স্থানীয় সরকার

স্থানীয় সরকার নিম্নতম পর্যায়ের বা স্থানীয়ভাবে সংগঠিত সরকার ব্যবস্থা। বাংলায় সব যুগেই স্থানীয় সরকার ছিল; তবে বিভিন্ন যুগে এর ধরন ছিল ভিন্নতর। গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানই স্থানীয় সরকার কাঠামো গড়ে তুলেছিল, আর এ প্রতিষ্ঠানের ওপরই মূলত নির্ভরশীল ছিল প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার সরকার ব্যবস্থা। গ্রামসমাজ নিজ নিজ শাসনকার্য পরিচালনা করত। রাজা খাজনা পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতেন। সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত অনেক প্রতিষ্ঠান ছিল, যেমন গ্রামপ্রধান ও গ্রাম পরিষদ ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে দু’ধরনের উদ্দেশ্য ছিল, একদিকে রাজস্ব আদায় এবং অন্যদিকে উৎপাদন অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জনগণকে সংগঠিত করা এবং রাজ্যে সুখ ও সমৃদ্ধি বজায় রাখা। সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ, গ্রামিকা অথবা গ্রামপাল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের অধীনে স্থানীয় প্রশাসনের প্রকৃতি কেমন ছিল তার বিস্তারিত আলোচনার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণাদি নেই। খুব সম্ভবত গ্রাম পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন স্তরে কেন্দ্রীয় শাসন সম্প্রসারিত ছিল, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ছিল না। সম্ভবত সেখানে সামাজিক পরিষদ গঠনের মাধ্যমে এক ধরনের স্থানীয় পরামর্শক ব্যবস্থার প্রচলন ছিল।

মধ্যযুগে স্থানীয় সরকার ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে বাংলায় তুর্ক-আফগান শাসন প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ইতিহাসবিদগণ মধ্যযুগের শুরু বলে গণ্য করে থাকেন। মধ্যযুগে গ্রাম প্রশাসন ছিল পঞ্চায়েতের হাতে। প্রতি গ্রামে পরিষদ বা পঞ্চায়েত ছিল। এ পরিষদই গ্রাম প্রধান নিয়োগ বা নির্বাচন করত। গ্রামপ্রধান গ্রাম এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতেন। গ্রামপ্রধান কৃষকদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতেন এবং তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রেরণ করতেন। রাজস্ব সংগ্রহে বিলম্ব ঘটলে তাকে জবাবদিহি করতে হতো। শস্য এবং রাজস্বের হিসাব রক্ষণের জন্য গ্রামপ্রধানের তত্ত্বাবধানে একজন পাটওয়ারী বা গ্রাম হিসাবরক্ষক থাকতেন। গ্রামের অধিবাসীদের শিক্ষা, জলসেচ, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এবং নৈতিক আচরণ তদারকির দায়িত্ব ছিল পঞ্চায়েতের। মেলা অনুষ্ঠান ও উৎসবাদি উদ্যাপন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও পঞ্চায়েতের উপর ন্যস্ত ছিল।

প্রাচীন যুগের মতো মধ্যযুগে একই ধরনের প্রশাসনিক ইউনিট ছিল কিনা তা সুস্পষ্ট নয়। তবে মনে হয়, মুগল আমলে রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থা অনেকটা সংগঠিত রূপ লাভ করে এবং শেষদিকে স্থানীয় প্রশাসন অধিকতর গতিশীল ছিল। ফলে মুগল শাসনামলে রাজস্ব ও সাধারণ প্রশাসনের মূলকেন্দ্র রূপে আবির্ভূত হয় সরকার/চাকলা ও পরগণা। মধ্যযুগে পরিষদ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় আলোচনা ও মতবিনিময়ের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। ব্যবস্থাটি ছিল নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের শাসনের বিস্তৃতি। এই দুই বৈশিষ্ট্যের কারণে গ্রাম পর্যায়ে স্বশাসিত সরকার বিরাজমান ছিল কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। মধ্যযুগে বিশেষ করে মুগল আমলে বাংলায় শহর গুরুত্ব লাভ করে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় তাদের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল শহরাঞ্চলে। এ যুগে নগর সংস্থার মূলভিত্তি হিসেবে কোতোয়ালের কার্যালয় স্থাপিত হয়। সম্রাটের সনদের মাধ্যমে কোতোয়াল নিয়োগ লাভ করতেন। তিনি ছিলেন উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা ছিল তার  প্রধান দায়িত্ব। তিনি নগর রক্ষীবাহিনী, গুপ্তচর বাহিনী এবং একপাল ঘোড়া পোষণ করতেন। নগর জীবনের প্রায় সবকিছুই ছিল তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।

ঔপনিবেশিক আমলে স্থানীয় সরকার ব্রিটিশ শাসন প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যমান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ওপর তেমন হস্তক্ষেপ করে নি। কেবল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অপসারণ ঘটায়, আর বিলেতি মডেলের নতুন ধরনের স্থানীয় শাসন চালু করে। পরগণা ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটানো হয় এবং একইভাবে পঞ্চায়েত ব্যবস্থারও। স্থানীয় সরকারের মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায় দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন এবং আদালত; আর জমিদার ও অন্যান্য ভূম্যাধিকারী সমাজের স্বাভাবিক নেতায় পরিণত হন।

অবশ্য ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে জমিদারি প্রতিষ্ঠান তার সম্ভাবনা হারায়। ১৮৫৮ সালে কোম্পানি শাসনের অবসান এবং সংসদীয় অঙ্গীকার এদেশের জনগণকে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের অংশীদার করে তোলে, আর স্থানীয় শাসনে জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। তাই সরকার চৌকিদারি আইন ১৮৭০ পাস করে। এ আইনে ঐতিহ্যবাহী পঞ্চায়েত ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার চেষ্টা করা হয়। এ আইন গ্রাম পর্যায়ে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট পঞ্চায়েত নিয়োগ করার ক্ষমতা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে ন্যস্ত করে। গ্রামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য চৌকিদার নিয়োগ করা ছিল পঞ্চায়েতের প্রাথমিক কাজ। চৌকিদারের বেতন প্রদানের জন্য গ্রামের জনগণের কাছ থেকে খাজনা নির্ধারণ ও আদায় করাও ছিল পঞ্চায়েতের কাজ।

ভাইসরয় লর্ড রিপন (১৮৮০-১৮৮৪) সরাসরি পশ্চিমা স্ব-শাসন পদ্ধতি চালুর চেষ্টা করেন। ১৮৮২ সালে তাঁর প্রশাসন স্ব-শাসিত স্থানীয় প্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বেঙ্গল কাউন্সিলে লোকাল সেলফ্ গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট ১৮৮৫ পাস হয়। গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য এতে তিন স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিধান করা হয়; যথা, প্রত্যেক জেলায় জেলা বোর্ড, মহকুমায় স্থানীয় বোর্ড এবং কয়েকটি গ্রামের জন্য ইউনিয়ন কমিটি।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জেলা বোর্ড ছিল প্রাণকেন্দ্র এবং এ বোর্ডকে ব্যাপক ক্ষমতা ও দায়িত্ব প্রদান করা হয়। স্থানীয় বোর্ড জেলা বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করত এবং জেলা বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাই শুধু স্থানীয় বোর্ড প্রয়োগ করত। স্থানীয় বোর্ড ইউনিয়ন কমিটির তত্ত্বাবধায়ক কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করে এবং গড়ে ১২ বর্গমাইল এলাকা ব্যাপী প্রশাসনের যেকোন দায়িত্ব ইউনিয়ন কমিটির হাতে অর্পণ করতে পারে। ইউনিয়ন কমিটি গঠিত হয় ইউনিয়নের অধিবাসীর মধ্য থেকে পাঁচ জনের কম বা নয় জনের বেশি নয় এমন সদস্য নিয়ে।

গ্রাম বাংলায় স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম চালু করার দ্বিতীয় বৃহত্তম পদক্ষেপ নেওয়া হয় ১৯১৯ সালের আইনে। এ আইন বলে ইউনিয়ন বোর্ড গঠন করা হয় এবং বিদ্যমান চৌকিদারি পঞ্চায়েত এবং ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ইউনিয়ন বোর্ড গঠিত হয় ছয় সদস্যের কম ও নয় সদস্যের বেশি নয় এমন সদস্য নিয়ে। এদের দুই-তৃতীয়াংশ ছিল নির্বাচিত, আর এক-তৃতীয়াংশ মনোনীত। মনোনীত সদস্যদের বাছাই করতেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচিত সদস্যদের বাছাই করা হতো ইউনিয়নের অধিবাসীদের মধ্য থেকে এমন লোক নিয়ে, যার বয়স কমপক্ষে ২১ বছর এবং যিনি অন্ততঃপক্ষে ১ টাকা ভূমিকর প্রদান করেছেন এবং নতুন বোর্ড দ্বারা ধার্যকৃত অন্তত ১ টাকা অন্য কর প্রদান করেছেন। নির্বাচন শেষে সদস্যরা নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান এবং একজনকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করতেন। চেয়ারম্যান ছিলেন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী। বোর্ডের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনাস্থা প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা যেত। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনোনীত সদস্যদের বাছাই করতেন। ইউনিয়ন বোর্ডের প্রাথমিক কাজ ছিল: (ক) চৌকিদার তত্ত্বাবধায়ন; (খ) স্যানিটেশন ও জনস্বাস্থ্য রক্ষণাবেক্ষণ; (গ) রাস্তাঘাট, সেতু এবং জলপথ রক্ষণাবেক্ষণ; (ঘ) স্কুল ও চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা এবং এগুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দেয়া; (ঙ) প্রয়োজন হলে জেলা বোর্ডের চাহিদা মোতাবেক তথ্য সরবরাহ করা। সার্কেল অফিসার ইউনিয়ন বোর্ড তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং তিনি জেলা বোর্ড ও থানা প্রশাসনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন।

পাকিস্তান আমল ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকারে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি টিকে ছিল। আইয়ুব খান একটি নতুন নিরীক্ষার প্রচেষ্টা চালান। তিনি এক ধরনের গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন, যে ব্যবস্থাকে বলা হয় মৌলিক গণতন্ত্র যার বৈশিষ্ট্য ছিল উপরে কর্তৃত্ববাদী সরকার এবং স্থানীয় স্তরে যোগ্য প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার।

১৯৫৯ সালে মৌলিক গণতন্ত্র আদেশ ঘোষণা করা হয়। গড়ে ১০৭০ জন নিয়ে একটি নির্বাচনী এলাকা গঠিত হয় এবং পূর্ব পাকিস্তানকে ৬০,০০০ নির্বাচনী এলাকায় বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকা ভোটদাতাদের মধ্য থেকে এমন একজনকে নির্বাচন করবেন যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিবেন। উভয় প্রদেশের নির্বাচনী এলাকার ভোটদাতারা নির্বাচকমন্ডলীর সদস্য বলে গণ্য হতেন। এই সদস্যরা দেশের প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচনে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতেন।

গ্রাম পর্যায়ে এ ব্যবস্থার চারটি স্তর ছিল। নিচ থেকে উপরের দিকে ছিল যথাক্রমে ইউনিয়ন কাউন্সিল, থানা কাউন্সিল, জেলা কাউন্সিল এবং বিভাগীয় কাউন্সিল। সাধারণত একটি থানা পরিষদ ১০ জন নির্বাচিত সদস্য নিয়ে গঠিত হতো। পরিষদ তাদের নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান এবং একজনকে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করত। সচরাচর চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের মেয়াদকাল ছিল পাঁচ বছর। চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অনাস্থা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আদালতে প্রশ্ন তোলা যেত না।

থানা পরিষদ গঠিত হতো গণপ্রতিনিধি ও সরকারি সদস্যদের সমন্বয়ে। থানা পরিষদে সরকারি সদস্যদের মোট সংখ্যা কোনমতেই প্রতিনিধি সদস্যদের মোট সংখ্যার অধিক হবে না। থানা পরিষদে তিন ধরনের সদস্য ছিল অর্থাৎ প্রতিনিধি সদস্য, সরকারি সদস্য এবং মনোনীত সদস্য। সাধারণত থানা পরিষদের মোট সদস্যের শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ছিল প্রতিনিধি সদস্য এবং অন্য পঞ্চাশ ভাগ ছিল সরকারি ও মনোনীত সদস্য। থানা পরিষদের মূল কাজ ছিল এর এখতিয়ারভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলির সমন্বয় সাধন করা। থানা পরিষদের মাসিক সভায় সকল ইউনিয়ন পরিষদ ও ইউনিয়ন কমিটির চেয়ারম্যানের উপস্থিতি আবশ্যক এবং তারা উক্ত সভায় নিজ নিজ সমস্যা আলোচনা করতেন। মহকুমা অফিসার এসব সভাকে প্রত্যন্ত এলাকার সমস্যা চিহ্নিত করার ক্ষেত্র বলে ধরে নিতেন।

মৌলিক গণতন্ত্র আদেশের আওতাধীন জেলা পরিষদ ছিল স্থানীয় সরকারের পরবর্তী স্তর। জেলা বোর্ড এবং জেলা পরিষদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। জেলা বোর্ড ছিল একটি নির্বাচিত সংস্থা এবং এর প্রধান একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং জেলা পর্যায়ে এটি আমলাতন্ত্র থেকে স্বাধীন। মৌলিক গণতন্ত্র আদেশের অধীনে জেলা পরিষদকে আমলাতন্ত্রের অধীনস্থ করা হয়। ডেপুটি কমিশনার ও কালেক্টর ছিলেন পদাধিকার বলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান; সমস্ত নির্বাহী ক্ষমতা ছিল তার হাতে।

প্রত্যেক বিভাগে বিভাগীয় কাউন্সিল ছিল। এটি ছিল গ্রামীণ স্থানীয় সংস্থার সর্বোচ্চ স্তর। বিভাগীয় কাউন্সিল গঠিত হতো সরকারি ও বেসরকারি সদস্যদের সমন্বয়ে। বিভাগীয় কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা এক কাউন্সিল থেকে অন্য কাউন্সিলে আলাদা ছিল এবং সরকার এটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। বেসরকারি সদস্যদের মোট সংখ্যা সরকারি সদস্যদের মোট সংখ্যার চেয়ে কম হতো না। বেসরকারি সদস্যদের বিভাগের মধ্যকার জেলা কাউন্সিলের সদস্যদের ভোটে নির্বাচন করা হতো। সরকারি সদস্যরা হলেন ডেপুটি কমিশনার (জেলা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে) এবং কয়েকজন বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা।

কর আরোপের কোনো ক্ষমতা বিভাগীয় কাউন্সিলের হাতে ছিল না। সরকার বিভাগীয় কাউন্সিলে তহবিল প্রদান করত এবং এ কাউন্সিল পর্যায়ক্রমে জেলা কাউন্সিল এবং অন্যান্য স্থানীয় সংস্থাকে ওই অর্থ অনুদানরূপে প্রদান করত। তাই এটি এমন একটি সংস্থা যার স্থানীয় স্ব-শাসনের বাস্তব কোনো কাজ ছিল না।

মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। আইয়ুব খানের পতনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ব্যবস্থাও বিলুপ্ত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭২ সালে গণদাবির মুখে প্রেসিডেন্টের ৭ নং আদেশের অধীনে মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি তীব্র চাপের মুখে পড়ে। শাসন পদ্ধতি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন ঘটে।

বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ১৯৭২ সালে জারিকৃত রাষ্ট্রপতির ৭নং আদেশ দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যমান সকল স্থানীয় সরকার কমিটি ভেঙে দেয়। এসব অবলুপ্ত কমিটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার কিছু কমিটি নিয়োগ করে। অধিকন্তু ইউনিয়ন কাউন্সিল ও জেলা কাউন্সিল যথাক্রমে ইউনিয়ন পঞ্চায়েত (পরবর্তী সময়ে ইউনিয়ন পরিষদ) ও জেলা বোর্ডে (পরবর্তী সময়ে জেলা পরিষদ) রূপান্তরিত হয়। অবশ্য থানা কাউন্সিল ও বিভাগীয় কাউন্সিলের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো কমিটি নিয়োগ করা হয় নি। ১৯৭২ সালের সংবিধানে স্থানীয় সংস্থার মৌলিক কাঠামো ও কার্যাবলি সম্পর্কিত বিধান সংযোজন করা হয়। বিশেষ করে সংবিধানের ৯ নং অনুচ্ছেদে বিধান রাখা হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রতিটি প্রশাসনিক ইউনিটে স্থানীয় সংস্থা গঠন করা যায়। ১৯৭৩ সালে নতুন করে জারিকৃত রাষ্ট্রপতির আদেশের (আদেশ নং ২২) অধীনে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির আদেশ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে যে, কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত একটি ইউনিয়ন পরিষদ তিনটি ওয়ার্ডে বিভক্ত হবে এবং প্রত্যেক ওয়ার্ডে তিনজন করে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হবে, অর্থাৎ একটি ইউনিয়নে মোট নয়জন সদস্য নির্বাচন করা হবে। তাছাড়া এ আদেশে ইউনিয়নের সকল ভোটারের সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচন করার বিধান রাখা হয়েছে। চেয়ারম্যানের মেয়াদকাল, যোগ্যতা, দায়িত্ব, ইউপি চেয়ারম্যান/ভাইস-চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের অপসারণ করার বিধানও এ আদেশে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনুরূপভাবে থানা ও জেলা উভয় পর্যায়ে পদাধিকার বলে যথাক্রমে মহকুমা প্রশাসক এবং ডেপুটি কমিশনারকে চেয়ারম্যান করার বিধান করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো হয় এবং স্থানীয় সংস্থা সম্পর্কিত বিধানাবলি অকেজো হয়ে পড়ে। অবশ্য নির্দিষ্ট কিছুসংখ্যক স্থানীয় সংস্থা গঠনের বিধান রাখা হয়, তবে এর অধিকাংশই নির্বাচনভিত্তিক নয়। শেখ মুজিবের হত্যা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের (আগস্ট ১৯৭৫) ফলে স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত উন্নয়ন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।

১৯৭৬ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমানের নতুন সরকার স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ জারি করে। এতে তিন ধরনের গ্রামীণ স্থানীয় সরকার গঠনের বিধান রাখা হয়, যথা, ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ। ইউনিয়ন পরিষদের গঠন ও কার্যাবলি বলতে গেলে ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ২২ নং অধ্যাদেশের অনুরূপই থেকে যায়। তবে ব্যতিক্রম শুধু ভাইস-চেয়ারম্যানের পদের বিলুপ্তি এবং দু’ধরনের অতিরিক্ত ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের সংযোজন, যেমন দুজন মনোনীত মহিলা সদস্য এবং দুজন মনোনীত কৃষক সদস্য। ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর নির্ধারিত ছিল। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের যোগ্যতা, তাদের অপসারণ প্রক্রিয়া এবং একইভাবে ইউপি কার্যক্রম কি হবে স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশে তার বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা ব্যাপক মাত্রায় আরোপিত হয়, যেমন নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ মহকুমা প্রশাসক ইউনিয়ন পরিষদের যেকোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। চল্লিশটি কার্যক্রম এই পরিষদের প্রধান কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং এদের মধ্যে প্রধান হলো জনকল্যাণ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, রাজস্ব সংগ্রহ, উন্নয়ন ও বিচার। কিন্তু এর রাজস্ব উৎস সরকারি অনুদান, ট্যাক্স ও ফি ইত্যাদি ১৯৫৯ সালের মৌলিক গণতন্ত্র আদেশের মতো প্রায় একই রকম রয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট থানার নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সরকার নির্ধারিত থানা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা সমন্বয়ে থানা পরিষদ গঠিত হয়। মহকুমা প্রশাসক এ পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সার্কেল অফিসার ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতেন। এ পরিষদের সার্বিক কার্যক্রমের ওপর মহকুমা প্রশাসক ব্যাপক নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। চেয়ারম্যান/ভাইস-চেয়ারম্যানের কার্যকালের মেয়াদ, যোগ্যতা, অপসারণ প্রক্রিয়া এবং ছুটি বিষয়ে ১৯৭৬ সালের স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশে কোনো উল্লেখ ছিল না। থানা পরিষদের প্রাথমিক কাজ ছিল এর এখতিয়ারের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয় সাধন এবং থানার অন্তর্গত ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গৃহীত কর্মসূচির ভিত্তিতে থানা উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করা।

জেলা পরিষদ গঠিত হতো নির্বাচিত সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা ও মহিলা সদস্য এবং তাদের মধ্য থেকে তাদের দ্বারা নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস-চেয়ারম্যান সমন্বয়ে। নির্বাচিত সদস্যরা পূর্ণ বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন। সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে মহিলা সদস্যরা সরকার কর্তৃক মনোনীত হতেন। জেলা পরিষদের মেয়াদকাল ছিল পাঁচ বছর।

১৯৮২ সালে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার প্রশাসনিক পুনর্গঠনের জন্য দশ সদস্যের কমিটি গঠন করে। সরকার কমিটির সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে বিশেষত থানা পর্যায়ে বিদ্যমান স্থানীয় সংস্থার পুনর্বিন্যাসের বড় ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। থানা পর্যায়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ১৯৮২ সালের ২৩ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার (থানা পরিষদ ও থানা প্রশাসন পুনর্বিন্যাস) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পুনর্গঠিত ব্যবস্থার অধীনে প্রত্যেক থানাকে প্রশাসনের মূল কেন্দ্ররূপে চিহ্নিত করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সব দায়দায়িত্ব থানা পরিষদের হাতে ন্যস্ত করা হয়। জাতীয় ও আঞ্চলিক গুরুত্বসম্পন্ন কার্যাবলি এবং প্রধান প্রধান উন্নয়ন কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রণমূলক দায়দায়িত্ব সরাসরি জাতীয় সরকারের হাতেই রয়ে যায়। ১৯৮২ সালের স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশ সংশোধন করে ১৯৮৩ সালে বিদ্যমান থানাসমূহকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। পরবর্তীকালে অন্যান্য গ্রামীণ স্থানীয় সংস্থা, যেমন ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, পাবর্ত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ এবং পল­ী পরিষদ পুনর্বিন্যাসের জন্য একটি অতিরিক্ত অধ্যাদেশ ও পাঁচটি আইন পাস করা হয়।

ইউনিয়ন পরিষদ ১৯৮৩ সালে একটি নতুন স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এ অধ্যাদেশের পরবর্তী সংশোধনীতে ১৯৭৬ সালের স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশের বিধানের অনেকটাই বহাল থাকে। ব্যতিক্রম শুধু সরকার কর্তৃক মনোনীত তিনজন মহিলা সদস্য রাখার বিধান। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং নয় জন সদস্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করার বিধান রাখা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান/সদস্যদের যোগ্যতা, তাদের কার্যকালের মেয়াদ ও অপসারণ, ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার বিধিবিধান ইত্যাদি অনেকটা ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশের অনুরূপ রয়ে যায়। অনুরূপভাবে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলিও একই ধরনের থাকে। ৩৬ রকমের বিশেষ ধরনের কাজের অন্তর্ভুক্ত রাখা হয় নাগরিক ও জনকল্যাণ, পুলিশ ও প্রতিরক্ষা, রাজস্ব ও সাধারণ প্রশাসন, উন্নয়ন ও বিচার বিষয়ক কার্যাবলি। ইউনিয়ন পরিষদকে এসব আনুষ্ঠানিক কার্য ছাড়াও সময়ে সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থার নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় জনগণের বিশেষ চাহিদা মেটাতে সুনির্দিষ্ট কিছু বাড়তি কাজ করতে হয়। কিছু কিছু নির্দিষ্ট খাতে কর আরোপের ক্ষমতা ইউনিয়ন পরিষদকে প্রদান করা হয়। তবে স্থানীয় উৎস থেকে কর সংগ্রহ ছিল সার্বিকভাবে অতীব নগণ্য। বাস্তবে ইউনিয়ন পরিষদের আয়ের সিংহভাগ আসত আর্থিক মঞ্জুরি হিসেবে সরকারের তরফ থেকে।

উপজেলা পরিষদ ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত সরকারের বিকেন্দ্রীকরণ নীতির ফলে উপজেলাসমূহ প্রশাসনের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। পুনর্বিন্যাসকৃত ব্যবস্থার অধীনে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু পুরনো জেলাগুলোর স্থলাভিষিক্ত হয় উপজেলা। উপজেলা পরিষদ গঠিত হয় পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান, প্রতিনিধিত্বমূলক সদস্য হিসেবে সংশ্লিষ্ট থানার অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন পরিষদসমূহের চেয়ারম্যান, সরকার মনোনীত তিনজন মহিলা সদস্য, ভোটাধিকার বিহীন সরকারি সদস্য হিসেবে থানার বিশেষ সরকারি কর্মকর্তা, উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান সমন্বয়ে। এছাড়াও স্থানীয় নাগরিকদের মধ্য থেকে উপজেলা পরিষদে একজন অতিরিক্ত সদস্য মনোনীত করার অবাধ ক্ষমতা সরকারের হাতে ছিল।

বস্ত্তত ১৯৮২ সালে প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের আওতায় সৃষ্ট প্রত্যেকটি উপজেলায় প্রথমবারের মতো স্থানীয় অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি ও সিভিল সার্ভিসের মধ্যে সংযোগ সাধিত হয়। নতুন ব্যবস্থার আওতায় উপজেলা পর্যায়ের কার্যাবলি দুভাগে বিভক্ত ছিল, যথা, সরকারের হাতে সংরক্ষিত চলমান কার্যাবলি এবং উপজেলা পরিষদের উপর ন্যস্ত কার্যাবলি। উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় বা আঞ্চলিক পরিসরের নিয়ন্ত্রণমূলক কাজ এবং প্রধান প্রধান উন্নয়ন কর্মকান্ড জাতীয় সরকারের হাতেই বহাল থাকে। এসব কাজের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা, দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় রাজস্ব প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। অন্যদিকে, উপজেলা পরিষদের উপর অর্পিত কাজের মধ্যে রয়েছে পরিকল্পনা, উন্নয়ন কর্মসূচির প্রবর্ধন ও বাস্তবায়ন, প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, বিবিধ গ্রামীণ অবকাঠামো কর্মসূচি এবং স্থানীয় পর্যায়ে সম্পাদনযোগ্য অন্যান্য কাজ। আশির দশকের শেষের দিকে স্থানীয় প্রকল্প উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রধান সরকারি কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তিনি প্রায় ২৫০ জন টেকনিক্যাল ও প্রশাসনিক জনবল পরিচালনা করতেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হলেন কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়োজিত জনবলের অংশ। অবশ্য তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক হলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদ গণপূর্ত ও উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা তৈরি এবং নির্বাহী অফিসার ও সরকারি কর্মচারীদের উন্নয়ন কর্মকান্ড দেখাশুনা করে। এরশাদ সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত উপজেলা ব্যবস্থা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি.এন.পি) সরকার ১৯৯১ সালে বিলুপ্ত করে। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৮ সালে উপজেলা আইন (১৯৯৮ সালের ২৪ নং আইন) প্রণয়ন করে। অতঃপর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার স্থানীয় সরকার সংস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার লক্ষ্যে সুপারিশের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। এ কমিটির সুপারিশ মতে তত্ত্ববধায়ক সরকার ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) অর্ডিন্যান্স জারী করে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এই অর্ডিন্যান্সকে স্বীকৃতি দিয়ে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে এবং ওই বছর ৩০ জুন থেকে আইনটি কার্যকর করা হয়।

জেলা পরিষদ  স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন ১৯৮৮ অনুসারে নিম্নবর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে একটি জেলা পরিষদ গঠিত হতো: সংশ্লিষ্ট জেলার সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পৌরসভা চেয়ারম্যান, মনোনীত সদস্য, মনোনীত মহিলা সদস্য এবং কতিপয় সরকারি কর্মকর্তা। মনোনীত সদস্য ও মহিলা সদস্যদের মোট সংখ্যা পরিষদের প্রতিনিধি সদস্যদের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি হবে না। সংশ্লিষ্ট জেলার অধিবাসীদের মধ্য থেকে মনোনীত সদস্য ও সদস্যা সরকার বাছাই করবে। ডেপুটি কমিশনার ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা পদাধিকার বলে সরকার কর্তৃক মনোনীত হবেন। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়া অন্যান্য সকল সদস্যের ভোট দানের ক্ষমতা আছে। সরকার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন এবং তিনি পরিষদের একজন সদস্য হিসেবেও গণ্য হবেন। পরিষদের মেয়াদ হবে গঠিত হবার পর থেকে তিন বছর। অবশ্য কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই সরকার চেয়ারম্যানকে তার পদ থেকে অপসারণ করতে পারবে।

১৯৮৮ সালের আইনে জেলা পরিষদকে আট ধরনের খাত থেকে কর, টোল এবং ফি গ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এসব খাত হলো স্থাবর সম্পত্তি হস্তাস্তর করের অংশ, বিজ্ঞাপন কর, পরিষদ কর্তৃক রক্ষণাবেক্ষণকৃত রাস্তা, সেতু এবং ফেরীর ওপর কর, জনকল্যাণমূলক অনুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত চাঁদা, পরিষদ পরিচালিত বা স্থাপিত স্কুল থেকে প্রাপ্ত ফি, বিশেষ সেবা প্রদানের ফি, কল্যাণমূলক কর্মকান্ডের সুবিধা থেকে প্রাপ্ত ফি এবং কর থেকে প্রাপ্ত আয় অথবা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত অন্য যেকোন উৎস থেকে সংগৃহীত কর।

জেলা পরিষদ দু’ধরনের সরকারি মঞ্জুরি লাভ করে থাকে, যেমন সাধারণ মঞ্জুরি এবং গ্রামীণ গণপূর্ত কর্মসূচি মঞ্জুরি। সাধারণ মঞ্জুরি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। জমিদারি ব্যবস্থা বিলুপ্তির সঙ্গে সম্পর্কিত রাজস্ব হ্রাসের ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিষদের উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য অতিরিক্ত মঞ্জুরি বরাদ্দ করা হয়। পরিষদের কর্মচারীদের জন্য দুর্যোগ ভাতা হিসেবে বিশেষ মঞ্জুরি দেয়া হয়। কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধিজনিত কারণে ব্যয়বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরি দেয়া এবং তাছাড়াও জেলা পরিষদ কর্তৃক বিশেষ কোনো প্রকল্প হাতে নিলে তার জন্য মঞ্জুরি দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, জেলা পরিষদ ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ করেছে।

পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ ১৯৮৯ সালে তিনটি পৃথক আইন দ্বারা তিনটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ (যথা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন) সৃষ্টি করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু উপজাতীয়দের স্বায়ত্তশাসন দানের লক্ষ্যে এসব আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯ অনুসারে রাঙ্গামাটি পাবর্ত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয় একজন চেয়ারম্যান, বিশ জন উপজাতীয় সদস্য (চাকমাদের থেকে দশ জন, মারমাদের থেকে চার জন, তঞ্চইঙ্গাদের থেকে দুজন, ত্রিপুরীদের থেকে একজন, লুসাইদের থেকে একজন, পাংখোদের থেকে একজন ও খিয়ানদের থেকে একজন) এবং সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলার ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত দশ জন অ-উপজাতীয় সদস্য নিয়ে। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮১-এর অধীনে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয় একজন চেয়ারম্যান, একুশ জন উপজাতীয় সদস্য (চাকমাদের থেকে নয় জন, ত্রিপুরীদের থেকে ছয়জন ও মারমাদের থেকে ছয়জন) এবং সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলার ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নয়জন অ-উপজাতীয় সদস্য নিয়ে।

বান্দরবন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন ১৯৮৯ অনুসারে বান্দরবন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয় একজন চেয়ারম্যান, উনিশ জন উপজাতীয় সদস্য (মারমাদের থেকে দশ জন, মুরংদের থেকে তিন জন, ত্রিপুরী ও উনচাইদের থেকে একজন, তঞ্চইঙ্গাদের থেকে একজন, বম, লুসাই ও পাংখোদের থেকে একজন, চাকমাদের থেকে একজন, খাসিয়াদের থেকে একজন এবং চাকদের থেকে একজন) এবং সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলার ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ১১ জন অ-উপজাতীয় সদস্য সমন্বয়ে।

তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজাতীয় লোকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন। এসব জেলার ডেপুটি কমিশনারগণ পরিষদের সচিব হিসেবে কাজ করবেন। উল্লেখযোগ্য যে, বিদ্যমান আইন অনুসারে রাঙ্গামাটির চাকমা প্রধান, খাগড়াছড়ির মং প্রধান এবং বান্দরবন পার্বত্য জেলার বোহমাং প্রধান নিজ নিজ পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের মেয়াদ গঠিত হবার পর থেকে তিন বছর।

তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদত্যাগ সম্পর্কিত আইন স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইন ১৯৮৮-এর আওতায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদত্যাগের বিধানের অনুরূপ; অর্থাৎ তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যান সরকার বরাবর লিখিত নোটিশের মাধ্যমে পদত্যাগ করতে পারেন এবং একইভাবে চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত নোটিশের মাধ্যমে সদস্যরা পদত্যাগ করতে পারেন।

১৯৮৯ সালের আইন অনুসারে পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা সদস্যকে তার পদ থেকে অপসারণ করা যাবে যদি তিনি (ক) কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া পর পর তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকেন, (খ) শারীরিক বা মানসিক কারণে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে অস্বীকার করেন বা অসমর্থ হন, (গ) ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি সম্পর্কিত অসদাচরণে দোষী হন এবং ইচ্ছাকৃত অপশাসন অথবা পরিষদের টাকা বা সম্পত্তির ক্ষতি বা অপপ্রয়োগের জন্য দায়ী হন। প্রকৃত প্রস্তাবে উল্লিখিত কারণসমূহের যেকোন একটির ভিত্তিতে চেয়ারম্যান বা সদস্যকে তার ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা যাবে না, যদি বিশেষ সভায় পরিষদের অন্ততঃপক্ষে তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের মাধ্যমে প্রস্তাব পাস করা না হয় এবং যদি তা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত না হয়। তদুপরি, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা সদস্যকে আত্মপক্ষ সমর্থনের পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে। কোনো ব্যক্তিকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হলে সেই পরিষদের বাকি মেয়াদের জন্য তিনি চেয়ারম্যান বা সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।

চেয়ারম্যান বা সদস্যের পদ শূন্য বলে গণ্য হবে যদি তিনি (ক) সরকারি গেজেটে তার নাম প্রকাশের ত্রিশ দিনের মধ্যে শপথ নিতে ব্যর্থ হন, অবশ্য যদি কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে সরকার কর্তৃক শপথ গ্রহণের মেয়াদ বাড়ানো না হয়, (খ) চেয়ারম্যান বা সদস্য হবার অযোগ্য ঘোষিত হন, (গ) পদত্যাগ করেন, (ঘ) ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন।

পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ এবং জেলা পরিষদের প্রায়োগিক দায়দায়িত্ব ভিন্ন হলেও তাদের আয়ের উৎস বলতে গেলে একই। এসব হলো স্থাবর সম্পত্তির করের অংশ, বিজ্ঞাপনের ওপর কর, পরিষদের রক্ষণাবেক্ষণাধীন রাস্তা, সেতু এবং ফেরীর ওপর টোল, জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম সম্পাদনের কর, পরিষদ পরিচালিত বা স্থাপিত স্কুল থেকে প্রাপ্ত ফি, বিশেষ সেবা প্রদানের ফি, কল্যাণমূলক স্থাপনার সুবিধা থেকে প্রাপ্ত ফি, এবং সরকার অনুমোদিত অন্য কোনো উৎস বা কর থেকে প্রাপ্ত আয়। এসব উৎসের আয় ছাড়াও মঞ্জুরি হিসেবে পরিষদের কর্মচারীদের দুর্যোগ ভাতা প্রদানের মাধ্যমে সরকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে এবং কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত বিশেষ প্রকল্পে মঞ্জুরি বরাদ্দ প্রদান করে।

বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার যথাযথ ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিকভাবে প্রণীত বিকেন্দ্রীকৃত কাঠামোর পরিবর্তন না করেই উপজেলা ব্যবস্থা ও কাঠামো ভেঙে দেয়। তাঁর শাসনামলের পাঁচ বছরে এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় কিছু করা হয় নি। ১৯৮৩ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে নতুন ইউনিয়ন পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়; কিন্তু অন্যান্য উচ্চতর ক্ষেত্রে স্থানীয় সংস্থা গঠনের লক্ষ্যে শেষ পর্যন্ত ১৯৯২ সালে সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়ার সরকারের অবসানের পূর্ব পর্যন্ত বিষয়টি সংসদে ঝুলন্ত ছিল। অতএব তাঁর সরকারের পূর্ণ কার্যকালে স্থানীয় সরকার সংস্কার অবহেলিত অবস্থায় থেকে যায়।

শেখ হাসিনার সরকার স্থানীয় গণতান্ত্রিক নীতির ওপর ভিত্তিশীল টেকসই একটি স্থানীয় সংস্থার সুপারিশ প্রণয়নের জন্য স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করে। সে অনুযায়ী কমিশন চার স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার গঠনের সুপারিশ করে, যেমন গ্রাম পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ। ইতোমধ্যে ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের তিনটি ওয়ার্ডে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারী প্রতিনিধিত্বের সুযোগ বৃদ্ধির অনন্য ও নজীরবিহীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সরাসরি নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ মহিলা সদস্যদের সুনির্দিষ্ট ভূমিকা এখনও সুস্পষ্ট নয়। সপ্তম জাতীয় সংসদ উপজেলা পরিষদ গঠন অনুমোদন করেছে।

মিউনিসিপাল প্রশাসনের বিকাশ  লর্ড রিপনের আমলে ১৮৮৪ সালে বেঙ্গল মিউনিসিপাল অ্যাক্ট পাস হয়। এ আইনে এতদ্বিষয়ে পূর্ববর্তী বিভিন্ন আইনের সমন্বয় করা হয়। বাংলা, উড়িষ্যা এবং আসামে এ আইন প্রযোজ্য ছিল। এ আইনে ইউনিয়ন ও থানার সঙ্গে মিউনিসিপালিটির সাদৃশ্য বিদূরিত হয় এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পৌরসভার মধ্যকার পার্থক্যের বিলোপ ঘটানো হয়। গড়ে প্রতি বর্গমাইলে ১০০০ জনসংখ্যার ঘনত্ব বিশিষ্ট কমপক্ষে ৩০০০ লোক অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে নতুন পৌরসভা সৃষ্টি এবং যেকোন পৌরসভার সীমানা পরিবর্তন করার ক্ষমতা সরকারের ছিল। নতুন কোনো পৌরসভা সৃষ্টি করতে হলে সংশ্লিষ্ট পৌর এলাকার অন্তত তিন-চতুর্থাংশ বয়স্ক লোকের কৃষি ছাড়া অন্য পেশায় নিযুক্ত থাকা আবশ্যক। কমিশনারদের সংখ্যা নয় থেকে ত্রিশ জন হতে পারে। এদের দুই-তৃতীয়াংশ নির্বাচিত এবং এক-তৃতীয়াংশ সরকার কর্তৃক মনোনীত হবে।

কিছু পৌরসভার ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক চেয়ারম্যান নিযুক্ত হতেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে কমিশনারগণ নিজেদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচন করতেন। একই পদ্ধতিতে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যানদের ভাতা প্রদানের বিধান ছিল। সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিয়ে পৌরসভা বিভিন্ন ধরনের কর, ফি, টোল এবং পৌরকর আরোপ করতে পারত।

ঋণ পরিশোধ, পৌর স্থাপনার ব্যয় নির্বাহ, অডিট ব্যয় এবং পৌরসভার পক্ষে সরকার কর্তৃক পরিচালিত স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় নির্বাহের জন্য উক্ত তহবিল ব্যবহার করা হতো। তহবিলের বাকি অংশ ব্যয় হতো বিবিধ ধরনের পৌর কর্মকান্ডে, যেমন রাস্তা, সেতু, পুকুর, ঘাট, নলকূপ, খাল ও নালা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাস্তার ধারে নলকূপ স্থাপন, পৌর কার্যালয় ও অন্যান্য স্থাপনার নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্র, সংরক্ষণ, পার্ক ও খেলার মাঠ, টিকা দানের ব্যবস্থা, পশু হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্র, গ্রন্থাগার, দমকল বাহিনী ইত্যাদি।

১৮৯৪ সালের ৪ নং আইনে স্যানিটারি ও পানি সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্যানিটারি বোর্ড গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। ১৮৯৬ সালের ১১ নং আইনে কল্যাণমূলক কিছু কিছু নতুন সেবাখাতে তহবিল ব্যয় করার ক্ষেত্রে পৌর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

১৯২১ সালের মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার অনুসারে নগর ও গ্রামীণ উভয় স্থানীয় সরকারের সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব নির্বাচিত প্রাদেশিক মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। এই উদার নীতি প্রয়োগের ফলে কোনো কোনো শহরে যথার্থ উন্নয়ন সাধিত হয়েছিল। ১৯৩২ সালের বেঙ্গল মিউনিসিপাল অ্যাক্ট অনুসারে অপ্রয়োজনীয় বিধান বাতিল করা হয় এবং স্থানীয় সরকারের অধিকতর অগ্রগতি সাধিত হয়। মিউনিসিপাল বোর্ডকে অধিক কার্যভার দেয়া হয়। নতুন পৌরসভা ঘোষণা করার বিধান, বিদ্যমান পৌরসভার সীমানা পরিবর্তন, পৌর কমিশনারদের সংখ্যা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া ১৮৮৪ সালের আইন মোতাবেক বহাল রাখা হয়; ব্যতিক্রম শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামের কমিশনারদের চার-পঞ্চমাংশ সদস্য নির্বাচনের বিধান। শিল্প কারখানার প্রতিনিধিত্ব অনুমোদনে সরকার মনোনীত সদস্যদের সংখ্যা বাড়াতে পারবে। নির্বাচিত আসনের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য কিছু আসন সংরক্ষিত রাখা হয়। গোপন ও যৌথ ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়। কমিশনারদের মধ্য থেকে তাদের ভোটে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয়। কর আরোপ ও করের হার নির্ধারণ এবং পৌর তহবিল ব্যবহারে পৌর কমিশনারদের ক্ষমতা বিস্তৃত ও সুস্পষ্ট করা হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তা ও সরকার কর্তৃক পরিদর্শন, নিয়ন্ত্রণ এবং তত্ত্বাবধান সম্পর্কিত বিধান সুস্পষ্ট ও পর্যাপ্ত করা হয়। এই অঞ্চলের প্রণীত প্রথম পৌর আইনসমূহের অন্যতম হলো ১৯৩২ সালের বেঙ্গল মিউনিসিপাল অ্যাক্ট।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় পূর্ববঙ্গে ৪৫টি পৌরসভা ছিল এবং সিলেট জেলায় ৪টি পৌরসভা ও একটি পৌর কমিটি ছিল। ১৯২৩ সালের আসাম মিউনিসিপাল অ্যাক্ট অনুসারে এসব পৌরসভা পরিচালিত হতো। ১৯৫৭ সালের যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা প্রদেশে স্থানীয় সংস্থা সম্পর্কিত বিবিধ আইনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে। সংশোধনীসমূহ নিম্নরূপ: (ক) সকল স্থানীয় সংস্থায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসন ও মনোনয়ন ব্যবস্থার বিলোপ সাধন; (খ) পুরোপুরি নির্বাচিত সদস্যের সমন্বয়ে এসব সংস্থা গঠন; (গ) প্রাপ্ত বয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সদস্য নির্বাচন। ২১ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সের প্রত্যেক নাগরিককে ভোটার হিসেবে গণ্য করা; (ঘ) গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতীক বা মার্কা প্রবর্তন; (ঙ) পৌর আইন অনুযায়ী কিছু সুনির্দিষ্ট অপরাধের বিচারের জন্য পৌর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে এক বা একাধিক বেতনভুক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ। অবশ্য এই আইনের ভিত্তিতে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার পূর্বেই ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের শাসনকর্তৃত্ব দখল করে।

পৌর কমিটি  পৌরসভাসমূহকে গ্রামীণ এলাকায় তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীভুক্ত করার জন্য ১৯৬০ সালে একটি নতুন পৌর প্রশাসন অধ্যাদেশ জারি করা হয়। নতুন অধ্যাদেশে ১৫,০০০ বা এর কম জনসংখ্যা সম্পন্ন ৫৬টি পৌরসভার মধ্যে ২৮টি পৌর এলাকাকে শহর হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় এবং মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থা অনুসারে প্রত্যেক শহরে একটি করে টাউন কমিটি গঠন করা হয়। অবশিষ্ট ২৮টি পৌরসভায় পৌর আইনের অধীনে এক ঘোষণা দ্বারা প্রত্যেকটিতে একটি করে পৌর কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৬২ সালের শেষের দিকে একটি নতুন পৌরসভা সৃষ্টি হয়; ফলে পৌর কমিটির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৯। পৌর কমিটি গঠিত হয় নির্বাচিত সদস্য নিয়ে, অর্থাৎ পৌর এলাকার ইউনিয়ন কমিটির চেয়ারম্যান এবং সমসংখ্যক নিয়োগপ্রাপ্ত (বেসরকারি) ও সরকারি চেয়ারম্যানসহ সরকারি সদস্য সমন্বয়ে। সরকার অনির্বাচিত সদস্যদের নিয়োগ প্রদান করে এবং সরকারের ইচ্ছামাফিক তারা এ পদে বহাল থাকেন। নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা কোনো ক্রমেই ত্রিশের অধিক হবে না। সরকারি সদস্য ও নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্যের মোট সংখ্যা নির্বাচিত সদস্যের মোট সংখ্যার চেয়ে বেশি হবে না। জনগণের প্রতি সেবা প্রদানের যোগ্যতা বিবেচনা করে বেসরকারি সদস্যদের বাছাই করা হয়। সাধারণভাবে মোট সদস্য সংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগ ছিল সরকারি সদস্য, আর শতকরা ৭০ ভাগ ছিল নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্য। নির্বাচিত সদস্যদের মধ্য থেকে একজন ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হতো। ভাইস-চেয়ারম্যানের কার্যকালের মেয়াদ ছিল পাঁচ বছর। মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা বিধি মোতাবেক অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ভাইস-চেয়ারম্যানকে অপসারণ করা যেত। ২৯টি পৌর কমিটির মধ্যে শুধু ৫টিতে সার্বক্ষণিক চেয়ারম্যান ছিলেন এবং অন্যান্য কমিটি খন্ডকালীন চেয়ারম্যান দ্বারা পরিচালিত হতো। এরা ছিলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার মহকুমা অফিসার অথবা অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার। পৌরসভাগুলোকে প্রথম ও দ্বিতীয় এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছিল। শুধু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনা পৌরসভা ছিল প্রথম শ্রেণীর এবং অন্যান্য পৌরসভা ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর। পরবর্তীকালে ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান লোকাল কাউন্সিল সার্ভিস রুলস্-এর আওতায় পৌরসভাগুলোকে প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী এবং তৃতীয় শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। ত্রিশ লক্ষ টাকা ও তদূর্ধ্ব আয় সম্পন্ন পৌরসভা ছিল প্রথম শ্রেণীর, পাঁচ লক্ষ থেকে ত্রিশ লক্ষ টাকা আয় সম্পন্ন পৌরসভা ছিল দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং পাঁচ লক্ষ টাকার কম আয় সম্পন্ন পৌরসভা ছিল তৃতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। আয় ও জনসংখ্যা উভয়ের ভিত্তিতে পৌর কমিটির আকার ভিন্ন ভিন্ন হতো। জনসংখ্যা ছিল ২০ হাজার থেকে ৫ লক্ষের মধ্যে। তদনুসারে সদস্য সংখ্যা হতো ৬ জন থেকে ৬০ জন এবং আয় ছিল ১ লক্ষ থেকে ২ কোটি টাকা।

টাউন কমিটি  মৌলিক গণতন্ত্র আদেশে টাউন বা শহর কমিটি গঠিত হয়। শহর কমিটির অর্থসংক্রান্ত এবং প্রায়োগিক কার্যাদি মিউনিসিপাল প্রশাসনিক অধ্যাদেশের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুসারে পরিচালিত হয়। শহর কমিটিগুলো ছিল ছোট আকারের মিউনিসিপালিটি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এ কমিটির সদস্যরা নির্বাচিত হন। তাদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান এবং ভাইস-চেয়ারম্যান উভয়েই পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন। তারা মিউনিসিপাল কমিটিসমূহের অনুরূপ দায়িত্ব পালন করেন এবং ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।

ইউনিয়ন কমিটি  শহর এলাকার মিউনিসিপালিটি কয়েকটি ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে গঠিত। ইউনিয়ন কাউন্সিলের এরাই হচ্ছে শহুরে প্রতিনিধি। ইউনিয়ন কমিটিতে কয়েকজন নির্বাচিত সদস্য থাকেন। এদের সংখ্যা বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ইউনিয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ভোগ করতেন। তিনি পদাধিকার বলে মিউনিসিপাল কমিটির সদস্য ছিলেন। মিউনিসিপাল কমিটি কখনও কখনও ইউনিয়ন কমিটির উপর এর কার্যক্রমের দায়িত্ব অর্পণ করত। ইউনিয়ন কমিটির যথাযথ ভূমিকা স্পষ্ট নয়। সময় সময় মিউনিসিপালিটি থেকে প্রদেয় মঞ্জুরি ব্যতীত ইউনিয়ন কমিটির আয়ের কোনো উৎস ছিল না। তহবিলের অভাবে ইউনিয়ন কমিটি কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম বা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে নি।

সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধি অনুসারে প্রতি নির্বাচনী ইউনিটে একটি করে ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হতো। এই কমিটিতে থাকতেন একজন চেয়ারম্যান এবং ৫ থেকে ১০ জন প্রতিনিধি সদস্য। এই নির্বাচক ইউনিটগুলোই ইউনিয়ন কমিটি গঠন করত। শহর এলাকার ওয়ার্ড কমিটিগুলো ড্রেনেজ কার্যক্রম সুচারুরূপে কার্যকর রাখা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বয়স্ক শিক্ষা কর্মসূচির ক্লাসের বন্দোবস্ত করা, এলাকার নাগরিক দায়িত্ব সম্পাদন করা এবং পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে সেবা প্রদান ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করত। এছাড়াও তাদের উপর অর্পিত হয় পার্ক ও খেলার মাঠ তৈরি, বনায়ন এবং বায়তুল মাল তহবিল সংগ্রহের দায়িত্ব। কালেক্টর কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে ওয়ার্ড কমিটি সরকারি কর্মচারী কর্মকর্তাদের নাগরিক প্রতিরক্ষামূলক কার্যাদি পালনে সহায়তা করত।

পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশন পৌরসভা/সিটি কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান/মেয়র এবং কমিশনারগণ ওয়ার্ডের ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন। প্রত্যেক পৌরসভার তিনজন মহিলা কমিশনার সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতেন।

পৌর কমিশন  ১৯৮৯ সালের ২৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে পৌর কমিশন গঠন করা হয়। পন্ডিত, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা, খ্যাতিমান নাগরিক এবং জনগণের প্রতিনিধিদের কমিশনের সদস্য করা হয়। কমিশন ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করে। কমিশনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল (ক) সিটি (মিউিনিসিপাল) করপোরেশন/পৌরসভা সমূহ কি কারণে শহরবাসীকে পর্যাপ্ত সেবা প্রদান করতে পারছে না তা শনাক্ত করা এবং (খ) দেশের সমাজ-আর্থনীতিক অবস্থার নিরিখে শহুরে জনগণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে স্থানীয় সংস্থাগুলো কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তার সুপারিশ করা। কমিশনের প্রধান প্রধান সুপারিশ ছিল কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কাঠামো ও সমন্বয়, অর্থায়ন পরিকল্পনা, গৃহায়ণ ও ভূমিনীতি এবং পৌর সেবাকর্ম সম্পর্কিত। এযাবৎ এ রিপোর্টের কোনো কার্যকারিতা দেখা যায় নি। ১৯৯১ সালে নতুনভাবে একটি স্থানীয় সরকার কমিশন গঠিত হয়। এ কমিশন শহর এলাকার চেয়ে পল্লী এলাকার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রতি বেশি নজর দেয়। অবশ্য ১৯৯৩ সালে শহরের স্থানীয় সরকার কাঠামোয় কিছু পরিবর্তন আনা হয়।

এই কমিশন স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের সুপারিশ করে। এই প্রস্তাবিত কমিশন একজন চেয়ারম্যান, কয়েকজন সদস্য এবং নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারী সমন্বয়ে একটি সংবিধিবদ্ধ কমিটি হিসেবে গঠিত হবে। সরকার কর্তৃক এই কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন। চেয়ারম্যান মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করবেন। চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। এই স্থানীয় সরকার কমিশনের প্রধান কার্যক্রম হবে:  স্থানীয় সরকারের জন্য আইন, বিধি ও নিদের্শনা প্রণয়ন; নিয়োগ পদ্ধতি, কর্মচারীদের কর্তব্য ও দায়িত্ব নির্ধারণ এবং জনবলসহ স্থানীয় সরকারসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারী কাঠামো নির্ধারণ; স্থানীয় সরকারের প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ এবং স্থানীয় সরকারের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রণয়ন; বার্ষিক মনিটরিং বা পরিধারণ কার্য পরিচালনা, স্থানীয় সরকারগুলোর মধ্যকার সমস্যা ও বিরোধ মীমাংসা করা; অনিয়ম, অপকর্ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কিত তদন্তকার্য পরিচালনা এবং যথোপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ;  বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।  [কামাল সিদ্দিকী]