কন্দাল ফসল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
৯ নং লাইন: ৯ নং লাইন:
কচুজাতীয় কন্দ (Aroid)   সাধারণভাবে কচু নামে পরিচিত, Araceae গোত্রভুক্ত [[একবীজপত্রী উদ্ভিদ|একবীজপত্রী]], তৃণজাতীয় উদ্ভিদ; আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মায়। এর স্ফীতমূল সংরক্ষণ অঙ্গ হিসেবে কাজ করে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাওয়া হয়। কিছু কচু ভূমিজ আর অন্যরা লতাজাতীয়, এ দলে [[পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ|পরাশ্রয়ী]] অনেক উদ্ভিদও (epiphytes) রয়েছে। এদের কতক চাষ করা হয় এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়, কিছু সুদৃশ্য উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে লাগানো হয় এবং কতকের ভেষজ মূল্য রয়েছে।
কচুজাতীয় কন্দ (Aroid)   সাধারণভাবে কচু নামে পরিচিত, Araceae গোত্রভুক্ত [[একবীজপত্রী উদ্ভিদ|একবীজপত্রী]], তৃণজাতীয় উদ্ভিদ; আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মায়। এর স্ফীতমূল সংরক্ষণ অঙ্গ হিসেবে কাজ করে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাওয়া হয়। কিছু কচু ভূমিজ আর অন্যরা লতাজাতীয়, এ দলে [[পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ|পরাশ্রয়ী]] অনেক উদ্ভিদও (epiphytes) রয়েছে। এদের কতক চাষ করা হয় এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়, কিছু সুদৃশ্য উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে লাগানো হয় এবং কতকের ভেষজ মূল্য রয়েছে।


Dioscoreaceae গোত্রের স্থানীয়ভাবে পরিচিত গাছআলু, মাছআলু, পেস্তাআলু, সাদাআলু, মোমআলু, গইছাআলু, বরইআলু এবং বেলআলু অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন কন্দ, বুলবিল, বা রাইজোম উৎপন্ন করে; এসব কমবেশি সমগ্র দেশে পাওয়া যায় কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা হয় না। খাবারযোগ্য গাছআলুর বংশবিস্তার সাধারণত হয়ে থাকে ক্ষুদ্রকন্দ (বীজ গাছআলু), কন্দের কলম, বা বুলবিলের মাধ্যমে। বাংলাদেশে উৎপন্ন প্রজাতিসমূহ হচ্ছে Dioscorea alata, D. esculenta, D. bulbifera এবং D. dumetorum।
Dioscoreaceae গোত্রের স্থানীয়ভাবে পরিচিত গাছআলু, মাছআলু, পেস্তাআলু, সাদাআলু, মোমআলু, গইছাআলু, বরইআলু এবং বেলআলু অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন কন্দ, বুলবিল, বা রাইজোম উৎপন্ন করে; এসব কমবেশি সমগ্র দেশে পাওয়া যায় কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা হয় না। খাবারযোগ্য গাছআলুর বংশবিস্তার সাধারণত হয়ে থাকে ক্ষুদ্রকন্দ (বীজ গাছআলু), কন্দের কলম, বা বুলবিলের মাধ্যমে। বাংলাদেশে উৎপন্ন প্রজাতিসমূহ হচ্ছে ''Dioscorea alata'', ''D. esculenta'', ''D. bulbifera'' এবং ''D. dumetorum''।


ক্যাসাভা (Cassava, Manihot esculenta)   Euphorbiaceae গোত্রভুক্ত বহুবর্ষজীবী গুল্ম। ক্যাসাভা পশু ও পোল্ট্রি খাদ্য হিসেবেও ব্যবহূত হয়। গাছ ১ থেকে ৪ মিটার উঁচু হয়; বাংলাদেশে প্রায় ৮১৬ হেক্টর জমিতে জন্মে, গড় ফলন প্রায় ১২ মে টন/হেক্টর; আবাদ ময়মনসিংহের পাহাড়ি ও চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকায় সীমাবদ্ধ যেখানে উপজাতীয়রা এটিকে পরিপূরক প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।
ক্যাসাভা (Cassava, ''Manihot esculenta'')   Euphorbiaceae গোত্রভুক্ত বহুবর্ষজীবী গুল্ম। ক্যাসাভা পশু ও পোল্ট্রি খাদ্য হিসেবেও ব্যবহূত হয়। গাছ ১ থেকে ৪ মিটার উঁচু হয়; বাংলাদেশে প্রায় ৮১৬ হেক্টর জমিতে জন্মে, গড় ফলন প্রায় ১২ মে টন/হেক্টর; আবাদ ময়মনসিংহের পাহাড়ি ও চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকায় সীমাবদ্ধ যেখানে উপজাতীয়রা এটিকে পরিপূরক প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।


শাকআলু (Yam bean)  বৃহৎ সাদা বা বেগুনি ফুলসম্পন্ন তৃণজাতীয় এক লতানো উদ্ভিদ; বংশবিস্তার শাখাকলম, কন্দ বা বীজ থেকে হয়, সাধারণত তৈরি জমিতে লাগনো হয়। বাদামি মূলের পুরু শক্ত বাকল কেটে নিচের সাদা অংশ অনাবৃত করা হয়; ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়; গাছের বয়স ৬-১১ মাস হওয়ার পর কন্দসমূহ (দেখতে সাদা মিষ্টিআলুর মতো) সাধারণত সংগ্রহ করা হয়। সাদা-শাঁসযুক্ত কন্দ রসালো, মিষ্টি ও মচমচে এবং সচরাচর হালকা খাবার হিসেবে কাঁচা খাওয়া হয় এবং সবজি হিসেবে রান্না করা হয়। বাংলাদেশে এটি এপ্রিল-মে মাসের গরমের সময় পাওয়া যায় এবং তৃষ্ণা নিবারণে ব্যবহূত হয়; সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার কিছু এলাকায় ভাল জন্মে।
শাকআলু (Yam bean)  বৃহৎ সাদা বা বেগুনি ফুলসম্পন্ন তৃণজাতীয় এক লতানো উদ্ভিদ; বংশবিস্তার শাখাকলম, কন্দ বা বীজ থেকে হয়, সাধারণত তৈরি জমিতে লাগনো হয়। বাদামি মূলের পুরু শক্ত বাকল কেটে নিচের সাদা অংশ অনাবৃত করা হয়; ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়; গাছের বয়স ৬-১১ মাস হওয়ার পর কন্দসমূহ (দেখতে সাদা মিষ্টিআলুর মতো) সাধারণত সংগ্রহ করা হয়। সাদা-শাঁসযুক্ত কন্দ রসালো, মিষ্টি ও মচমচে এবং সচরাচর হালকা খাবার হিসেবে কাঁচা খাওয়া হয় এবং সবজি হিসেবে রান্না করা হয়। বাংলাদেশে এটি এপ্রিল-মে মাসের গরমের সময় পাওয়া যায় এবং তৃষ্ণা নিবারণে ব্যবহূত হয়; সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার কিছু এলাকায় ভাল জন্মে।


উপরে উল্লিখিত ফসলগুলি ছাড়াও Nymphaceae গোত্রের [[শাপলা|শাপলা]] ও[[পদ্ম|পদ্ম]], Aponogetonaceae গোত্রের ঘেচু, Gingiberaceae গোত্রের শোটি (Curcuma zedoaria), এবং Marantaceae গোত্রের অ্যারারুট ও (Maranta arundinaceae) বাংলাদেশে জন্মে।  [জি পি দাস]
উপরে উল্লিখিত ফসলগুলি ছাড়াও Nymphaceae গোত্রের [[শাপলা|শাপলা]] ও[[পদ্ম|পদ্ম]], Aponogetonaceae গোত্রের ঘেচু, Gingiberaceae গোত্রের শোটি (''Curcuma zedoaria''), এবং Marantaceae গোত্রের অ্যারারুট ও (''Maranta arundinaceae'') বাংলাদেশে জন্মে।  [জি পি দাস]


''আরও দেখুন''  [[আলু|আলু]]; [[কচু|কচু]]।
''আরও দেখুন''  [[আলু|আলু]]; [[কচু|কচু]]।


[[en:Tuber Crop]]
[[en:Tuber Crop]]

০৪:৪৪, ২২ জুলাই ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কন্দাল ফসল (Tuber Crop)  কান্ড বা মূলে শ্বেতসার জমা হয়ে স্ফীত অঙ্গে রূপান্তরিত কতক খাদ্য ফসল। বাংলাদেশে উৎপাদিত গুরুত্বপূর্ণ কন্দাল ফসলসমূহের মধ্যে রয়েছে  আলু, মিষ্টিআলু, কচু, মেটেআলু, কাসাভা ইত্যাদি। স্টার্চ, অ্যালকোহল ঔষধসামগ্রীর মতো বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য তৈরিতেও এসব ফসল ব্যবহার করা যায়।

কন্দাল ফসল: মিষ্টিআলু

স্থানীয়ভাবে আলু হিসেবে পরিচিত গোলআলু বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি এবং পরিপূরক খাদ্যফসল যা উৎপাদনের দিক থেকে ধান ও গমের পর দ্বিতীয় অবস্থানে এবং চাষাধীন জমির পরিমাণের দিক থেকে ধান ও গমের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশে আলুর আওতাধীন জমি ও বার্ষিক উৎপাদন ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যথাক্রমে ছিল ৭ লক্ষ ৪৪ হাজার একর ও ৪১ লক্ষ ৬১ হাজার মে টন। প্রধানত দুধরনের আলু বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়: দেশি জাত (লালশীল, লালপাকরী, হাগরাই, ইন্দুক্কানি) ও বিদেশি উচ্চফলনশীল জাত। এসব জাত প্রধানত দেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে চাষ করা হয়, যা মোট আলুচাষাধীন জমির প্রায় ৩৫% দখল করে আছে। দেশি জাতগুলির কন্দের আকার ছোট এবং ফলন অত্যন্ত কম। অবশ্য, তাদের বাজার মূল্য অপেক্ষাকৃত বেশি। ১৯৬০ সালের পর বাংলাদেশে উচ্চফলনশীল আলুর জাতসমূহের প্রবর্তন শুরু হয়। মোট আলুর উৎপাদন এলাকার প্রায় ৬৫% ভাগে এসবের চাষ হয়। এসব জাতের কন্দ অপেক্ষাকৃত বড় আকারের এবং অধিকতর ফলন দেয়। আদর্শ পরিবেশে উচ্চফলনশীল জাতসমূহ সহজেই ২০-৩০ মে টন/হেক্টর ফলন দিয়ে থাকে। আলুর অবমুক্ত জাতসমূহ হচ্ছে মর্নি, ওরিগো, পেট্রোনিস, মুল্টা, ডায়ামন্ট, কার্ডিনাল, মোনডায়াল, কুফরি, সুন্দরী, হীরা, আলিসা, চমক, ধীরা, গ্রানোলা, ক্লিওপেট্রা, বাইনেল্লা, বারি টিপিএস-১ ও বারি টিপিএস-২।

মিষ্টিআলু Ipomoea batatas, দ্বিবীজপত্রী, তৃণজাতীয় ও বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ যা সাধারণত বর্ষজীবী হিসেবে চাষ করা হয়; স্থানীয়ভাবে এটি মিঠা আলু ও সাকরকন্দ আলু হিসেবেও পরিচিত। চাষের জন্য লতা কেটে লাগানো হয়। উষ্ণ আবহাওয়ায় মিষ্টিআলু অধিক ফলন দেয়। বাংলাদেশে মিষ্টিআলু একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিপূরক খাদ্য। কচি কান্ড ও পাতা শাক ও গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়। এর গড় ফলন প্রায় ১০ মে টন/হেক্টর। বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য মিষ্টিআলুর জাতসমূহের মধ্যে রয়েছে কমলাসুন্দরী (৪০-৪৫ মে টন/হেক্টর), তৃপ্তি (৪০-৫০ মে টন/হেক্টর), দৌলতপুরী (৩০-৩৫ মে টন/হেক্টর), বারি মিষ্টিআলু-৪ (৩০-৩৫ মে টন/হেক্টর) ও বারি মিষ্টিআলু-৫ (৩৫-৪০ মে টন/হেক্টর)।

কচুজাতীয় কন্দ (Aroid)  সাধারণভাবে কচু নামে পরিচিত, Araceae গোত্রভুক্ত একবীজপত্রী, তৃণজাতীয় উদ্ভিদ; আর্দ্র ও ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মায়। এর স্ফীতমূল সংরক্ষণ অঙ্গ হিসেবে কাজ করে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে খাওয়া হয়। কিছু কচু ভূমিজ আর অন্যরা লতাজাতীয়, এ দলে পরাশ্রয়ী অনেক উদ্ভিদও (epiphytes) রয়েছে। এদের কতক চাষ করা হয় এবং খাদ্য হিসেবে ব্যবহূত হয়, কিছু সুদৃশ্য উদ্ভিদ হিসেবে বাগানে লাগানো হয় এবং কতকের ভেষজ মূল্য রয়েছে।

Dioscoreaceae গোত্রের স্থানীয়ভাবে পরিচিত গাছআলু, মাছআলু, পেস্তাআলু, সাদাআলু, মোমআলু, গইছাআলু, বরইআলু এবং বেলআলু অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন কন্দ, বুলবিল, বা রাইজোম উৎপন্ন করে; এসব কমবেশি সমগ্র দেশে পাওয়া যায় কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা হয় না। খাবারযোগ্য গাছআলুর বংশবিস্তার সাধারণত হয়ে থাকে ক্ষুদ্রকন্দ (বীজ গাছআলু), কন্দের কলম, বা বুলবিলের মাধ্যমে। বাংলাদেশে উৎপন্ন প্রজাতিসমূহ হচ্ছে Dioscorea alata, D. esculenta, D. bulbifera এবং D. dumetorum

ক্যাসাভা (Cassava, Manihot esculenta)  Euphorbiaceae গোত্রভুক্ত বহুবর্ষজীবী গুল্ম। ক্যাসাভা পশু ও পোল্ট্রি খাদ্য হিসেবেও ব্যবহূত হয়। গাছ ১ থেকে ৪ মিটার উঁচু হয়; বাংলাদেশে প্রায় ৮১৬ হেক্টর জমিতে জন্মে, গড় ফলন প্রায় ১২ মে টন/হেক্টর; আবাদ ময়মনসিংহের পাহাড়ি ও চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকায় সীমাবদ্ধ যেখানে উপজাতীয়রা এটিকে পরিপূরক প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

শাকআলু (Yam bean) বৃহৎ সাদা বা বেগুনি ফুলসম্পন্ন তৃণজাতীয় এক লতানো উদ্ভিদ; বংশবিস্তার শাখাকলম, কন্দ বা বীজ থেকে হয়, সাধারণত তৈরি জমিতে লাগনো হয়। বাদামি মূলের পুরু শক্ত বাকল কেটে নিচের সাদা অংশ অনাবৃত করা হয়; ১-৩ সপ্তাহের মধ্যে অঙ্কুরিত হয়; গাছের বয়স ৬-১১ মাস হওয়ার পর কন্দসমূহ (দেখতে সাদা মিষ্টিআলুর মতো) সাধারণত সংগ্রহ করা হয়। সাদা-শাঁসযুক্ত কন্দ রসালো, মিষ্টি ও মচমচে এবং সচরাচর হালকা খাবার হিসেবে কাঁচা খাওয়া হয় এবং সবজি হিসেবে রান্না করা হয়। বাংলাদেশে এটি এপ্রিল-মে মাসের গরমের সময় পাওয়া যায় এবং তৃষ্ণা নিবারণে ব্যবহূত হয়; সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার কিছু এলাকায় ভাল জন্মে।

উপরে উল্লিখিত ফসলগুলি ছাড়াও Nymphaceae গোত্রের শাপলাপদ্ম, Aponogetonaceae গোত্রের ঘেচু, Gingiberaceae গোত্রের শোটি (Curcuma zedoaria), এবং Marantaceae গোত্রের অ্যারারুট ও (Maranta arundinaceae) বাংলাদেশে জন্মে।  [জি পি দাস]

আরও দেখুন আলু; কচু