আলম, আভা
আলম, আভা (১৯৪৭-১৯৭৬) উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী। ১৯৪৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর মাদারীপুর জেলা শহরে তাঁর জন্ম। পরে তাঁরা ময়মনসিংহ শহরে স্থায়িভাবে বসবাস করেন। তাঁর পিতা হরিপদ দে ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ব্যক্তি। আভার পিতৃদত্ত নাম ছিল আভা দে। ১৯৬৪ সালে বিশিষ্ট গীতিকার ও সঙ্গীতবোদ্ধা তরীকুল আলমের সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার পর থেকে তিনি আভা আলম নামে পরিচিত হন।
আভা আলমের সঙ্গীতবিদ্যায় হাতেখড়ি হয় পিতার কাছে। পরে ময়মনসিংহের প্রখ্যাত শিল্পী মিথুন দে’র নিকট তিনি উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে তালিম নেন। ১৯৫৯ সালে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্র থেকে তাঁর সঙ্গীত পরিবেশন শুরু হয়। তারপর থেকে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেন। চট্টগ্রাম বেতারে প্রখ্যাত আমানত আলী খাঁ ও ফতে আলী খাঁর সঙ্গে এবং ময়মনসিংহে সালামত আলী খাঁ ও নাজাকত আলী খাঁর সঙ্গে রাগসঙ্গীত পরিবেশন করে তিনি স্বীয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন।
আভা আলম ঢাকার বিভিন্ন সঙ্গীত-আসরে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। স্বামীর চাকরিসূত্রে বিভিন্ন সময়ে তিনি করাচি, রাওয়ালপিন্ডি, হায়দ্রাবাদ প্রভৃতি স্থানে সঙ্গীত পরিবেশন করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। লাহোর ও করাচির বেতার এবং টেলিভিশনেও তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সেখানে থাকাকালে তিনি ওস্তাদ আজহার মজিদের নিকট শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নেন। সে সময় লাহোরে অনুষ্ঠিত এক সঙ্গীত সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন করে তিনি বিদগ্ধ মহলের অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করেন। পাকিস্তানের সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী রোশন আরা বেগমের সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি সে সময়ই। ১৯৭৬ সালে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সঙ্গীত পরিবেশনের সরকারি আমন্ত্রণ পেলেও স্বাস্থ্যগত কারণে সে আমন্ত্রণ রক্ষা করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
আভা আলম বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, সৎসঙ্গীত প্রসার সমিতি, ছায়ানট, আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত একাডেমী ও আতিক সঙ্গীত একাডেমীসহ ঢাকার বিভিন্ন সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমৃত্যু জড়িত ছিলেন। তিনি ঢাকা বোর্ডের উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের বহিরাগত পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিখিল পাকিস্তান সঙ্গীত সম্মেলনে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পুরিয়া ধানেশ্রী রাগে সঙ্গীত পরিবেশন করে শ্রোতাদের মন জয় করেন। তাঁর একটি লং প্লে রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭৬ সালের ২১ নভেম্বর মাত্র ২৯ বছর বয়সে তাঁর অকাল মৃত্যু ঘটে। সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৮ সালে তাঁকে মরণোত্তর ‘একুশে পদক’ দিয়ে সম্মানিত করে। [মোবারক হোসেন খান]