হাতেখড়ি

হাতেখড়ি

হাতেখড়ি হিন্দুধর্মীয় সংস্কার বিশেষ। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুর বিদ্যাচর্চা শুরু হয়। এর আগে তাকে লিখিতভাবে কিছু শেখানো হয় না। প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী এদিন শিশুর হাতে খড়িমাটি ধরিয়ে প্রথম তাকে শ্লেটে লিখতে শেখানো হয়। এজন্যই এ অনুষ্ঠানটির নাম হয়েছে হাতেখড়ি। বর্তমানে শহর এলাকায় অনেকে শ্লেট ও খড়িমাটির  পরিবর্তে কাগজ-কলম এবং গ্রামাঞ্চলে কেউ কেউ তালপতা ও বাঁশের কলম ব্যবহার করে।

হাতেখড়ি অনুষ্ঠানটি সাধারণত শিশুর পাঁচ বছর বয়সের সময় করা হয়; তবে পরিবেশগত কারণ বা অন্য কোনো কারণে এর আগেও করা যেতে পারে। পরে শুরু হয় তার নিয়মিত বিদ্যাচর্চা, অর্থাৎ গৃহশিক্ষকের নিকট বা স্কুলে তার নিয়মিত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

হাতেখড়ি অনুষ্ঠানটি মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে, অর্থাৎ সরস্বতী পূজার দিন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। নিজ বাড়ি বা কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এটি সম্পন্ন হতে পারে বা সরস্বতী পূজামন্ডপেও এক সঙ্গে অনেক শিশুকে হাতেখড়ি দেওয়া যেতে পারে। শিশুকে এ সময় নতুন জামা-কাপড় পরানো হয় এবং ব্রাহ্মণ, মাতুল বা পিতা-মাতা তার হাত ধরে তাকে প্রথম লিখতে শেখান। শিশু তখন হরি, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর নিকট প্রার্থনা করে এবং কুলবিদ্যার স্ত্ততিপূর্বক নিজের শিক্ষণীয় বিদ্যার উপাসনা করে। অর্থশাস্ত্রমতে প্রাচীনকালে এ অনুষ্ঠানে রাজকুমারকে লিপি ও সংখ্যা লেখা শিখতে হতো। হিন্দুসমাজে হাতেখড়ির এ অনুষ্ঠানটি এখনও গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়।  [সুরেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়]