১২১১৮১। মুসলিম ২২৩৪৫৯, হিন্দু ১২৩৬৩, খ্রিস্টান ১৮১২ এবং অন্যান্য ৩৫৮।

জলাশয় প্রধান নদ-নদী: কপোতাক্ষ, বেতনা, সোনাই এবং বাহুরা খাল, ইছামতি খাল, নোয়াখালী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন কলারোয়া থানা গঠিত হয় ১৮৫১ সালে এবং এ সময় থেকেই সাতক্ষীরা মহকুমার সদর দফতর ছিল কলারোয়া। ১৯৬১ সালে সাতক্ষীরা মহাকুমার সদর দফতর সাতক্ষীরায় স্থানান্তর করা হয়। কলারোয়া থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২ ১১২ ১৩৬ ২৯২৮৩ ২০৮৭০৯ ১০২৮ ৬০.৫৬ ৪৯.৫৯
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.৫৪ ২৭২৫০ ১৮৭৪ ৬১.৩
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১.৬২ ২০৩৩ ১২৭১ ৫০.৭
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কুশাডাঙ্গা ৭৯ ৪৮৩৮ ৮৩৬৪ ৮৭২৬ ৪৬.৯
কয়লা ৮৭ ১৮১৬ ৪২১৬ ৪৩৬৬ ৫৩.২
কেরাগাছি ৬৩ ৪৭০৫ ১০২৭৩ ১০৫৭২ ৪৯.৪
কেরালকাটা ৭১ ৬০০৭ ১০৩৯৯ ১০৬৭৪ ৪৮.৬
লাঙ্গলঝাড়া ২৩ ২৫৩৬ ৫১২৯ ৫২৭৯ ৫৯.৩
চন্দনপুর ১৩ ৬৪৭৬ ১২১৭৩ ১২৫৩৭ ৪৮.৩
জয়নগর ৪৭ ৪০৬১ ৬৯১৯ ৭২২৫ ৫২.৬
জল্লাবাদ ৩৯ ৪৫৬৫ ৮৪৮৪ ৮৮০৬ ৪৬.৩
জোগীখালী ৫৫ ৪৪৬৪ ৬৯৪৩ ৭৬০৭ ৪৯.০
দিয়ারা ১৫ ৪৯৬১ ১০১৩৯ ১০৬৯২ ৪৬.১
সোনাবাড়িয়া ৯৪ ৪৫৯৬ ১০২২৬ ১০৬৫৬ ৫৪.৮
হেলাতলা ৩১ ৪৫৭০ ৯৯৮৬ ১০৩০১ ৪৭.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শ্যামসুন্দর মন্দির ও সোনাবাড়িয়া তিনতলা মঠ। কোঠাবাড়ি থান (সম্রাট জাহাঙ্গীরের দেওয়ান কর্তৃক নির্মিত দূর্গের অংশবিশেষ বলে কথিত), চেড়াঘাট কায়েম মসজিদ (১৮৬২)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা পুকুরপাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে প্রায় ২৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২০ সেপ্টেম্বর একই স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাকবাহিনীর আক্রমণে প্রায় ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকসেনাদের হাতে বন্দী হন। উপজেলার কলারোয়া বাজারে ১টি গণকবর রয়েছে; বালিয়াডাঙ্গা ও কলারোয়ায় ২টি স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুরারিকাটিতে ১টি স্মৃতিফলক স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন কলারোয়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ২।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪০৫, মন্দির ৮, গির্জা ৩।  চেড়াঘাট কায়েম মসজিদ,  মোহাম্মদ শাহ বা মল্লিক শাহের দরগা ও হামিদী সাহেবের দরগা উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫০.৯%; পুরুষ ৫৩.৬%, মহিলা ৪৮.৪%। কলেজ ১০, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৬, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২৪, স্যাটেলাইট স্কুল ৫, মাদ্রাসা ৬৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কলারোয়া সরকারি কলেজ (১৯৬৯), শেখ আমানুল্লাহ ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৩), ধানদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৫), কলারোয়া জি কে এম কে পাইলট হাই স্কুল (১৯৩০), কলারোয়া গার্লস্ পাইলট হাইস্কুল (১৯৬৯), হামিদপুর হামিদিয়া মাদ্রাসা (১৯৪৯), কলারোয় আলিয়া মাদ্রাসা (১৯৮৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাময়িকি: পথিকৃত, সমতট, সূর্যশিখা, সুবর্ণ প্রসূন, দলছুট।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৫, পাবলিক ইনস্টিটিউট ১, ক্লাব ৪১, সিনেমা হল ৩, মহিলা সংগঠন ১২, খেলার মাঠ ২৭, কিশোর থিয়েটার ১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৮.৮৯%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮১%, শিল্প ১.৩৪%, ব্যবসা ১৩.০৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৮৭%, চাকরি ৪.০১%, নির্মাণ ১.০৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮১% এবং অন্যান্য ৪.০৬%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.৮৭%, ভূমিহীন ৪৮.১৩%। শহরে ৪৩.৯৩% এবং গ্রামে ৫২.৮৭% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, পটল, আলু, গম, পান, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, আখ, বাদাম, তামাক, মিষ্টি আলু, ডাল।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, লিচু, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার  ঘের ১২৬৭; মৎস হ্যাচারি ১৫ এবং নার্সারি ৪৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৪৮০ কিমি (হাইওয়ে ৯.৮০ কিমি), আধা-পাকারাস্তা ৩৪.৬০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩০৫.২০ কিমি; নৌপথ ৭৪ নটিক্যাল মাইল (আদমশুমারি ২০০১)।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা ময়দা কল, তেল কল, হিমাগার, বরফকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, সেলাই কাজ, বিড়ি, বুটিক হাউজ, রেশম গুটি।

হাটবাজার, মেলা   হাটবাজার ২৯, মেলা ১০। খোর্দো বাজার, কলারোয়া বাজার, সরসকাটি বাজার, বুঝতলা বাজার, সোনাবাড়িয়া বাজার, বালিয়াডাঙ্গা বাজার উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   চিংড়ি, পাট, পান, তেল, নারিকেল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৪.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৬%, ট্যাপ ০.৬% এবং অন্যান্য ১.৮%। কলারোয়ার প্রায় প্রতিটি গ্রামের অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিক রয়েছে। অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের গড় মাত্রা ১৩৭ মাইক্রোগ্রাম।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৫৪.৩% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪০.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১২, ক্লিনিক ১।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭৭০, ১৭৮৪, ১৮৯৭ ও ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এ উপজেলার বহু লোক মারা যায়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, ওয়ার্ল£ ভিশন, আহছানিয়া মিশন।  [এস.এম সাইফুর রহমান]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কলারোয়া উপজেলা মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদন ২০০৭।