আলমডাঙ্গা উপজেলা

আলমডাঙ্গা উপজেলা (চুয়াডাঙ্গা জেলা)  আয়তন: ৩৬৪.৬৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৭´ থেকে ২৩°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৪৭´ থেকে ৮৯°০০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মিরপুর (কুষ্টিয়া) এবং গাংনী উপজেলা, দক্ষিণে চুয়াডাঙ্গা সদর এবং দামুড়হুদা উপজেলা, পূর্বে হরিণাকুন্ড উপজেলা এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, পশ্চিমে মেহেরপুর সদর এবং গাংনী উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৪৫৯২২, পুরুষ ১৭২৯৩২, মহিলা ১৭২৯৯০। মুসলমান ৩৩৬৭১৫, হিন্দু ৯০৫০ এবং অন্যান্য ১৫৭।

জলাশয় প্রধান নদী: কুমারনবগঙ্গা নদী।

প্রশাসন আলমডাঙ্গা থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ১২৩ ২০৪ ৭৮৩৭২ ২৬৭৫৫০ ৯৪৯ ৪৯.৫৪ (২০০১) ৪৩.৪
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৬০ (২০০১) ১৯ ৩২০৪৮ ২৮১৭ (২০০১) ৬৩.১
উপজেলা শহর
আয়তন(বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৪৬.৯৭ (২০০১) ১৪ ৪৬৩২৪ ৮৯৭ (২০০১) ৪৬.৫
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কালিদাসপুর ৫১ ৪৯৩৭ ১১৫৯৫ ১১৭১০ ৪২.০
কুমারী ৮৭ ৫০১৫ ৯১৮৯ ৯০৫৭ ৪৪.৩
খাদিমপুর ৭১ ৬০২৩ ১০১১৭ ৯৭৩৮ ৫৬.৪
খাসকড়া ৭৯ ৭১২৮ ১১৩২৯ ১১৫৩৬ ৪০.১
গাংগানি ৩৯ ৬২৩২ ১২২৮০ ১১৭৬২ ৫৫.৯
চৈথালা ২৭ ৬৫৮০ ১১৩৪০ ১১২৭৩ ৫৪.১
জমজমি ৫৫ ৫৪০৮ ৯১৮৫ ৯৩১৩ ৪০.৩
জেহালা ৬৩ ৫৩৪২ ১১১৬৮ ১১১১৮ ৪৪.৪
ডাউকি ৩১ ৬০৩১ ৯১৭০ ৯৫৬১ ৩৯.০
নাগদহ ৯৪ ১১৭১০ ১৫৯৭৪ ১৬১৯৪ ৩৬.৬
বরাদি ১৫ ৫৩০৩ ৯৮১৪ ৯৭৬৯ ৪১.৮
বেলগাছি ১৩ ৪৬৬৯ ৭১৬২ ৭২৬৪ ৩৯.৮
ভাঙ্গাবাড়ীয়া ২৩ ৬৯২৪ ১৩৯৪৯ ১৩৭৬৫ ৪১.৫
হারদি ৪৭ ৬৪৩৯ ১৪৮৮৬ ১৪৬৫৬ ৪০.৪

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ঘোলদাড়ি মসজিদ (নাগদহ), তিয়রবিলা মসজিদ (খাসকড়া), জমজমি মসজিদ, বাদেমাজু মসজিদ, সোনাতনপুর মন্দির, ঘোলদাড়ি নীলকুঠি।

ঐতিহাসিক ঘটনা আঠারো শতকে আলমডাঙ্গায় কৃষকরা নীলচাষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। মহেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে নীলকরদের প্রতিহত করেন।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলার বালিয়াপুর ও বেনাগাড়ি গ্রামের সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর সম্মুখ লড়াইয়ে বেশ সংখ্যক পাকসেনা ও রাজাকার হতাহত হয়। এছাড়া উপজেলার সুচকা-বাজিতপুর, হাটবোয়ালীয়া, এনায়েতপুর, বাড়াদি, নীলমনিগঞ্জ, পাইকপাড়া, অনুপনগর, কালিলাদহ প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। উপজেলায় ১টি স্থানে (আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের পাশে জি কে খালের তীরে) গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন আলমডাঙ্গা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২২৮, মন্দির ৪, গীর্জা ৪।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৭%; পুরুষ ৪৭.১%, মহিলা ৪৪.৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আলমডাঙ্গা কলেজ (১৯৬৫), এম এস  জোহা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯৪), আলমডাঙ্গা বহুমুখী (পাইলট) মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯১৪), হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৫), মুন্সিগঞ্জ একাডেমি (১৯৪৪)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ১৮, নাট্যদল ৭, সিনেমা হল ৭।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪১.৭৬%, কৃষি শ্রমিক ২৭.৩৫%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৮%, শিল্প ০.৮৪%, ব্যবসা ১২.৫৪%, চাকরি ৩.৭৮%, মৎস্য ০.৪৮%, নির্মাণ ০.৮৭%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট আন্ড রেমিটেন্স ০.৪৩%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.৮৯% এবং অন্যান্য ৬.০১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬২.৪৪%, ভূমিহীন ৩৭.৫৬%। শহরে ৫০.১২% এবং গ্রামে ৬৫.৯৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আখ, ডাল, আলু, ভুট্টা, ছোলা, তামাক, সুপারি, পান।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, সরিষা।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৩, গবাদিপশু ৪, হাঁস-মুরগি ১৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ৩০৫ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ৪৭ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৪৮৪ কিমি; রেলপথ ১৯ কিমি। নৌপথ ১০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পালকি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা চিনিকল, ময়দাকল, ধানকল, চিড়াকল, করাতকল, বরফকল প্রভৃতি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ প্রভৃতি।

হাটবাজার, মেলা   হাটবাজার ২৪, মেলা ২। মুন্সিগঞ্জ হাট, আলমডাঙ্গা হাট, আসমানখালি হাট, গোকুলখালি হাট ও বোয়ালিয়া হাট এবং বাউল মেলা ও পৌষ সংক্রান্তির মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানি দ্রব্য  তামাক, পান, সুপারি, পাট।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৯.৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৪%, ট্যাপ ০.৬% এবং অন্যান্য ২.০%। এ উপজেলার নলকুপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা ৩৪.৯৪%, যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে ৩৪.৮৯% বেশি। ফলে এ উপজেলার অনেকে চর্ম রোগসহ অনেক জটিল রোগে ভুগছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৯.৯% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫২.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে । ৭.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১,স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৪।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, কেয়ার, ওয়েভ ফাউন্ডেশন, সজাগ, সৃজনী।  [ফয়সাল কিবরিয়া]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আলমডাঙ্গা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।