রইসউদ্দিন, ওস্তাদ মুন্শি

রইসউদ্দিন, ওস্তাদ মুন্শি  (১৯০১-১৯৭৩)  সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীতগ্রন্থ প্রণেতা, উচ্চাঙ্গ কণ্ঠশিল্পী। ১৩০৮ বঙ্গাব্দের (১৯০১) ২৪ পৌষ মাগুরা জেলার নাকোল তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্শি আববাসউদ্দিন। পারিবারিক প্রতিকূল পরিবেশে মুন্শি রইসউদ্দিন সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন।

শৈশব থেকেই রইসউদ্দিনের মধ্যে সঙ্গীত-প্রতিভার বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। তিনি ছিলেন সুকণ্ঠের অধিকারী। ফুফাতো ভাই শামসুল হকের নিকট তাঁর প্রথম সঙ্গীতশিক্ষা শুরু হয়। ম্যাট্রিক পাস করার পর ১৭ বছর বয়সে তিনি চাকরির উদ্দেশ্যে  কলকাতা যান। সেখানে কিছুদিন চাকরি করেন এবং প্রসিদ্ধ সঙ্গীতজ্ঞ রাসবিহারী মল্লিকের নিকট ১২ বছর ধ্রুপদ ও খেয়ালে শিক্ষালাভ করেন। তারপর প্রখ্যাত সঙ্গীতবিদ গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী পরিচালিত সঙ্গীতকলা ভবনে ভর্তি হয়ে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে সার্টিফিকেট লাভ করেন। তিনি লক্ষ্ণৌর সঙ্গীতবিশারদ শরজিৎ কাঞ্জিলালের নিকটও কিছুকাল  সঙ্গীত শেখেন।

১৯৩৮ সালে রইসউদ্দিন প্রথম কলকাতা বেতারে সঙ্গীত পরিবেশনের সুযোগ লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি ঢাকা বেতারে শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন এবং নারায়ণগঞ্জে স্থায়িভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁরই উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জে ‘প্রবেশিকা সঙ্গীত বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি তার অধ্যক্ষপদে বৃত হন। ১৯৫৫ সাল থেকে রইসউদ্দিন ঢাকার  বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর সহঅধ্যক্ষ এবং ১৯৬৪ সালে অধ্যক্ষের পদ অলঙ্কৃত করেন। এ অঞ্চলে সঙ্গীতের প্রসারকল্পে তিনি বিভিন্ন স্থানে সঙ্গীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রসার, সঙ্গীত সম্পর্কে জনগণের উৎসাহ সৃষ্টি এবং নতুন নতুন ছাত্র তৈরি করা ছিল রইসউদ্দিনের জীবনের লক্ষ্য। বিভাগোত্তর পূর্ব বাংলায় সঙ্গীত বিষয় শিক্ষাপাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হলে তিনি সঙ্গীত বিষয়ে অনেক পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি তিনি বহু নতুন রাগরাগিণীও সৃষ্টি করেন। এভাবে তিনি সঙ্গীতের প্রসার ও উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।

সঙ্গীত বিষয়ে রইসউদ্দিনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: সরল সঙ্গীত সার-সংগ্রহ, ছোটদের সারেগামা, অভিনব শতরাগ, সঙ্গীত পরিচয়, রাগ লহরী, গীত লহরী ইত্যাদি। তাঁর গবেষণামূলক সঙ্গীতগ্রন্থ অভিনব শতরাগ রচনার জন্য তিনি ‘আদমজী পুরস্কার’ লাভ করেন। সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ‘প্রাইড অব পারফরমেন্স’ এবং ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘একুশে পদকে’ (মরণোত্তর) ভূষিত হন।  [মোবারক হোসেন খান]