খনিজ সম্পদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৪৭ নং লাইন: ৪৭ নং লাইন:
বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব, মধ্য ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জলাভূমিতে পিটের মজুত রয়েছে। মোট মজুতের পরিমাণ ১৭ কোটি টনের বেশি। পিটের তাপোৎপাদক মান পাউন্ড প্রতি ৬০০০ থেকে ৭০০০ বিটিইউ। বাংলাদেশে গার্হস্থ্য কাজে, ইটের ভাটায়, বয়লারের জ্বালানি হিসেবে পিট ব্যবহূত হয়। নিম্নের সারণিতে পিট মজুতের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলো। অবশ্য দেশিয় মজুত থেকে পিট উত্তোলন এখনও শুরু হয় নি।
বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব, মধ্য ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জলাভূমিতে পিটের মজুত রয়েছে। মোট মজুতের পরিমাণ ১৭ কোটি টনের বেশি। পিটের তাপোৎপাদক মান পাউন্ড প্রতি ৬০০০ থেকে ৭০০০ বিটিইউ। বাংলাদেশে গার্হস্থ্য কাজে, ইটের ভাটায়, বয়লারের জ্বালানি হিসেবে পিট ব্যবহূত হয়। নিম্নের সারণিতে পিট মজুতের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলো। অবশ্য দেশিয় মজুত থেকে পিট উত্তোলন এখনও শুরু হয় নি।


পিট# #
''সারণি'' বাংলাদেশে পিট মজুতের বিস্তারিত বিবরণ।
 
{| class="table table-bordered table-hover"
'''সারণি ''' বাংলাদেশে পিট মজুতের বিস্তারিত বিবরণ।
|-
 
| মজুত  || গভীরতা .মি || পুরুত্ব .মি || অঞ্চল বর্গ কিমি || মজুত (কোটি টন || কার্বনের পরিমাণ (%) || ভস্মের পরিমাণ (%) || আর্দ্রতার পরিমাণ (%)# উদ্বায়ী বস্ত্ত (%)
'''মজুত '''#'''গভীরতা .মি'''''')'''#'''পুরুত্ব .মি'''''')'''#'''অঞ্চল'''''' ''' '''(''''''বর্গ কিমি'''''')'''#'''মজুত .কোটি টন'''''')'''#'''কার্বনের পরিমাণ ''''''(%) '''#'''ভস্মের পরিমাণ ''''''(%) '''#'''আর্দ্রতার পরিমাণ ''''''(%)'''#'''উদ্বায়ী বস্ত্ত ''''''(%)'''
|-
 
| বাঘিয়া-চান্দা  || ০-৪.০ || ০.৬-৩.৩ || ৫০০ || ১৫০ || ২৪ || ১৬.৬৩  || ১৭.১০ || ৪২.৩০
বাঘিয়া-চান্দা #০-৪.০#০.৬-৩.৩#৫০০#১৫০#২৪#১৬.৬৩ #১৭.১০#৪২.৩০
|-
 
| কোলামৌজা || ০.০৪-২.৫ || ০.২-৪.০ || ২৫ || || ২৯.২ || ২৪.৮০ || ১৩.৭০ || ৪২.৩০
কোলামৌজা#০.০৪-২.৫#০.২-৪.০#২৫##২৯.২#২৪.৮০#১৩.৭০#৪২.৩০
|-
 
| মৌলভীবাজার  || ০-১.৩ || ১.৬  || ৯.৬ || || ১৭.৮৩ || ৩৬.০৭ || ১৫.৫২  || ৩০.৫৮
মৌলভীবাজার #০-১.৩#১.৬ #৯.৬##১৭.৮৩#৩৬.০৭#১৫.৫২ #৩০.৫৮
|-
 
| চলনবিল || ০.৫-৪.৭৫ || ৩.৩৫-৭.৬৫  || --- || ৬.২ || ১৪.৮০ || ৪৬.১৩ || ৮.৫৩ || ৫৪.১৩
চলনবিল#০.৫-৪.৭৫#৩.৩৫-৭.৬৫ #-#৬.২#১৪.৮০#৪৬.১৩#৮.৫৩#৫৪.১৩
|-
 
| চরকাই || ০-০.৮ || ০.১৩-২.৬  || ১১ || || ১৮.৩২ || ১৭.৬০  || ২৭.৭৭ || ---
চরকাই#০-০.৮#০.১৩-২.৬ #১১##১৮.৩২#১৭.৬০ #২৭.৭৭#-
|-
 
| পাগলা || ১৩.২ || ১৬.৩৭ || ২৫.৯০ || ৩৭.৭০ || ৪৩.৩
পাগলা#-#-#-#১৩.২#১৬.৩৭#২৫.৯০#৩৭.৭০#৪৩.৩


'''''ধাতব খনিজ'''''  খনিজ মজুত অনুসন্ধান চালিয়ে জি.এস.বি বেশ কটি সম্ভাব্য ধাতব খনিজ বলয় চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়েছে। দেশের উত্তরপশ্চিম অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ নমুনা থেকে  [[চ্যালকোপাইরাইট|চ্যালকোপাইরাইট]], বোর্নাইট, চ্যালকোসাইট, কোভেলাইন, গ্যালেনা, স্ফালারাইটের মতো ধাতব খনিজ পাওয়া গেছে।
'''''ধাতব খনিজ'''''  খনিজ মজুত অনুসন্ধান চালিয়ে জি.এস.বি বেশ কটি সম্ভাব্য ধাতব খনিজ বলয় চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়েছে। দেশের উত্তরপশ্চিম অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ নমুনা থেকে  [[চ্যালকোপাইরাইট|চ্যালকোপাইরাইট]], বোর্নাইট, চ্যালকোসাইট, কোভেলাইন, গ্যালেনা, স্ফালারাইটের মতো ধাতব খনিজ পাওয়া গেছে।

০৯:২১, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

খনিজ সম্পদ (Mineral Resources)  ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলাদেশের ভূভাগের বেশিরভাগই বঙ্গীয় অববাহিকার (Bengal Basin) অন্তর্গত। দেশের উত্তর, উত্তরপূর্ব ও পূর্বাংশে এ অববাহিকা টারশিয়ারি যুগের ভাঁজযুক্ত পাললিক শিলাস্তর দ্বারা গঠিত (প্রায় ১২ভাগ)। উত্তরপশ্চিম, মধ্য-উত্তর ও মধ্য-পশ্চিমাংশে অববাহিকার প্রায় ৮ ভাগ প্লাইসটোসিন যুগে উত্থিত  পলল এবং অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ ভূভাগ অসংহত বালি, পলি ও কর্দম দ্বারা গঠিত হলোসিন যুগের সঞ্চয়ন দ্বারা আবৃত। বাংলাদেশে প্যালিওসিন মহাকালের তুরা স্তরসমষ্টিকে প্রাচীনতম উন্মুক্ত শিলাস্তর হিসেবে শনাক্ত করা গিয়েছে। দেশের উত্তরপশ্চিমাংশে খননকার্য পরিচালনাকালে প্রাচীনতর শিলাস্তর যেমন, মেসোজোয়িক ও প্যালিওজোয়িক স্তরসমষ্টি এবং প্রি-ক্যাম্ব্রিয়ান ভিত্তিস্তরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।

ভূ-পৃষ্ঠে অথবা ভূগর্ভের কোনো স্থানে সঞ্চিত খনিজ সম্পদের অবস্থান মূলত সংশ্লিষ্ট স্থানের ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সময়কাল দ্বারা নির্ণীত হয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভূতাত্ত্বিক পরিবেশে সঞ্চিত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদসমূহ হচ্ছেঃ প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, নুড়িপাথর, গন্ডশিলা (Boulder), কাচবালি, নির্মাণকার্যে ব্যবহূত বালু, চীনামাটি, ইটের মাটি, পিট এবং সৈকত বালি ভারি মণিক (Beach Sand Heavy Minerals)।

দেশের অয়েল ও গ্যাস উইন্ডোর মধ্যে বিদ্যমান টারশিয়ারি বরাইল শিলাদল থেকে উৎপন্ন হয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল। উৎপন্ন হওয়ার পর এ প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উপরের দিকে বহু কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত শিলাস্তর ভেদ করে উত্থিত হয়ে নিওজিন ভূবন ও বোকাবিল স্তরসমষ্টির মধ্যস্থিত সুবিধাজনক বেলেপাথর আধারে সঞ্চিত হয়। নুড়িপাথর, কাচবালি, নির্মাণ বালি, পিট ও সৈকত বালি প্রভৃতি খনিজ হলোসিন পললে পাওয়া যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলের ক্ষুদ্র পাহাড়সমূহে বিদ্যমান প্লাইসটোসিন পললে পাওয়া যায় চীনামাটি বা কেওলিন। দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের অল্প গভীরতায়ও চীনামাটি ও কাচবালির মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে। সীমিত মাত্রার উত্তোলনের মাধ্যমে চুনাপাথর, নির্মাণ বালি, কাচবালি, নুড়িপাথর, চীনামাটি ও সৈকত বালি আহরণ করা হচ্ছে। অন্তর্ভূপৃষ্ঠীয় মজুত থেকে চীনামাটি ও কাচবালি এখনও উত্তোলন করা হয় নি। তবে অন্তর্ভূপৃষ্ঠীয় কয়লা ও কঠিন শিলা উত্তোলনের কাজ এগিয়ে চলেছে।

তেল ও গ্যাস  বাংলাদেশে এ পর্যন্ত বিভিন্ন আকৃতির ২২টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এদের মধ্যে ২০টি গ্যাসক্ষেত্রে পরিমাপকৃত গ্যাসমজুতের পরিমাণ প্রায় ২৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। অধিকাংশ গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাসে কন্ডেনসেটের উপস্থিতি অল্প বা অতি অল্প বিধায় এদেরকে শুষ্ক গ্যাস (dry gas) বলা হয়। অল্প কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ  কন্ডেনসেট পাওয়া যায় এবং এদেরকে ভেজা গ্যাস (wet gas) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ভেজা গ্যাসক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে: বিয়ানীবাজার (প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ১৬ ব্যারেল কন্ডেনসেট), জালালাবাদ (প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ১৫ ব্যারেল কন্ডেনসেট) এবং কৈলাশটিলা (প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ১৩ ব্যারেল কন্ডেনসেট)। বর্তমানে দেশে ব্যবহূত মোট বাণিজ্যিক জ্বালানির ৭০ ভাগই প্রাকৃতিক গ্যাসের দ্বারা মেটানো হচ্ছে এবং ভবিষ্যত জ্বালানি চাহিদার সিংহভাগ এ খাত থেকেই পূরণ হবে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সর্বাধিক ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে যার পরিমাণ মোট ব্যবহারের ৪৪ শতাংশ, যার মাধ্যমে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ৬৮ শতাংশ পাওয়া যায়। এর পরেই রয়েছে  সার উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার যার পরিমাণ মোট ব্যবহারের ২৮ শতাংশ এবং  শিল্প, গৃহস্থালী, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য খাতে গ্যাসের ব্যবহার ২২ শতাংশ। সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১২টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে এবং দৈনিক উৎপাদনের পরিমাণ ৯০০ থেকে ৯৩০ মিলিয়ন ঘনফুট।

তৈলকূপ, হরিপুর, সিলেট

দেশের একমাত্র খনিজ তেলক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৬ সালে সিলেটের হরিপুরে। এ তেলক্ষেত্রে তেলের মোট মজুতের পরিমাণ প্রায় ১০ মিলিয়ন ব্যারেল যার মধ্যে উত্তোলনযোগ্য মজুতের পরিমাণ প্রায় ৬ মিলিয়ন ব্যারেল। ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি মাসে হরিপুর তেলক্ষেত্র থেকে তেল উৎপাদন শুরু হয়। উৎপাদন শুরুর পরবর্তী সাড়ে ছয় বছরে এ তেলক্ষেত্র থেকে ০.৫৬ মিলিয়ন ব্যারেল খনিজ তেল উৎপাদন করা হয়। ১৯৯৪ সালের জুলাই মাস থেকে তেল উৎপাদন স্থগিত হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞগণের মতে, হরিপুর তেলক্ষেত্রটিকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করা হয় নি এবং সঠিক উপায়ে মূল্যায়নকার্য পরিচালনার পর পূর্ণমাত্রায় তেল উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে।

গ্যাসক্ষেত্র, ফেঞ্চুগঞ্জ

কৈলাশটিলা ও ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্রে আরও দুটি তেলবাহী শিলাস্তরের সন্ধান পাওয়া গেলেও অর্থনৈতিকভাবে এ দুটি ক্ষেত্র থেকে তেল উৎপাদন লাভজনক হবে কিনা সে বিষয়ে এখনও সম্পূর্ণ জরিপকার্য পরিচালনা করা হয় নি। সাম্প্রতিককালে দেশে একাধিক সংখ্যক আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি  হাইড্রোকার্বন অনুসন্ধানে নিয়োজিত রয়েছে। এ সকল কোম্পানির সঙ্গে পেট্রোবাংলার আওতাভুক্ত এবং দেশের একমাত্র তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান  বাপেক্স সফলভাবে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে নিয়োজিত রয়েছে।

কয়লা  ১৯৫৯ সালে ভূ-পৃষ্ঠের অত্যধিক গভীরতায় সর্বপ্রথম কয়লা আবিষ্কৃত হয়।  বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জি.এস.বি)-এর অব্যাহত প্রচেষ্টায় ৪টি কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ কোম্পানি বি.এইচ.পি-মিনারেলস আরও একটি কয়লাখনি আবিষ্কার করলে দেশে কয়লাখনির মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৫টিতে। আবিষ্কৃত সকল কয়লাখনিই দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। নিচের সারণিতে এ সকল কয়লাখনির বিস্তারিত তথ্য ও কয়লার গুণাগুণ উপস্থাপন করা হয়েছে। আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লাখনির মধ্যে অন্যতম বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়নের কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালে এবং ২০০১ সালের মে মাসে তা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও খনির নকশাজনিত কিছু পরিবর্তন আনয়নের দরুন তা শেষ হতে আরও কিছু সময় লাগবে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তোলনযোগ্য মজুত ৬৪ মিলিয়ন টন এবং বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ মিলিয়ন টন। উত্তোলিত কয়লা ব্যবহার করে ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র খনির অদূরে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

সারণি কয়লাখনির বিস্তারিত তথ্য ও কয়লার গুণাগুণ।

কয়লাক্ষেত্র স্তরের গভীরতা (মিটার) স্তরের গড় পুরুত (মিটার) কয়লাক্ষেত্রের বিস্তৃতি (বর্গ কিমি) মজুত মিলিয়ন টন কার্বনের পরিমাণ (%) উদ্বায়ী পদার্থ (%) ভস্মের পরিমাণ (%) সালফারের পরিমাণ (%) ক্যালরি মান (বিটিউ/পাউন্ড)
জামালগঞ্জ ৬৪০-১১৫৮ ৬৪ ১১.০৬ ১০৫৩ ৪৭ (গড়) ৩৮ (গড়) ২২ (গড়) ০.৬২ (গড়) ১১০০০ (গড়)
বড়পুকুরিয়া ১২৯-৫০৬ ৫১ ৫.২৫ ৩০০ ৪৫.৫-৫৪.৭ ২.২৮-৩.৬০ ১১.৭৯-২৩.৭১ ০.৪৩-১.৩৩ ১০৫৪৭-১২৫২৯
খালাশপীর ২৫৭-৪৮৩ ৫০ ১২.৫৬ ১৪৩ ৩২.০-৮০.৮ ২.৯৩-৩০.৪৭ ৭.৬-৫০.৫১ ০.২৪-৩.১৫ ৭৩৮৮-১৩৮৮০
দীঘিপাড়া ৩২৮-৪০৭ ৬১ নির্ণীত হয় নি নির্ণীত হয় নি ৫১.৩-৬৫.৬ ২৫.২৯-৩৮.২৩ ২.৬৪-২০.০৫ ০.৫১-১.০২ ১০২০০-১৪৭৭৫
ফুলবাড়ী ১৫১ --- --- ৩৮৬ --- --- --- --- ---
কয়লা, বড়পুকুরিয়া, দিনাজপুর

বি.এইচ.পি- মিনারেলস নামক কোম্পানি ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্র আবিষ্কার করে। পরবর্তীতে এ কয়লাখনির উন্নয়নের দায়িত্ব অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি এশিয়া এনার্জি কর্পোরেশন (এ.ই.সি)-এর কাছে অর্পণ করা হয়। এ.ই.সি বর্তমানে খনিটিকে একটি উন্মুক্ত কয়লাখনিতে (open-pit mine) রূপান্তর করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কয়লাখনি থেকে প্রারম্ভিক পর্যায়ে বছরে ২.৯ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যা পরবর্তীতে ৯ মিলিয়ন টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করে প্রধানত ইটখোলা ও অন্যান্য শিল্প কারখানায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

চুনাপাথর  ১৯৬০-এর দশকের প্রথমভাগে দেশের উত্তর-পূর্বভাগে অবস্থিত টাকেরঘাট এলাকায় ইয়োসিনযুগীয় চুনাপাথরের একটি ক্ষুদ্র মজুত থেকে চুনাপাথর আহরণ করে তা একটি সিমেন্ট ফ্যাক্টরীতে সরবরাহ করা হয়।

চুনাপাথর, সিলেট

প্রকৃতপক্ষে এটিই ছিল দেশের প্রথম খনি যেখান থেকে খনিজ সম্পদ আহরণ করা হয়। একই সময় জিওলজিক্যাল সার্ভে অব পাকিস্তান (জি.এস.পি) জয়পুরহাট জেলায় ভূ-পৃষ্ঠের ৫১৫ থেকে ৫৪১ মিটার গভীরতায় ১০০ মিলিয়ন টন মজুতবিশিষ্ট চুনাপাথরের অন্য আরেকটি খনি আবিষ্কার করে। প্রতিষ্ঠানটি তুলনামূলকভাবে অল্প গভীরতায় চুনাপাথরের মজুত অনুসন্ধানের লক্ষ্যে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। জি.এস.পি-এর উত্তরসূরী প্রতিষ্ঠান জি.এস.বি ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাগে নওগাঁ জেলার জাহানপুর ও পরানগর এলাকায় যথাক্রমে ভূ-পৃষ্ঠের ৪৯৩ থেকে ৫০৮ মিটার ও ৫৩১ থেকে ৫৪৮ মিটার গভীরতায় চুনাপাথর আবিষ্কার করে। চুনাপাথরের এ মজুত দুটির পুরুত্ব যথাক্রমে ১৬.৭৬ মিটার এবং ১৪.৩২ মিটার।

কঠিন শিলা, দিনাজপুর

কঠিন শিলা  নির্মাণ সামগ্রীর সংকটপূর্ণ এ দেশে রয়েছে প্রিক্যাম্ব্রিয়ান যুগীয় গ্রানোডায়োরাইট, কোয়ার্জ ডায়োরাইট, নিস প্রভৃতি কঠিন শিলার বিশাল মজুত। জি.এস.বি দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়া নামক স্থানে ভূ-পৃষ্ঠের ১৩২ মিটার থেকে ১৬০ মিটার গভীরতায় এ সকল কঠিন শিলার মজুত আবিষ্কার করে। এ শিলাসমূহের বিশুদ্ধ অবস্থায় আর.কিউ.ডি (Rock Quality Designation) ৬০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। উত্তর কোরিয়া সরকারের সহায়তায় এ খনির উন্নয়ন কাজ পরিচালিত হচ্ছে। এ খনি থেকে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে ২০০২ সালে এবং বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১.৬৫ মিলিয়ন টন।

পিট

বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব, মধ্য ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জলাভূমিতে পিটের মজুত রয়েছে। মোট মজুতের পরিমাণ ১৭ কোটি টনের বেশি। পিটের তাপোৎপাদক মান পাউন্ড প্রতি ৬০০০ থেকে ৭০০০ বিটিইউ। বাংলাদেশে গার্হস্থ্য কাজে, ইটের ভাটায়, বয়লারের জ্বালানি হিসেবে পিট ব্যবহূত হয়। নিম্নের সারণিতে পিট মজুতের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হলো। অবশ্য দেশিয় মজুত থেকে পিট উত্তোলন এখনও শুরু হয় নি।

সারণি বাংলাদেশে পিট মজুতের বিস্তারিত বিবরণ।

মজুত  গভীরতা .মি পুরুত্ব .মি অঞ্চল বর্গ কিমি মজুত (কোটি টন কার্বনের পরিমাণ (%)  ভস্মের পরিমাণ (%)  আর্দ্রতার পরিমাণ (%)# উদ্বায়ী বস্ত্ত (%)
বাঘিয়া-চান্দা  ০-৪.০ ০.৬-৩.৩ ৫০০ ১৫০ ২৪ ১৬.৬৩  ১৭.১০ ৪২.৩০
কোলামৌজা ০.০৪-২.৫ ০.২-৪.০ ২৫ ২৯.২ ২৪.৮০ ১৩.৭০ ৪২.৩০
মৌলভীবাজার  ০-১.৩ ১.৬  ৯.৬ ১৭.৮৩ ৩৬.০৭ ১৫.৫২  ৩০.৫৮
চলনবিল ০.৫-৪.৭৫ ৩.৩৫-৭.৬৫  --- ৬.২ ১৪.৮০ ৪৬.১৩ ৮.৫৩ ৫৪.১৩
চরকাই ০-০.৮ ০.১৩-২.৬  ১১ ১৮.৩২ ১৭.৬০  ২৭.৭৭ ---
পাগলা ১৩.২ ১৬.৩৭ ২৫.৯০ ৩৭.৭০ ৪৩.৩

ধাতব খনিজ  খনিজ মজুত অনুসন্ধান চালিয়ে জি.এস.বি বেশ কটি সম্ভাব্য ধাতব খনিজ বলয় চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়েছে। দেশের উত্তরপশ্চিম অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ নমুনা থেকে  চ্যালকোপাইরাইট, বোর্নাইট, চ্যালকোসাইট, কোভেলাইন, গ্যালেনা, স্ফালারাইটের মতো ধাতব খনিজ পাওয়া গেছে।

নির্মাণ কাজের বালি  দেশের বিভিন্ন নদনদীর তলদেশে এ বালি পাওয়া যায়। প্রধাণত মাঝারী থেকে মোটা দানাদার কোয়ার্টজ সমন্বয়ে এ বালি গঠিত। দালান, সেতু, রাস্তা ইত্যাদি নির্মাণে এ বালি ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়।

নুড়িপাথর  দেশের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্ত এলাকায় হিমালয়ের পাদদেশ বরাবর নুড়িপাথর পাওয়া যায়। বর্ষাকালে উজান এলাকা থেকে এসব নুড়িপাথর নদী দ্বারা বাহিত হয়ে আসে। নুড়িপাথর মজুতের মোট পরিমাণ প্রায় ১ কোটি কিউবিক মিটার। এ মজুত উন্নয়ন কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে।

গন্ডশিলা  বাংলাদেশের বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার গন্ডশিলাসমুহ মূলত পাললিক শিলাজাত। অপরদিকে বৃহত্তর সিলেট জেলার জৈন্তাপুর ও ভোলাগঞ্জ এলাকার গন্ডশিলাসমূহের উৎসশিলা হলো আগ্নেয় বা রূপান্তরশিলা। এ সব অঞ্চল ছাড়াও সংলগ্ন পর্বতমালা থেকে উৎসারিত অসংখ্য পাহাড়ি নদীর তলদেশে ও নদীর কাছাকাছি এলাকায়ও গন্ডশিলা মজুত হয়। সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এইসব পাহাড়ের অধিকাংশ অবস্থিত। টেকনাফের সমভূমি অঞ্চলের তিনটি স্থানে এবং উখিয়া উপজেলার ইনানীতে গন্ডশিলা সঞ্চিত আছে। টেকনাফ-কক্সবাজার সমুদ্রতীরের ৭টি স্থানে গন্ডশিলার আলাদা আলাদা মজুত রয়েছে।

চীনামাটি  বাংলাদেশে চীনামাটির উল্লেখযোগ্য মজুত রয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের উপরে বা ভূ-পৃষ্ঠের সামান্য নিচে নেত্রকোণা জেলার বিজয়পুর (২৫ লক্ষ ৭ হাজার টন), শেরপুর জেলার ভুরুংগা (১৩ হাজার টন) ও চট্টগ্রাম জেলার হাইটগাঁও, কাঞ্চপুর, এলাহাবাদ (১৮ হাজার টন) এবং ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়ায় (১ কোটি ৫০ লক্ষ টন) চীনামাটির মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে। চীনামাটি বলতে মূলত কেয়োলিন কাদা মণিক দিয়ে গঠিত সিরামিক শিল্পে ব্যবহার্য উন্নতমানের কাদাকে বোঝানো হয়ে থাকে।

কাচবালি, কুমিল্লা

কাচবালি  বাংলাদেশে কাচবালির উল্লেখযোগ্য মজুত রয়েছে। ভূ-পৃষ্ঠের উপরে বা ভূ-পৃষ্ঠের সামান্য নিচে বালিজুরী (৬ লক্ষ ৪০ হাজার টন), শাহজিবাজার (১০ লক্ষ ৪০ হাজার টন) ও চৌদ্দগ্রামে (২ লক্ষ ৮৫ হাজার টন) এবং ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরে মধ্যপাড়ায় (১ কোটি ৭২ লক্ষ টন) ও বড়পুকুরিয়ায় (৯ কোটি টন) কাচবালির মজুত আবিষ্কৃত হয়েছে। কাচবালি হলুদ থেকে ধুসর এবং সূক্ষ্ম থেকে মাঝারী আকারের কোয়ার্টজ দিয়ে গঠিত।

বাংলাদেশের উপকূলীয় বলয় ও উপকূলীয় দ্বীপসমূহে সৈকত বালির মজুত চিহ্নিত করা হয়েছে। এ সৈকত বালিতে বিভিন্ন ধরনের ভারী মনিকের মজুত রয়েছে, যেমন: জিরকন (১,৫৮,১১৭ টন), রূটাইল (৭০,২৭৪ টন), ইলমেনাইট (১০,২৫,৫৫৮ টন), লিউকক্সিন (৯৬৭০৯ টন), কায়ানাইট (৯০,৭৪৫ টন), গারনেট (২,২২,৭৬১ টন), ম্যাগনেটাইট (৮০,৫৯৯ টন) ও মোনাজাইট (১৭,৩৫২ টন)। একটি অস্ট্রেলীয় কোম্পানি এ বালি উত্তোলনের লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা জরিপ চালানোর অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছে।

সৈকত বালি, নেত্রকোনা

ইটের মাটি  ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার প্লাইসটোসিন ও হলোসিন যুগীয় ইটের মাটির খনিজতাত্ত্বিক, রাসায়নিক ও প্রকৌশলগত গুণাগুণ বহুল প্রমাণিত। হলোসিন ও প্লাইসটোসিন এমনকি নবীন টারশিয়ারি নমুনার সামগ্রিক রাসায়নিক ও প্রকৌশলগত গুণাগুণ উত্তম মানের ইট প্রস্ত্ততের জন্য সন্তোষজনক। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী এবং এ.কে.এম খোরশেদ আলম]

বাংলাদেশের খনি  ভূগর্ভ অথবা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে কয়লা, আকরিক, মূল্যবান পাথর, কঠিন শিলা ইত্যাদি উত্তোলনের প্রক্রিয়া। অবিভক্ত বাংলায় প্রথম খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয় ১৭৭৪ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাণীগঞ্জ কয়লাখনি থেকে। এরপর ভারতের ঝরিয়া, বোকরাও ও করণপুরাতে অবস্থিত কয়লা খনিসমূহ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। ১৮৫৭ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত সময়কালে ভূতত্ত্ববিদগণ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কয়লাখনির অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা ব্যক্ত করেন। ভূতাত্ত্বিকগণের উপরিউক্ত মতামতের ভিত্তি ছিল পশ্চিমবঙ্গের রাণীগঞ্জের কয়লাসমৃদ্ধ অঞ্চল এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ভূগর্ভের ভূতাত্ত্বিক সামঞ্জস্য। এ সম্ভাবনা সত্ত্বেও পাকিস্তান আমলে এ অঞ্চলে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানকার্য ছিল অবহেলিত। ১৯৫৯ সালে আমেরিকার স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাকুয়াম অয়েল কোম্পানি- স্ট্যানভাক (STANVAC) কর্তৃক তৎকালীন  পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে তেল অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে  কূপ খনন করার সময় এদেশে উন্নতমানের খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির অনুমান যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়। ১৯৮৫ সালে দিনাজপুর জেলার বড়পুকুরিয়াতে, ১৯৮৯ সালে রংপুর জেলার খালাশপীর নামক স্থানে এবং ১৯৯৫ সালে দিনাজপুরের দীঘিপাড়াতে এবং ১৯৯৭ সালে একই জেলার জেলার ফুলবাড়ীতে কয়লাখনি আবিষ্কৃত হয়। ১৯৭৪-৭৫ সালে দিনাজপুর জেলার মধ্যপাড়া নামক স্থানে ও সংলগ্ন এলাকায় ভূ-পৃষ্ঠের অতি অল্প গভীরতায় কঠিন শিলার খনি পাওয়া যায়।

খনি বিপর্যয়  খনি খনন কর্মকান্ডে মানুষ ও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নানা বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে খনি নির্মাণে পরিবেশ ও শ্রমনিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বিষয়গুলি সাধারণভাবে খনি থেকে নিষ্কাশিত পানি দ্বারা সৃষ্ট দূষণ, পানি প্রবাহ পথে পলি ও তলানি জমা হওয়া, শব্দদূষণ, ভূমিকম্প, বায়ুদূষণ, আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে বিঘ্ন সৃষ্টি, কৃষি জমির ক্ষতি,  ভূমিধস, অগ্নিকান্ডের সম্ভাবনা ইত্যাদি।

বড়পুকুরিয়া ও মধ্যপাড়া খনি দুটির কোনোটিতেই এখন অবধি পূর্ণাঙ্গ পরিবেশের প্রভাব নিরূপণ সমীক্ষা (Environmental Impact Assesment) পরিচালিত হয় নি। খনি কর্মকান্ডের ফলে কিছু সমস্যা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রবলভাবে দেখা দিয়েছে। সেখানে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ নির্মাণ প্রক্রিয়ার অনুষঙ্গ হিসেবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খনিজ বর্জ্য উত্তোলিত হয়েছে যা সন্নিহিত এলাকায় স্ত্তপাকারে জমা করা হয়েছে। খনিজ বর্জ্যের এ স্ত্তপগুলি ওই এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।

বর্তমানে খনি দুটি থেকে প্রতিদিন কয়েকশত ঘনমিটার পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। খনির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পানি নিষ্কাশনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে থাকবে। যদি খনির পানি যথাযথ পরিবীক্ষণ ও পরিশোধন ছাড়াই পার্শ্ববর্তী এলাকায় ফেলা অব্যাহত রাখা হয় তাহলে সেখানকার পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে বাধ্য। ১৯৯৮ সালের ৫ এপ্রিল বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে আকষ্মিকভাবে ঘণ্টায় ৬০০-৮০০ ঘনমিটার হারে পানির ঢল নেমে আসায় খনি খননে বড় ধরনের বাধার সৃষ্টি হয়। ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ বা টানেল নির্মাণের প্রয়োজনে বিষ্ফোরণ ঘটানোর পরপরই এ দুর্ঘটনা ঘটে। সুড়ঙ্গের উপরের অংশ থেকে বড় আকৃতির ভূমিধ্বস হওয়ার পর উপরের স্তরের পানি অকষ্মাৎ প্রবল বেগে নেমে এলে কর্মরত কর্মীরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এ দুর্ঘটনার পর বড়পুকুরিয়া খনি কয়েক মাসের জন্য পানিতে নিমজ্জিত থাকে এবং পরবর্তীতে খনি থেকে পানি অপসারণের জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া খনির ভূগর্ভ থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০-৪৫০ ঘনমিটার হারে পানি উত্তোলন অব্যাহত রেখে খনিকে আবারও নিমজ্জন থেকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এ দুর্ঘটনার কারণে কর্তৃপক্ষ খনির নকশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে। খনির নকশা পুনরায় নির্ধারণ করায় খনির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করতে বেশি সময় লাগবে এবং আহরণ উপযোগী কয়লা সম্পদের পরিমাণ কমে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে।

কয়লা খনি অবধারিতভাবেই ধুলা ও গ্যাস সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। বড়পুকুরিয়া কয়লায় গ্যাসের উপস্থিতি নগণ্য বিধায় খনন প্রক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস নিঃসরণ ও মিথেন গ্যাস সম্পর্কিত ঝুঁকি কম। খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সময় প্রচুর কয়লার গুড়াও উৎপাদিত হবে। কিন্তু উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হলে কয়লার গুড়া ও ধুলা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। খনির বায়ুদূষণ একটি উদ্বেগজনক বিষয়। কয়লা, জ্বালানি তেল ও লুব্রিকেন্ট দহনের ফলে ভূগর্ভস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠের বাতাস দূষিত হতে পারে। কয়লা ও কঠিনশিলার খনি থেকে খনিজ আহরণ, খনিতে বিষ্ফোরণ, পরিবহণ প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত ধুলা সাধারণভাবে খনিতে কর্মরতদের ও সন্নিহিত এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি স্ব-প্রজ্জ্বলন সম্ভাবনার বিবেচনায় মধ্যম ঝুঁকির পর্যায়ভুক্ত। কয়লার স্ব-প্রজ্জ্বলন একটি স্বতঃস্ফুর্ত প্রক্রিয়া, যাতে খনির কয়লা বাতাসের অক্সিজেনের সঙ্গে সংযোজিত হয়ে তাপ, আলো এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড ও বাষ্পের মতো বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ করে। এজাতীয় স্ব-প্রজ্জ্বলন সংঘটিত হলে বড়পুকুরিয়া খনি ও তার সংলগ্ন পরিবেশে মারাত্মক বিপদ ঘটতে পারে।

বর্তমানে গৃহীত খনন পদ্ধতিতে বড়পুকুরিয়ায় গড়ে প্রায় ৩৬ মিটার পুরু ৬নং স্তর থেকে কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু কয়লা উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভে সৃষ্ট শূন্যস্থান ভরাট করার কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত পরিকল্পিত হয় নি। ভূগর্ভে সৃষ্ট শূন্যতাজনিত কারণে ভূ-উপরিস্তরের ধ্বস কিভাবে মোকাবেলা করা হবে তা স্পষ্ট নয়। কয়লাস্তরের উপরে প্রায় ১০০ মিটারেরও বেশি পুরু অদৃঢ় বালিময় ভূগর্ভস্থ টারশিয়ারী ডুপি টিলা স্তরসমষ্টির উপস্থিতির কারণে কয়লাস্তরে সৃষ্ট শূন্যতা অপূর্ণ থাকলে তা খনি ধ্বসজনিত সমস্যার সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। কয়লা আহরণে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের ব্যবস্থা না করলে বড়পুকুরিয়া ও সন্নিহিত এলাকায় অনিয়ন্ত্রিত ভূমিধ্বস সৃষ্টি ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

বড়পুকুরিয়া ও মধ্যপাড়া খনিতে সুড়ঙ্গ ও অন্যান্য ভূগর্ভস্থ উন্নয়ন কাজে বিপুল পরিমাণ বিষ্ফোরক ব্যবহারের ফলে খনি ও সন্নিহিত এলাকায় উল্লেখযোগ্য কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। মধ্যপাড়ায় প্রতিদিন ৫,৫০০ টন পাথর উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রায় ২,৬৭০ কিলোগ্রাম বিষ্ফোরক ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। নিয়মিত বিষ্ফোরণের কারণে খনির উপরে সন্নিহিত এলাকার পুরানো কাঠামোগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।

পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৭৭-এ খনি প্রকল্পসমূহকে লাল শ্রেণিভুক্ত শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সে কারণে বড়পুকুরিয়া ও মধ্যপাড়া খনি দুটিকেও বিধি অনুযায়ী ছাড়পত্র পেতে হলে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ রিপোর্ট, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, বর্জ্য নিক্ষেপ ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য দলিল-পত্রাদি প্রস্ত্তত করে তা বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তরে পেশ করা প্রয়োজন।  [মুশফিকুর রহমান]