উপকূলীয় মৎস্যচাষ
উপকূলীয় মৎস্যচাষ (Coastal Aquaculture) সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে নিচু জমি, দিঘি, ঘের (পুকুর) বা অনুরূপ জলাশয়ে মাছ, শামুক, ঝিনুক, চিংড়ি ও কাঁকড়াজাতীয় প্রাণীর নিয়ন্ত্রিত চাষ। বাংলাদেশে উপকূলীয় মৎস্যচাষ পুরনো সনাতন ব্যাপার, কিন্তু বিগত সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে বিশ্ববাজারে চিংড়ির চাহিদা ও মূল্য বাড়তে থাকলে মাছ চাষের তুলনায় বাগদা চিংড়ি (Peneus monodon) চাষ অধিক গুরুত্ব পায় যা ম্যানগ্রোভ ও নিচু এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮৩-৮৪ সালে ৫১,৮১২ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়েছে যা ১৯৯৩-৯৪ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ১,৪২,১১০ হেক্টর আর তাতে গলদা চিংড়ির (Macrobrachium rosenbergii) তুলনায় বাগদা চিংড়ির চাষ প্রাধান্য পায়।
উপকূলীয় মৎস্যচাষের বেশির ভাগ খামার বাগেরহাট (২৯%), সাতক্ষীরা (১৯%), খুলনা (১৯%) ও কক্সবাজারে (৩৩%) অবস্থিত। এ ছাড়া কেশবপুরে (যশোর) প্রায় ৪২২ হেক্টরে, কলাপাড়ায় (পটুয়াখালী) ৪৩ হেক্টরে এবং আনোয়ারা ও বাঁশখালীতে (চট্টগ্রাম) ৮৭ হেক্টরে চিংড়ি চাষ হয়।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে কৃষি জমিতে লোনাপানির প্লাবনরোধে পোল্ডার (নিচু জমি) নির্মাণকালে চিংড়ি চাষ অত্যন্ত লাভজনক হয়ে ওঠায় পোল্ডার-ঘেরা অধিকাংশ জমি পরবর্তী সময়ে চিংড়ি চাষের ঘেরে (পুকুর) রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে চিংড়িচাষের জন্য পোল্ডারের ভেতরের এলাকাসমূহে স্বেচ্ছায় লোনাপানি ঢোকানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে অপরিকল্পিত ও দ্রুত চিংড়ি খামারের বিস্তৃতি ঘটায় যেসব পরিবেশগত, প্রাকৃতি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সেগুলির মধ্যে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ক্ষতি, চিংড়ির পোনা সংগ্রহকালে প্লাঙ্কটন সম্পদ ধ্বংস ও পরিবেশ দূষণ অধিক উল্লেখযোগ্য।
সম্প্রতি কক্সবাজার ও মহেশখালীতে গুচ্ছবদ্ধ নিবিড় চিংড়িখামার গড়ে তোলায় মারাত্মক পরিবেশ অবনতির লক্ষণ দেখা দিয়েছে। রোগের প্রাদুর্ভাব ও মহামারীর কারণে অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। [নূরউদ্দিন মাহমুদ]
আরও দেখুন চিংড়ি; মৎস্য উৎপাদন।