অপটিক্যাল ফাইবার

অপটিক্যাল ফাইবার (Optical Fibre)  খুবই সূক্ষ্ম, স্বচ্ছ কাচতন্তু যার মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমে কোনো একটি প্রতিবিম্ব অথবা তথ্য এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে প্রেরিত হতে পারে। সহজভাবে বলা যায়, অপটিক্যাল ফাইবার হলো আলোর এক ধরনের পরিবাহক। অপটিক্যাল ফাইবারে স্বচ্ছ পদার্থের একটি পাতলা মজ্জা (core) অপেক্ষাকৃত নিচু প্রতিসরাঙ্কের পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে যা আচ্ছাদন হিসেবে পরিচিত। আলোক তরঙ্গসমূহ ফাইবারের পাতলা মজ্জা বরাবর মজ্জা-আচ্ছাদনে কতকগুলি সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ ধারাবাহিক প্রতিফলন হিসেবে পরিচালিত ও পরিবাহিত হয়। মজ্জা-মধ্যস্থ অপদ্রব্যসমূহের কারণে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় সাত শতাংশের মতো আলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিলিকা-ভিত্তিক ফাইবার ব্যবহার করে এটিকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অপটিক্যাল ফাইবার-এর বহুবিধ ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে, যেমন: যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে মেডিক্যাল ইমেজিং ব্যবস্থা এবং শিল্পকারখানা ও শল্যচিকিৎসায় পথনির্দেশক হিসেবে ব্যবহারের জন্য উচ্চ ক্ষমতার লেজার থেকে উৎসারিত আলোককে অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। টেলিফোনের তামার তারকে প্রতিস্থাপন করতে অপটিক্যাল ফাইবার বহুল ব্যবহূত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তামার তারের ভিতর দিয়ে বৈদ্যুতিক প্রবাহ প্রেরণের পরিবর্তে সাংকেতিক বার্তাগুলি আলোক তরঙ্গ আকারে পাঠানো হয়। অপটিক্যাল ফাইবার পদ্ধতিটির স্থাপনা ব্যয় যথেষ্ট বেশি হলেও প্রচলিত ক্যাবল অপেক্ষা দ্রুত, অধিক পরিমাণে তথ্য বহন করতে সক্ষম এবং এতে তথ্য বিকৃতিও অত্যন্ত কম। অপটিক্যাল ফাইবার যোগাযোগ ব্যবস্থাই সম্ভবত অপটিক্যাল ফাইবারের সবচেয়ে বহুল প্রচলিত প্রয়োগ।

যদিও বাংলাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা নেই, তথাপি টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে এখানে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ,  বাংলাদেশ রেলওয়ে তাদের নিজস্ব  টেলিযোগাযোগ (সংকেত প্রেরণকে অন্তর্ভুক্ত করে) ব্যবস্থার প্রয়োজনে অপটিক্যাল ফাইবারের নেটওয়ার্ক কাঠামো গড়ে তুলেছে। বিটিসিএল (Bangladesh Telecommunication Company Limited সম্প্রতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ শহরের টেলিফোন নেটওয়ার্কের অংশবিশেষে অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করেছে। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বা ল্যান (LAN) গড়ে তোলার জন্যও বাংলাদেশে এ প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সিলেটে অবস্থিত  শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য অপটিক্যাল ফাইবারের একটি ল্যান কাঠামো স্থাপন করেছে। টেলিফোন ব্যবস্থায়, একটি একক ফাইবার ক্যাবল শত শত বা এমনকি হাজার হাজার কপার সার্কিটকে প্রতিস্থাপন করতে পারে। অপটিক্যাল ফাইবার ব্যবহার করলে প্রতি ভয়েস চ্যানেলে অনেক কম খরচে অধিক নির্ভরযোগ্যভাবে তথ্য প্রেরণ করা যায়, উপরন্তু এর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় খুবই কম।

ইতিমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামকে সরাসরি সিঙ্গাপুরের সঙ্গে যুক্তকারী  বঙ্গোপসাগর-এর তলা দিয়ে একটি উচ্চ-ক্ষমতার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশকে গ্লোবাল ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিপ্লব সাধিত করেছে। এ ক্যাবলের ব্যবহার ইন্টারনেট ব্রাউজিং-এর গতি প্রচন্ডভাবে বৃদ্ধি করেছে এবং আন্তর্জাতিক টেলিফোন কলগুলির মূল্যও হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে বিকল্প আরেকটি ক্যাবল স্থাপনের চিন্তাভাবনা চলছে।  [কাজী মনোয়ার আবেদিন]

আরও দেখুন  লেজার প্রযুক্তি